বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:২১:১৪

শীর্ষ ১০ অধিনায়কের তালিকা ও তাদের নানা দিক

শীর্ষ ১০ অধিনায়কের তালিকা ও তাদের নানা দিক

স্পোর্টস ডেস্ক : লিডারশিপ! সবক্ষেত্রেই নেতূত্ব বা লিডারশিপ এই শব্দটা গুরুত্ব বহন করে এসেছে। শুধুমাত্র সমাজে নয়। ক্রীড়াক্ষেত্রেও এই নেতূত্ব দেওয়াকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিচার করি। ক্রিকেট মাঠেও যে অধিনায়ক নেতূত্বের একটা মূর্ত প্রতীক। যাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বাকিরা। একজন অধিনায়ক যে কোন পরিস্থিতিতে দলকে সামনে থেকে নেতূত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

স্যার ডন ব্রাডম্যানের বিখ্যাত উক্তিটাও সেই সমস্ত অধিনায়কের জন্য– ”যারা সিদ্ধান্ত নেয় এটা জেনেই যে এর ফল কি হতে পারে এবং সেই সিদ্ধান্তের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারে, শুধুমাত্র এটা ভেবে নয় তাঁর সিদ্ধান্তটা ঠিক বা ভুল বলে, তার এই সিদ্ধান্তটা সাফল্য আনতে পেরেছে কিনা সেটা ভেবে।”

তবে অধিনায়কত্বের আসল মন্ত্রটা শুধুমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাট হাতে তাদের অসামান্য দক্ষতা বিশ্ব ক্রিকেটে একটা উদাহরণ স্থাপন করেছে। এবার দেখে নেওয়া যাক সে সব প্রভাবশালী শীর্ষ ১০ একদিনের আন্তর্জাতিক অধিনায়কের মোট রান|

১০) এবি ডি’ভিলিয়ার্সঃ ৪২১৯ রান (২০১৬-র নভেম্বর পর্যন্ত)
৮৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রোটিয়াসদের হয়ে নেতূত্ব দেওয়া ডি’ভিলিয়ার্স অভাবনীয় ৬৫ ব্যাটিং গড় নিয়ে ৪২১৯ রান করেছেন। অধিনায়ক থাকাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৩টি সেঞ্চুরি এবং ২২টি অর্ধশতরান হাঁকান।

৯) সনৎ জয়সূরিয়া: ৪৩৭৭ রান। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ প্রায় ছ’বছর জাতীয় দলের জার্সিতে ১১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতূত্ব দিয়েছেন জয়সূরিয়া। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তী বাঁ-হাতি ওপেনার বরাবরই ব্যাট হাতে বিপক্ষের ওপর ত্রাস সূষ্টি করেছেন। তাঁর নেতূত্বে ২০০৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। তার ঠিক আগের বছর দলকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তুলেছিলেন। যদিও ফাইনাল ভেস্তে যাওয়ায় ট্রফি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়েছিল তাঁকে। এদিকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্টেলিয়ার কাছে হারের পর আশ্চর্যভাবে তাঁর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। ব্যাট হাতে ১০টি শতরান ও ২৫টি অর্ধশতরান সমেত মোট ৪৩৭৭ রান করেছেন এক দিনের আর্ন্তজাতিক এ অধিনায়ক।

৮) অ্যালন বর্ডারঃ ৪৪৩৯ রান।
অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বাদ এনে দেওয়া অ্যালন বর্ডার ১৭৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতূত্ব দিয়েছেন। অজি ক্রিকেটের সঙ্কটের সময়ে দলকে নেতূত্ব দিয়ে বহু উল্লেখযোগ্য সাফল্য় ছিনিয়ে এনেছেন। ১৯৮৭ রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার বিশ্বকাপ এনে দেন বর্ডার। অধিনায়ক হিসেবে বর্ডার ৩২.১৬ ব্যাটিং গড় নিয়ে ৪৪৩৯ রান করেছেন। রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি ও ২৭টি হাফসেঞ্চুরি।

৭) সৌরভ গাঙ্গুলিঃ ৫১০৪ রান। ভারতীয় ক্রিকেটে অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হন তিনি। সৌরভ গাঙ্গুলির ক্যাপ্টেন্সিতে বহু সাফল্য অর্জন করেছে ভারত। তাঁরই নেতূত্বে ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই মাটিতে ঐতিহাসিক ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ছিনিয়ে আনে ভারত। অধিনায়ক থাকাকালীন বহু স্মূতি রয়েছে প্রিন্স অব ক্যালকাটার। ২০০৩ সালে তাঁর নেতূত্বে ভারত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে কাপ হাতছাড়া করতে হয়েছিল তাঁকে। ১৪৭টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করা সৌরভের ব্যাট হাতে রয়েছে ৫১০৪। রয়েছে ৩০টি হাফসেঢ্চুরি ও ১১টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি।

৬) মহম্মদ আজহারউদ্দিনঃ ৫২৩৯ রান
সেরা অধিনায়কদের তালিকায় রয়েছে আর এক ভারত অধিনায়কের নাম। জাতীয় দলের হয়ে ১৭৪টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতূত্ব দেওয়া মহম্মদ আজহারউদ্দিন। অধিনায়ক আজহারের ব্যাটিং গড় খুব একটা খারাপ ছিল না। ৩৯ ব্যাটিং গড়ে মোট ৫২৩৯ রান করেছেন প্রাক্তন এই ভারত অধিনায়ক। রয়েছে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩৭টি অর্ধশতরান।

৫) গ্রেম স্মিথঃ ৫৪১৬ রান
মাত্র ২২ বছর বয়সে জাতীয় দলের দায়িত্ব গিয়ে পড়েছিল গ্রেম স্মিথের ওপর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক। দলকে বরাবরই সামনে থেকে নেতূত্ব দিয়ে এসেছেন স্মিথ। দীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ারে বহু নজির গড়েছেন তিনি। একমাত্র টেস্ট অধিনায়ক যিনি টেস্টে কোনও দলকে ১০০টি ম্যাচে নেতূত্ব দিয়েছেন। ১৫০টি ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা স্মিথের ব্যাটিং গড় ৩৮.৯৬। তাঁর মোট রান ৫৪১৬। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৮টি সেঞ্চুরি ও ৩৭টি হাফসেঞ্চুরি।  

৪) অর্জুন রনতুঙ্গাঃ ৫৬০৮ রান
শ্রীলঙ্কাকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেওয়া অর্জুন রনতুঙ্গা ১৯৩ ওয়ানডে ম্যাচে দলকে নেতূত্ব দিয়েছে। অধিনায়ক থাকাকালীন ৩৭.৬৩ ব্যাটিং গড়ে রনতুঙ্গা ৫৬০৮ রান করেছেন। রয়েছে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩৭টি হাফসেঞ্চুরি। ১৯৯৬ সালে অধিনায়ক রনতুঙ্গার হাত ধরে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা।

৩) স্টিফেন ফ্লেমিং: ৬২৯৫ রান
গ্রেম স্মিথের মতো ২৩ বছর বয়সে জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের ট্যাগ নিয়ে দলকে নেতূত্ব দেন ফ্লেমিং। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসে তর্কাতিতভাবে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ফ্লেমিংই। ২০০৭ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারার পরই অবসর ঘোষণা করেন প্রাক্তন কিউয়ি ক্রিকেটার। অধিনায়ক হিসেবে ২১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতূত্ব দিয়েছেন ফ্লেমিং। ব্যাট হাতে করেছেন ৬২৯৫ রান। ব্যাটিং গড় ৩২.৭৮।

২) মহেন্দ্র সিং ধোনিঃ ৬৬৩৩ রান (২০১৬-র নভেম্বর পর্যন্ত)
এই তালিকায় বর্তমান অধিনায়ক হিসেবে ডি’ভিলিয়ার্সের পর ধোনিই দ্বিতীয় যিনি কোন জাতীয় দলের হয়ে এখনও অধিনায়কত্ব করছেন। ক্যাপ্টেন কুল হিসেবে পরিচিত মাহি ১৯৪টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশকে ওয়ানডেতে নেতূত্ব দিয়েছেন। প্রায় ৫৪ ব্যাটিং গড় নিয়ে অধিনায়ক মাহির ব্যাট থেকে এসেছে ৬৬৩৩ রান। যার মধ্যে রয়েছে ৬টি সেঞ্চুরি ও ৪৭টি হাফসেঞ্চুরি। বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার হিসেবে ধোনির জুড়ি মেলা ভার। অধিনায়ক ধোনি ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেন। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে উইনিং শটটা তিনিই নিয়েছিলেন।

১) রিকি পন্টিং: ৮৪৯৭ রান
বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে অজি কিংবদন্তী রিকি পন্টিং সবার ওপরে বিরাজমান। প্রায় দীর্ঘ দশ বছর ধরে রিকি হলুদ জার্সিধারীদের নেতূত্ব দিয়ে এসেছেন। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়ের প্রধান কাণ্ডারি হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে নেতূত্ব দিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৩০টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে নেতূত্ব দিয়েছেন পন্টিং। ৪২.৯১ ব্যাটিং গড়ে তাঁর মোট ৮৪৯৭। সেঞ্চুরির সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। অধিনায়ক থাকাকালীন ২২টি সেঞ্চুরি ও ৫১টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে পন্টিংয়ের।-স্পোর্টসউইকি
১৭ অক্টোবর ২০১৮/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে