রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ০৩:২৯:৩৮

স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি

স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ : বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বের ভার কাদের হাতে দেওয়া হবে, এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। সংগঠনটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে এ সংকট নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিএনপির নির্বাহী কমিটি ঘোষণার আগেই স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর এতে করে যাদের স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ দেওয়া সম্ভব না হবে, তাদের বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে স্থলাভিষিক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে। বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ছাত্রদলের প্রাক্তন সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও মীর সরফত আলী সপুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালের অক্টোবরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে একটি কমিটির মেয়াদ দুই বছর থাকলেও স্বেচ্ছাসেবক দলের কোনো গঠনতন্ত্র না থাকায় কমিটির মেয়াদও নির্দিষ্ট হয়নি। প্রায় ৭ বছর সংগঠনটির নতুন কমিটি হয়নি।

দলীয় সূত্র বলছে, কাউন্সিলের পর বিএনপির পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের আওতায় আনছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ধারাবাহিকভাবে সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনবেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে শিগগির স্বেচ্ছাসেবক দলেও নতুনদের দায়িত্ব দেবেন বিএনপি নেত্রী। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাদের পছন্দ একাধিক হওয়ায় এ নিয়ে এখন নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে দলটির হাইকমান্ডকে।

সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল যিনি একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবও। তিনি চাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পদে আসুক ছাত্রদলের প্রাক্তন সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল এবং আর সাধারণ সম্পাদক পদে তার পছন্দ শফিউল বারী বাবুকে। বাবু বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রদলের হেলাল-বাবু কমিটির সময়ে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়েছিল বলে নেতা-কর্মীদের মত। সেজন্য হাবিব উন নবী খান সোহেলও স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব দিতে চান তাদের হাতে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং স্বেচ্ছাসেবদক দলের প্রাক্তন সভাপতি রুহুল কবির রিজভীর পছন্দ অন্য দুইজন। সভাপতি পদে তার পছন্দ স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার পছন্দ স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী রেজাউল রহমান রিপন। যদিও রিপন অনেকদিন ধরেই রাজনীতিতে সক্রিয় নন।

বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার দুই ধরনের পছন্দ হওয়ায় এ নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। কারণ দুজনই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খুবই আস্থাভাজন। তবে যাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদে জায়গা দেওয়া সম্ভব না হবে, তাদের বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে নেওয়া হবে বলে একপ্রকার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা গেছে,  মীর সরফত আলী সপু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আবার তাকে ওই সংগঠনের কোনো পদে নাও রাখা হতে পারে বলে প্রচার রয়েছে। তাকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে নিয়ে আসা হতে পারে।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আনতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন। অন্যদিকে সপুর ভাই মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদের জোরালো দাবিদার। দুই ভাই দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব পাচ্ছেন না। সুতরাং একজনকে ছাড় দিতেই হচ্ছে। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন খালেদা জিয়া। সেক্ষেত্রে নেওয়াজকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দেওয়া হলে সপুকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভালো একটি জায়গা দেওয়া হতে পারে। আর ‘দক্ষ সংগঠক’ হিসেবে শফিউল বারী বাবুকে নেতা-কর্মীদের যেমন পছন্দ, তেমনি হাইকমান্ডেরও তার প্রতি আলাদা দৃষ্টি রয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বড় একটি প্রভাবশালী অংশও হেলাল-বাবু কমিটি চায়।

এদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দৌঁড়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কমিটির নেতা তালুকদার অমিত হাসান হাফিজ, নজরুল ইসলাম, রফিক হাওয়লাদার, লিটন মাহমুদ, আওলাদ হোসেন উজ্জল প্রমুখ। তবে এদের মধ্যে হাবিব উন নবী খান সোহেলের কাছে আলোচিত নাম হাফিজ। এর কারণ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে যখন ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হল, তখন প্রথম দিকে সোহেলকে মেনে নিতে পারছিলেন না আব্বাস। এমনকি তাকে নিয়ে কাজ করতেও অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। যদিও পরে খালেদা জিয়ার সরাসরি নির্দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল। ওই সময়ে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ে সোহেলের জন্য বরাদ্দ হওয়া কক্ষে তালা মারা, নেমপ্লেট খুলে ফেলা এবং তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে মহানগর কার্যালয়ে আব্বাস সমর্থকদের সঙ্গে সোহেল সমর্থকদের সংঘর্ষও হয়। এতে সোহেল সমর্থকদের নেতৃত্ব দেন ওই হাফিজ। সাহসিকতা আর নেতার প্রতি ভালোবাসা তাকে আলাদা স্থান করে দিয়েছে বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদগুলোতে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয় করে পদ বন্টন করা হবে। এতে দক্ষভাবে সংগঠনটি চলবে এবং  ‘চেইন অব কমান্ড’ও ঠিক থাকবে বলে মনে করে বিএনপির হাইকমান্ড। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি হওয়ার খবরে প্রত্যাশিত পদ পেতে এরই মধ্যে বিভিন্ন নেতার বাসায় তদবির করা শুরু করে দিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তবে ভবিষ্যত সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা মাথায় রেখেই ত্যাগী, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের দিয়ে কমিটি করার কথা বলছেন নেতা-কর্মীরা।-রাইজিং

২২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে