রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ১১:৪০:২১

৩ কারণে বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে নিহতের সংখ্যা

৩ কারণে বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে নিহতের সংখ্যা

মঈনুল হক চৌধুরী : মাঝারি মানের ঘূর্ণিঝড়েও প্রাণহানি বাড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোয়ানু পূর্ণিমায় ভরা জোয়ারে আঘাত হানায় কোমেন ও মহাসেনের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে বলেও তাদের অভিমত।

বঙ্গোপসাগরে বুধবার সৃষ্ট মৌসুমের এই প্রথম ঘূর্ণিঝড় শনিবার দুপুরে আঘাত হনে। এতে রাত ১২টা পর্যন্ত উপকূলীয় সাত জেলায় অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এর পেছনে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ- এর নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান।

তিনি বলেন, “উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্যের দুর্বলতা কাটাতে পারলে সামান্য ঝড়ে এতো প্রাণহানি হতো না।” প্রাণহানি বাড়ার পেছনে মোটাদাগে ‘তিনটি কারণ’ উল্লেখ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, “সরকারের প্রস্তুতি ভালো ছিল, আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ভালো ছিল, জনগণও সচেতন ছিল। তবে দুর্যোগ আর দারিদ্র্য এই হতাহতের প্রধান কারণ। উপকূলীয় এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভালো থাকলে তার বাড়ি উড়ে যেত না ঝড়ে; বাড়ির উপরে গাছ পড়লেও তা ভাঙত না। তাছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়িবাঁধ উঁচু করা হলে ক্ষয়ক্ষতি কমে আসতো।”

সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ এর আঘাতে ৪ জন ও ২০১৩ সালের মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ এর আঘাতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলছেন, “লোকজন অপেক্ষাকৃত বেশি মারা গেছে- এটা বিভিন্ন কারণে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বেড়িবাঁধগুলো উঁচু করতে হবে। তবে পূর্ণিমা ও জোয়ারের মধ্যে আঘাত না হলে ক্ষতি আরও কম হতো।”

অবশ্য ঝড় মোকাবেলায় সরকার সফল হয়েছে বলেও তার দাবি। রিয়াজ আহমেদ বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যাওয়া এবং পূর্ণিমার সময় উপকূলে আঘাত হানায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। যেসব লোক মারা গেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখেছি- সবগুলোই বাড়ি ধসে, পাহাড় ধসে, দেওয়াল চাপায়, গাছ ভেঙে মারা গেছে।”

২৪ জনের প্রাণহানির মধ্যে এর প্রায় অর্ধেক জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ভেসে ও ডুবে মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উপকূলীয় এলাকার সাড়ে ২১ লাখ মানুষজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি ছিল বলে ঝড়ের একদিন আগেই জানিয়েছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। তবে বাস্তবে তা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন আতিক রহমান।

তিনি বলেন, “সরকার দাবি করলেও এলেও তারা মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ- এর এই নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগোচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে দেশের ৫ কোটি নাগরিক দরিদ্র, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৩৪ শতাংশ। এদের উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও দরকার।”

তাদের রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরামর্শ দেন আতিক রহমান। -বিডিনিউজ
২২ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে