রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ০২:৪০:১৩

মোবাইলের অসতর্ক ব্যবহার বেড়েছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

মোবাইলের অসতর্ক ব্যবহার বেড়েছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

নিউজ ডেস্ক: বাম হাত দিয়ে কানে মোবাইল ধরে কথা বলছিলেন, আর ডান হাতে আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। এভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওবায়দুল্লাহ (২৫) হাঁটছিলেন রেললাইনের উপর দিয়ে। ঠিক তখনই কমলাপুরগামী ট্রেনে কাটা পড়ে তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ঘটনাটি গত মঙ্গলবার দুপুরের। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় বহু মানুষের চোখের সামনেই ঘটে যায় এমন ঘটনা। ট্রেন আসতে দেখে আশপাশের লোকজন চিত্কার করে ওবায়দুল্লাহকে সাবধান করছিলেন। কিন্তু কানে মোবাইল থাকায় তিনি কিছু শুনতে পাননি। ওবায়দুল্লাহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। দেশের আনাচে কানাচে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শুধু পথচারীই নয়। চালকের অসতর্ক মোবাইল ফোন ব্যবহারে যানবাহনেও  দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। মৃত্যু হচ্ছে যাত্রী বা পথচারীর। কয়েক বছরে সড়কপথে ও রেললাইনে অসংখ্য মানুষের এভাবে মৃত্যু হয়েছে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মালিবাগে ট্রেনে কাটা পড়ে হেমায়েত হোসেন নামে (১৮) এক যুবক নিহত হন। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় হেমায়েত ট্রেনে কাটা পড়েন। মাদারীপুর সদর উপজেলার সুজাউদ্দিন খানের ছেলে হেমায়েত ঢাকায় রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। মোবাইল ফোনের কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটে গত বছরে ১৪ জুলাই মাদারীপুরে। সেখানে ঘটকচর এলাকায় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সুগন্ধা পরিবহনের একটি বাসের চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তার অসতর্ক মুহূর্তে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এ ঘটনায় ৬ জন নিহত হন। ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে যান। যাত্রীবাহী বাসটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

ওয়াকেবহাল সূত্রগুলো বলছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গাড়ি চালকরা মোবাইল ও হেড ফোন ব্যবহারের সতর্কতা মানছেন না। রাজধানীসহ সারা দেশে বাস-ট্রাক-মাইক্রোবাস-অটোরিকশার চালকদের দ্রুত গতিতে চলার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার দৃশ্য প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় চালক সাধারণত অসতর্ক অবস্থায় থাকেন। একইভাবে মোটরসাইকেল চালকদের মোবাইল ফোনে আলাপরত অবস্থায় কাত হয়ে বা মাথা ঝুঁকিয়ে অমনোযোগী হয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলাচল ও রাস্তা পারাপার এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এমনকি হেডফোন, ব্লু-টুথ কানে দিয়ে গান শুনতে শুনতে অনেককে ব্যস্ত রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখা যায়। মোটরযান আইন সংশোধন, সতর্কতা জারির পরও যাত্রী, পথচারী ও চালকের মোবাইল ফোন কিংবা হেডফোন ব্যবহারের প্রবণতা কমছে না। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা রোধ করতে ২০০৭ সালে মোটরযান আইনের সংশোধন করা হয়। ওই বছরের ১২ জুলাই মোটরযান আইনের ১১৫(বি) ধারার সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এমনকি আইনে এয়ার ফোন ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে ৫০০ টাকা জরিমানা ও জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, চলন্ত গাড়িতে চালকদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার রোধে মাত্র ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। জরিমানার বিধান ৫০০ টাকার বেশি করে এসব চালকের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আইন ভঙ্গ করলে যদি শাস্তি না হয়, তাহলে একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনা এড়াতে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক-এ ক্যাসেসার্ট ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় গত বছরের অক্টোবরে মোবাইল ফোন লেন চালু করা হয়েছে। অবশ্য, এর আগে চীনের চংকিং শহরে এমন মোবাইল ফোন লেন চালুর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তারও আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে তৈরি হয়েছিল এ রকম মোবাইল ফোন লেন। বাংলাদেশে সাইকেল আরোহীদের জন্য আলাদা সাইকেল লেন চালুর দাবি দীর্ঘদিনেও পূরণ হয়নি।-বিডি প্রতিদিন

২২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে