মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬, ০৬:৪৪:০৫

‘বিচারকের ভুলে জেলে ১৩ বছর, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল’

‘বিচারকের ভুলে জেলে ১৩ বছর, ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল’

ঢাকা : বিচারকের ভুলে অকারণে ১৩ বছর কারাভোগ করেছেন জবেদ আলী বিশ্বাস।  তাকে ২০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে দায়ের করা এক রিটের শুনানির পর বিচারপতি মঈনুল আসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম নিজেই শুনানি করেন।  রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

পরে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম বলেন, একটি মামলায় ২০০১ সালে নিম্ন আদালত জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।  জবেদ আলীর করা জেল আপিলে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট তাকে খালাস দেন।  

তিনি বলেন, সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ খা্লাসের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের না পাঠানোয় ১৩ বছরেও তার মুক্তি মেলেনি।  চলতি বছরের ২ মার্চ তিনি মুক্তি পান।  

এটি সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫, ৩৬ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন- এসব যুক্তিতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিটটি করা হলে আদালত রুল জারি করেছেন।

এতে স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ (৩ নম্বর আদালত) কারা মহাপরিদর্শক, জেল সুপার (সাতক্ষীরা) সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন একটি সংগঠন গত ১৯ মে এ রিট আবেদনটি দায়ের করে।

বিনা কারণে জেল খাটা জবেদ আলী বিশ্বাস সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে।  তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তার দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকত।

১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন।  ওইদিন লিলি মারা যায়।  এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন।

পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।  এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো দু’বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন।  ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন।  খালাসের রায়ের কপি সাতক্ষীরার আদালতে পাঠায় হাইকোর্ট।
 
বিচারক সেটি কারাগারে না পাঠিয়ে রেকর্ডরুমে সংরক্ষণের আদেশ দেন।  তাতে করে কারাগারে আদেশের কপি না পৌঁছানোয় দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে অকারণে কারাভোগ করছেন জাবেদ আলী।

বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পায়।  প্রকাশিত প্রতিবেদনের কাটিং আদালতের রিট আবেদনের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়।  পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে সংগঠনটি রিট করে।  রিট আবেদনটির শুনানি করে আদালত এ আদেশ দেন।
২৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে