বুধবার, ০৬ জুলাই, ২০১৬, ১১:০৭:২০

এক বছর আগে স্ত্রীকে নিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমান তাহমিদ

এক বছর আগে স্ত্রীকে নিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমান তাহমিদ

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের ঘটনায় সাইট ইন্টেলেজেন্সের ওয়েবসাইটে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের যে বাংলা বক্তব্য-সম্বলিত ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে কথা বলা তিন যুবকের একজনের নাম তাহমিদ রহমান শাফি।

তাহমিদকে যারা চিনতেন, তার সাথে যারা কাজ করতেন ভিডিও দেখে তাকে সনাক্ত করছেন তারা, তাহমিদ ঢাকার যে এলাকায় থাকতো সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে বিবিসি এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছে।

ঢাকার বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় একটি বনেদি এলাকার তাহমিদের বাবার বাড়ি।  বাড়িটি যে সড়কে সেখানকার সব বাড়িই ডিজাইনার বাংলো ধরনের।

বোঝাই যায়, অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী মানুষজনের বসবাস এখানে। বিদেশের পাড়ি জমানোর আগে তাহমিদও এখানেই থাকতেন।

দুপুরের পর তিনতলা ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, ফটক বন্ধ।  অনেক ডাকাডাকির পর দ্বাররক্ষী আসেন।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাচ্ছিলেন না।  স্পষ্ট ভীতি তার চোখেমুখে।

ফটকের ছোট একটি জানালা খুলে এক শব্দ কিংবা দুই শব্দে তিনি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।  ভিডিও থেকে নেয়া তাহমিদের চেহারা-সম্বলিত একটি স্ক্রিনশটের প্রিন্টআউট দেখানো হলে দ্বাররক্ষী তাকে চেনেন না বলে জানান।

এরপর তিনি ভেতরে ঢুকে যান।  বহুক্ষণ অপেক্ষা করলেও তিনি আর ফিরে আসেননি।

জানা গেছে, বাড়িটিতে তাহমিদের মা এবং অপর দুই ভাই তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন।

তাহমিদের বাবা মারা গেছেন বছর দুয়েক আগে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা ছিলেন।  তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটে।

গলির একজন চায়ের দোকানদার ছবিতে তাহমিদকে দেখে চিনতে পারেন এবং বলেন, তার দোকানে সে দুয়েকবার চা খেয়েছে।

‘‌মাঝে মাঝে তারে দেখতাম যাইতো, একটা ব্যাগ ঘাড়ে নিয়া। কিন্তু সাত আট মাসের বেশি সময় ধরে আর তাকে দেখা যায়নি’।

তাহমিদদের বাড়িটির সামনের আরেকটি বাংলো ধরনের বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে কথা হয়।

নাম প্রকাশ না করবার শর্তে এক বাসিন্দা জানান, তিনি শুনেছেন, ওই বাড়ির এক ছেলে গ্রামীন ফোনে চাকরি করতো, যে বছরখানেক আগে বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে তুরস্কে গেছে।

অর্থাৎ তাহমিদ নিখোঁজ ছিল না।  সে বলে কয়েই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল এবং এমন একটি দেশে গিয়েছিল যে দেশটি সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত।

ওই প্রতিবেশী জানান, তাহমিদ ধার্মিক ছিলেন, পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন।

গ্রামীন ফোনের বেশ কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, বছর তিন-চার আগে সে ওই প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন্স বিভাগে চাকরি করতো।

তাহমিদের এক সাবেক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাহমিদ তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাহমিদকে দেখার পর তিনি অত্যন্ত অবাক হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এনটিভির ক্লোজ আপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ নামক রিয়েলিটি শোতে সে প্রায় প্রথম হয়ে যাচ্ছিল।

‘তাহমিদ ছিল শান্তিনিকেতনে পড়ে আসা।  সে ছিল মেধাবী শিল্পী। সে গান লিখতো এবং সুরারোপ করতো।’

খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, এই রিয়েলিটি শোয়ের প্রথম মৌসুম, যে মৌসুমটি বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল, সেটিতে সেরা পনেরো জনের তালিকায় ছিলেন তাহমিদ।

ওই রিয়েলিটি শোয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন এমন একজন বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত সঙ্গীত শিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তাহমিদকে কোন অনুষ্ঠানে গান করতে দেখছেন না তিনি। এমনকি কোন অ্যালবামের জন্যও কাজ করছিল না সে।

তাহমিদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, সে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে।

সে ইংরেজিতে চৌকষ। আইএসের ভিডিওতে তাকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

তাহমিদের শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি চর্চ্চা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে তাকে যারা চেনেন বা তার সম্পর্কে জানেন তারা সবাই বিস্মিত হচ্ছেন।  প্রশ্ন করছেন, এমন একটি ছেলে কী করে আইএসে যোগ দেয়? সূত্র : বিবিসি
৬ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে