শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১১:১৯:৩৩

যে কারণে রাত দুটোয় ফোন করে তামিমের স্ত্রীকে গালি দেওয়া হয়

যে কারণে রাত দুটোয় ফোন করে তামিমের স্ত্রীকে গালি দেওয়া হয়

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়:  

বাংলাদেশের

সেরা টেস্ট রান                 ৩৩৪৯

সেরা ওয়ানডে রান            ৫০০৭

সেরা টি-টোয়েন্টি রান       ১১৫৪

     

    সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস            ২০৬

    সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস           ১৫৪

    সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ইনিংস      ১০৩*

     

    সর্বাধিক টেস্ট সেঞ্চুরি               ৮টি

    সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরি         ৭টি

    সর্বাধিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি     ১টি

 

এই রেকর্ডগুলো কার?

আমার ধারণা, যারা ক্রিকেট অনুসরণ করেন তারা তো বটেই, যারা মাঝে মাঝে ক্রিকেটের খোঁজ খবর নেন, তারাও জানেন। এটা আসলে এখন আর তোড়জোর করে জানানোর কিছু নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ের উল্লেখযোগ্য এই সব রেকর্ডই এখন তামিম ইকবালের দখলে।

এর বাইরেও কিছু ছোটখাটো রেকর্ড আছে। পরিসংখ্যান ঘাটার সময় নষ্ট করতে না চাওয়ায় সব উল্লেখ করা হলো না।

তাহলে এবার একটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন। বলুন তো এই যে তামিম ইকবালের ডজন খানেক রেকর্ড এর মধ্যে বামহাতি এই ওপেনারের সেরা অর্জনটা কী?

টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান? নাকি একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি?

ধুর, এসবের কোনোটাই তামিমের সেরা অর্জন না। তামিমের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন হলো ‘কালা পারে না’ কথাটাকে প্রবাদে পরিণত করতে পারা। তাকে নিয়ে করা ট্রল বাক্যকেই এখন দুনিয়ার তাবত তামিম সমালোচনার মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া বাক্যে পরিণত করতে পেরেছেন তামিম। ওই যে বলছিলাম, অন ইওর ফেস!

এমন তো নয় যে, তামিম রাতারাতি টেস্টে সব ধরণের ক্রিকেটে এই হাজার হাজার রান করে ফেলেছেন। এমন তো নয় যে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর কোনোদিন সকালে উঠে তামিম ওয়ানডেতে হাজার পাঁচেক, টেস্টে হাজার তিনেক রান বাজার থেকে কিনে এনেছেন।

এটা আস্তে ধীরেই করেছেন।

সেই ২০০৭ সাল থেকে একটু একটু করেই এই সৌধ গড়ে তুলেছেন। তামিমের বিপক্ষে সবচেয়ে অন্ধ অভিযোগ ছিলো, তামিম ধারাবাহিক নন। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানই ধারাবাহিক নন। ২০১৫ সাল থেকে এই সময় অবদি যদি তামিমের সোনালী সময় ধরি, তাহলেও এটা সত্যি যে, ২০১৫ সালের আগের বছরগুলোতেও দেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানের নাম তামিম ইকবাল।

পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।

তারপরও বন্ধু সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি সেই ২০১৫ সালেই হিসেব কষে দেখিয়েছেন, একটি ফিফটির পেছনে ব্যয় করা ম্যাচের বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ফলে ধারাবাহিকতা হীনতার অভিযোগও যেটা ছিলো, সেটাও খারিজ হয়ে যায়।

তারপরও তামিমকে তার এই ক্যারিয়ারে এসব কথাই সবচেয়ে বেশী শুনতে হয়েছে।

চাচার জোরে খেলে, ডানো বয়, ডাক বয় এবং খেলা পারে না; এসব কথাই হয়েছে। তামিমের ছবি বিক্রয় ডট কমে পোস্ট করা হয়েছে; আমি অন্তত এটা ভুলিনি। তামিমের স্ত্রীকে রাত দুটোয় ফোন করে গালি দেওয়া হয়েছে; এটা জাতীয় দলের কেউ ভোলেনি। দেশের সেরা ব্যাটসম্যানকে গভীর রাতে মাশরাফির নিয়ে চোখ থেকে পানি মুছিয়ে দিতে হয়েছে; এটাও আমরা ভুলিনি।

তামিম ইকবালকে এই বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তবে এখানে আসতে হয়েছে।

আমি অনেক ভাবার চেষ্টা করেছি, কেনো তামিমই এতো বেশী গালির শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে! এই নিয়ে হাইপোথিসিস ঘরানার একটা লেখাও লিখেছিলাম-আসুন তামিমকে গালি দেই।

সেখানে আমার দাবি ছিলো:

দুটো উত্তর আছে বলে মনে করি; ১. পরশ্রীকাতরতা এবং ২. গল্পের সঙ্গে না মেলা।

পরশ্রীকাতরতার যে সমস্যা, এটার স্বীকার বাংলাদেশের কমবেশী সব সফল মানুষই। বাঙ্গালী বিল গেটস বা মার্ক জাকারবার্গের গল্প সহ্য করতে পারে; বাড়ির কাছের পরিচিত কারো সাফল্য সহ্য করতে পারে না।

বাঙ্গালী মদের আড্ডায় বসে কোনো এক সফল মানুষের মাতলামির অভিযোগ করে। বাঙ্গালী নিজে রাস্তায় ইভটিজিং করে বাসায় ফিরে অভিযোগ করে অমুক ক্রিকেটারটা মেয়েদের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়।

এখানে সমস্যা ওই ক্রিকেটারের বাঁকা চোখ নয়; সমস্যা ওই ক্রিকেটারের সাফল্য। যেহেতু তামিম বাংলাদেশেরই একজন মানুষ এবং কারো কারো চেনাজানা মানুষই; সেই মানুষটি এমন করে ‘রাতারাতি’ ধনদৌলতের মালিক হয়ে গেল, এটা কারো সহ্য হয় না।

এখন শুধু এই তত্ত্ব দিয়ে তামিম-বিদ্বেষটা বোঝা সম্ভব না। কারণ, এই তত্ত্ব সত্যি হলে মাশরাফি, মুশফিক থেকে শুরু করে বাকী সব সফল ক্রিকেটাররাও তো তামিমের মতো গালিগালাজ সহ্য করতো। ব্যর্থতার সময় কমবেশী সবাইকেই গালি দেওয়া হয়; তবে তামিমের মতো এতো বেশী কাউকে দেওয়া হয় না; সাকিব ছাড়া; সাকিবের ক্ষেত্রে সুযোগ কম পাওয়া যায় অবশ্য।

সে ক্ষেত্রে শুধু পরশ্রীকাতরতা কারণ হতে পারে না। এখানেই দ্বিতীয় কারণটা দরকার: তামিম গল্পের মতো নয়।

আসলে এই সর্বনাশটা আমাদের করেছেন পেলে ও ম্যারাডোনা। ছোটবেলা থেকে আমরা বইয়ে পড়েছি খেলোয়াড়রা ঝুপড়ি ঘর থেকে উঠে আসে। তাদের জীবনে দারুন একটা লড়াইয়ের ইতিহাস থাকে। মানে আপনার জীবনে অবশ্যই মোহাম্মদ রফিকের দারিদ্র অথবা মাশরাফি বিন মুর্তজার চোট; এরকম কোনো গল্প থাকতে হবে। নইলে আপনি প্রিয় হতে পারবেন না।

এখন সমস্যা হল, তামিম যে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে, চট্টগ্রাম শহরের এতো ধনী পরিবারে জন্মেছে; এটাই আমরা মেনে নিতে পারি না। তুই ব্যাটা বড় লোকের ছেলে হয়ে ‘নায়ক’ হতে এসেছিস কেন!

তামিমের চাচা বাংলাদেশের কিংবদন্তী ক্রিকেটার-অধিনায়ক, তামিমের বাবা বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় সংগঠক ও ক্রীড়াবিদদের একজন, তামিমের বড় ভাই টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান; এই দোষ কী তামিমের? নাকি এমন পরিবারে জন্মালে খেলাধুলায় আসার নিয়ম নেই!

তামিম আকরাম খানের ভাতিজা কেন, এ নিয়েই আামাদের কতোশত অভিযোগ। তামিমকে শুধু ভালো খেললে চলবে না; তার চাচার পরিচয় মুছে ফেলতে হবে।

কী দারুন আবদার!

সে কারণ নিয়ে তো অনেক আলোচনাই হলো। এবার বরং ফলটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। তামিম আপাতত অন্তত এই গালিবাজদের একটু সুপ্ত অবস্থায় পাঠাতে পেরেছেন। যারা ম্যাগি নুডলস রান্না চড়িয়ে তামিমের ব্যাটিং দেখতেন, তারা এখন কীটের মতো সিস্ট হয়ে আছেন; উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেন।

আপাতত এই লোকগুলোর মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে এই সময়ে দুষ্টু ছেলেরা রোজ তাদের ট্রল তাদেরই ফিরিয়ে দিচ্ছে-তামিম্বাই কালা পারে না।

আমি বারবার বলি, তামিমের এই লম্বা ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন এই ট্রলটাই। যেটা এখন তিনি সেই কীটদেরই মুখের ওপর ঘষে দিতে পারছেন!-খেলাধুলা
৩ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে