সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০৮:১৭:১৮

তারেকের সাজা : মনোযোগ হারাচ্ছে বিএনপি

তারেকের সাজা : মনোযোগ হারাচ্ছে বিএনপি

সেলিম জাহিদ : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাক আমলে নেয়নি সরকার। এ অবস্থায় পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দলের বাইরে থাকা অন্য দলগুলো নিয়ে বিএনপির নেতারা যে বৃহত্তর কনভেনশন করার কথা বলেছিলেন, সেটিও আলোচনার পর্যায়ে রয়ে গেছে। এরই মধ্যে তারেক রহমানের সাজার রায় হওয়ায় দলের মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়ার পর এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা ও তৎপরতা শুরু হয়। আরও একাধিক অবস্থান থেকেও ঐক্যের দাবি ওঠায় রাজনীতিতে এর একধরনের পরিবেশও তৈরি হচ্ছিল।

কিন্তু গত বৃহস্পতিবার মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় হাইকোর্টে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় বিএনপির নীতিনির্ধারকদের থমকে দিয়েছে। এতে ঐক্যের লক্ষ্যে তৎপর দলের নেতাদের মনোযোগ বিনষ্ট হয়েছে। এর জন্য তারা সরকারকে দায়ী করছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার দলের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, তারেক রহমানের রায় প্রমাণ করে, সরকার বিএনপির বুকের মধ্যে হাত দিয়েছে।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বলেন, তারা মনে করেন, সরকার বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বা কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয়। উপরন্তু বিএনপিকে নানাভাবে চাপে এবং ভয়ভীতির মধ্যে রাখাই সরকারের কৌশল। এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হলেও আদতে সরকার নিজেই চায় না বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ুক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বিএনপিকে জামায়াত থেকে সরে আসার কথা বলেছেন বুদ্ধিজীবীরা। এর পরিবেশও তৈরি হচ্ছিল। এই সময়ে তারেক রহমানের মামলার রায় খুব কি জরুরি ছিল? এর মধ্য দিয়ে সরকার বোঝাল, তারা সমঝোতায় আগ্রহী নয়, তারা সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক ধারা বজায় রাখতে চায়।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের সাড়া না পেলেও জাতীয় প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অন্য ঘরানার গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি বৃহত্তর কনভেনশন করার যে কথা বিএনপির নেতারা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কনভেনশনের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, এটা তো প্রক্রিয়াধীন। ম্যাডাম অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। অনানুষ্ঠানিকভাবেও আলোচনা চলছে।

অবশ্য বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দলের নীতি-কৌশলের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘শুনেছি কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এর একটি রেজাল্ট দেখা যেতে পারে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন দলকে নিয়ে ঢাকায় কনভেনশন করা হবে, নাকি সমাবেশের মাধ্যমে ঐক্য হবে, তা এখনো স্থির হয়নি। এ নিয়ে নানা ধরনের মত আসছে। এ ছাড়া জামায়াতকে এ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে কনভেনশন করার মতামতও আসছে। বিএনপির চেয়ারপারসন আরও আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে এ প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও এক-দেড় মাস সময় লেগে যেতে পারে।

তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, সময় যা-ই লাগুক, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বিএনপি একটা কিছু করতে চায়। তাঁরা মনে করছেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার পর খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাক সাধারণ মানুষের মধ্যে ভালো আবেদন তৈরি করেছে। এটি সরকারের ওপর কিছুটা হলেও চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ঐক্যের লক্ষ্যে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির নেতাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পাওয়ার পর সরকারের অবস্থান দুর্বল হয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াতকে ছাড়তে হলে বিএনপি তা করতে প্রস্তুত। নানামুখী আলোচনায় সে পরিস্থিতি সৃষ্টিও হয়ে যেত। কিন্তু সরকার চায় না সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক।

বিএনপির আরেক শুভাকাঙ্ক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সরকার চাইলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে, কিন্তু করেনি। এটা তাদের কৌশলও হতে পারে। বিএনপি-জামায়াতকে একাত্ম করে নতুন নতুন ঘটনায় অভিযোগ দিতে পারবে। একাত্মতা কেটে গেলে দোষটা চাপাবে কার ওপর? -প্রথম আলো

২৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে