সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০৮:২৬:৪৯

কারাবন্দী জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করে হামলার দিনক্ষণ ঠিক হয়!

কারাবন্দী জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করে হামলার দিনক্ষণ ঠিক হয়!

নিউজ ডেস্ক : গুলশানে হামলার আগে জঙ্গিরা কাশিমপুর কারাগারে আটক কয়েকজন জেএমবি নেতার সঙ্গে দেখা করে গুলশানে হামলার দিনক্ষণ ঠিক করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। গুলশানে হামলার পর বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার করা জেএমবির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা এ তথ্য পেয়েছেন।

তবে কাশিমপুরের কারা কর্তৃপক্ষ আটক জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে বাইরের কারও গোপন আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে।

এদিকে গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের সূত্র পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা হলি আর্টিজানে হামলার বিষয়টি উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। কারা করেছে, কীভাবে করেছে, সেই সূত্র আমরা পেয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সবাইকে গ্রেপ্তার করা সময়ের ব্যাপার।’

গুলশানে হামলা মামলায় তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএমবির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারী দলটি তাঁরা চিনতেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেন, হামলার আগে জঙ্গিরা কারাবন্দী জঙ্গিদের সঙ্গে দেখা করেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, প্রাপ্ত তথ্য ও তদন্তে ওই মূল পরিকল্পনাকারী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। হামলাকারীর সহযোগী দলটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তদন্তকারীরা এখন মূল পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারীদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন।

গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে কাশিমপুর কারাগারের (হাইসিকিউরিটি) জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবি নেতাদের সঙ্গে দেখা করে হামলার বিষয়ে কেউ কথা বলেছে তা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে গেলে সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত থাকেন। এতে কারাবন্দী জেএমবি নেতাদের আপত্তিকর কোনো বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ: হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলায় জড়িত জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহসান, তার ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে আলম চৌধুরীর রিমান্ডের সপ্তম দিন অতিবাহিত হয়েছে গতকাল। এর আগে শেওড়াপাড়া থেকে গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষক নুরুল ইসলাম রিমান্ডের চতুর্থ দিনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আগেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

হলি আর্টিজানে হামলায় নিহত শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলকে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মিলন হোসাইনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা জেলার পুলিশ। গতকাল তার রিমান্ডের সাত দিন পার হয়েছে।
এদিকে হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারের পর হাসনাত করিম ও কানাডায় অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান গতকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন বলে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে।

পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ হস্তান্তর হয়নি: ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে থাকা পাঁচ সন্দেহভাজন জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ ২২ দিনেও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান গতকাল বলেন, লাশ নেওয়ার জন্য স্বজনেরা এখনো আবেদন করেননি। আবেদন পাওয়ার পর লাশ হস্তান্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহত জঙ্গিরা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সন্দেহভাজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।

১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালান জঙ্গিরা। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের আগে-পরে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ৩২ জনকে। সূত্র : প্রথম আলো

২৫ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে