মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৪:৪৩:০২

মাশরাফিকে ‘স্যরি’ বলতে হবে কেন?

মাশরাফিকে ‘স্যরি’ বলতে হবে কেন?

স্পোর্টস ডেস্ক: বড় অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসলেন স্কাই স্পোর্টসের ব্রিটিশ সাংবাদিক টিম আব্রাহাম। মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জস বাটলারের আউটের পর যে এত কিছু হলো, বাংলাদেশের দুই খেলোয়াড় তার জন্য শাস্তিও পেলেন, এসবের জন্য এখন কি মাশরাফি বিন মুর্তজা অনুতপ্ত? তিনি কি বাটলারের কাছে ‘স্যরি’ বলবেন?

মাশরাফি উত্তরটা দিলেন অসাধারণ। বিতর্কিত ওই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান তো ব্যাখ্যা করলেনই, নিজের ব্যক্তিত্বটাও তুলে ধরলেন দারুণভাবে, ‘আমরা ভুল কিছু করিনি, তাহলে স্যরি কেন বলব? স্যরি বলার কিছু নেই। আমরা শুধু একটা আউটের পর সেটা উদ্‌যাপন করেছি। ওখানে যা-ই হয়েছে, সেসব দেখার জন্য ম্যাচ রেফারি ছিলেন। আবারও বলছি, আমরা শুধু একটা আউটই উদ্‌যাপন করেছি।’

ইংল্যান্ড দলের গায়ে জ্বলুনিটা এখনো থাকার কথা। একে তো ম্যাচ হেরেছে, তার ওপর বাটলারের আউটের পর তাসকিন-মাহমুদউল্লাহ-মাশরাফিদের উদ্‌যাপনের ধরনও তাদের পছন্দ হয়নি। খেলা শেষে হাত মিলিয়ে সৌহার্দ্য বিনিময়ের সময় তো ঘটল চরম অপ্রীতিকর ঘটনা! ড্রেসিংরুমের সামনে হাত মেলানোর সময় তামিম-বাটলারের লেগে গেল। মাঝখান থেকে এসে দুজনের বাগ্‌যুদ্ধের ঝাঁজ বাড়িয়ে দিলেন বেন স্টোকস। তামিমকে যে তিনি মৃদু একটা ধাক্কা দিয়েছেন, সেটাও গোপন থাকেনি ভিডিও ফুটেজের সৌজন্যে। এ নিয়ে এক পশলা হট্টগোল হয়েছিল সেখানেও।

ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্তে পরে বাংলাদেশই ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বেশি। বাটলার বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দিকে তেড়ে গেলেও তাঁর শাস্তি শুধুই ‘তিরস্কার’। অন্যদিকে বাংলাদেশের দুই খেলোয়াড় মাশরাফি ও সাব্বিরকে করা হলো ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ জরিমানা। তাঁদের উদ্‌যাপন নাকি বাটলারকে আগ্রাসী হতে প্ররোচিত করেছে। আইসিসির নতুন নিয়মে অবশ্য এই তিন খেলোয়াড়ের নামের পাশেই যোগ হয়েছে একটি করে ডিমেরিট পয়েন্ট।

খেলোয়াড়েরা ম্যাচ রেফারির শাস্তি মেনে নেওয়ার পর ঘটনা ওখানেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত এবং আপাতদৃষ্টিতে তা–ই নাকি মনে হচ্ছে। মাশরাফি জানিয়েছেন, টিম হোটেলে দুই দলের খেলোয়াড়দের দেখা-সাক্ষাতের সময় বা কাল বিকেলে যে একই ফ্লাইটে দুই দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এল, তখনো মাঠের ঘটনার কোনো রেশ দেখা যায়নি কারও মধ্যে।

হতে পারে কাল চট্টগ্রামের তৃতীয় ওয়ানডেতে মাঠের খেলা দিয়েই জবাবটা দিতে চায় ইংলিশরা। পেশাদার দল হিসেবে বাংলাদেশও নিশ্চয়ই সে রকম কিছুর জন্য প্রস্তুত। তেতে থাকা ইংল্যান্ডকে ঠেকিয়ে দেওয়ার রণকৌশল নিয়েই তারা মাঠে নামবে।

সমস্যা হলো ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ঘটনাটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। অন্যদেরও ভুলতে দিচ্ছে না। ইংল্যান্ডের পত্রপত্রিকা দেখলেই তা পরিষ্কার। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে আজ তাদেরই একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে টিম আব্রাহাম বাংলাদেশ অধিনায়ককে একের পর এক ঝাঁজালো প্রশ্ন করে গেলেন। কিন্তু মাশরাফিকে কাবু করতে পারলেন না।

মাশরাফি উল্টো মনে করিয়ে দিলেন, ব্যাটসম্যান আউট হলে বোলার-ফিল্ডারদের উদ্‌যাপন করাটা ক্রিকেটে নিয়মিত ব্যাপার, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক এবং উইকেট পেলে সব দলই এটা করে। ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী ম্যাচ রেফারির হয়তো মনে হয়েছে, আমাদের উদ্‌যাপন শৃঙ্খলা ভেঙেছে। তবে আমরা সে রকম কিছু বোঝাতে চাইনি।’ মাশরাফি এরপর চলে যেতে চাইলেন পরের ম্যাচে, ‘যা হওয়ার হয়েছে। এখন আমরা আগামীকালের ম্যাচে ভালো খেলতে চাই।’

কিন্তু মাশরাফি চাইলেই তো আর হবে না! ইংল্যান্ডকে হারানোর পর, তাদের ব্যাটসম্যানদের আউট করার পর উদ্‌যাপন করাটা যে ইংলিশদের চোখে ‘অন্যায়’, সেটা তো বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে! সে জন্যই মাশরাফি বাটলারের কাছে ‘স্যরি’ বলবেন কি না জানতে চাওয়া। ম্যাচ রেফারির শাস্তির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ মেনে নিচ্ছে কি না, প্রশ্ন করে নতুন করে আগুন উসকে দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু আব্রাহামের এই চেষ্টাটিও ব্যর্থ মাশরাফির কৌশলী উত্তরে, ‘আমাদের আর তো কোনো উপায় নেই। মেনে নিতেই হবে।’

মাশরাফির উত্তরের ভেতর লুকিয়ে থাকা বার্তাটা তিনি ধরতে পেরেছেন কি না কে জানে। তবে ওই সাংবাদিক এমন একটা ভাব করলেন, তিনি নিজে খুব চিন্তিত পরের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কী অবস্থা হবে, সেটা নিয়ে। ইংল্যান্ডকে রাগিয়ে মাশরাফিরা নিশ্চয়ই খুব টেনশনে আছেন। ব্রিটিশ সাংবাদিকের এই নিজস্ব অনুমানকেও নাকচ করে দিলেন মাশরাফি, ‘আমার মনে হয়, স্বাভাবিক একটা ম্যাচই হবে। আমরা প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিচ্ছি। সব সময় যেভাবে শুরু করি, এই ম্যাচটাও সেভাবেই শুরু করব। ভালো একটা ম্যাচ আশা করছি। এর বাইরে আর কিছু আশা করছি না।’

তাতে টিম আব্রাহামের আশাতেও গুড়েবালি। মাশরাফিকে কোনোভাবেই লাইনচ্যুত করতে না পেরে তাঁর শেষ প্রশ্ন, ‘কালকের ম্যাচে কি নিজেদের ফেবারিট ভাবছেন?’

আগের ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছে, তার আগের ম্যাচেও জেগেছিল জয়ের সম্ভাবনা। সঙ্গে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড আগের চারটি ম্যাচও হিসেবে আনলে দুই দলের সর্বশেষ ছয় ম্যাচের চারটিতেই জয়ী বাংলাদেশ। মাশরাফি বলতেই পারতেন, ‘হ্যাঁ, আমরাই তো ফেবারিট!’ কিন্তু তিনি যে জয়ী দলের অধিনায়ক! মাশরাফির মুখে তাই ইংল্যান্ড দলের ভদ্রতাসূচক প্রশংসা, ‘সিরিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলাম, ইংল্যান্ড ভালো দল এবং সেটা গত দুটি ম্যাচেই দেখা গেছে।’

আব্রাহাম এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জস বাটলার আর মাশরাফির মধ্যে দৃশ্যমান পার্থক্য ধরতে পেরেছে কি না কে জানে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা যদি সেদিন কিছু করেও থাকেন, ইংলিশ অধিনায়ক সেটার জবাব দিতে গেছেন তেড়ে গিয়ে। অথচ আজ সংবাদ সম্মেলনে এতগুলো কঠিন প্রশ্ন শুনেও বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন হাসিমুখে।

অধিনায়ককে কখনো কখনো যে এমন স্থৈর্যও দেখাতে হয়। এরপরও মাশরাফিকেই ‘স্যরি’ বলতে হবে! কেন?-প্রথম আলো
১১ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে