বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ, ২০১৭, ১১:৫০:২৬

যুদ্ধ বেধে গেল দুই ক্রিকেট বোর্ডেও!

যুদ্ধ বেধে গেল দুই ক্রিকেট বোর্ডেও!

স্পোর্টস ডেস্ক: যত সময় যাচ্ছে, নয় বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় ‘মাঙ্কিগেট’ অধ্যায়ের মতোই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে বেঙ্গালুরুর ‘ডিআরএসগেট’ নিয়ে আগুন। দাবানলের মতো তা গোটা ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে তো পড়েইছে, দু’দেশের ক্রিকেট সম্পর্ককেও তিক্ত করে দেওয়ার উপক্রম করেছে।

দু’দেশের বোর্ড প্রকাশ্য যুদ্ধে নেমে পড়েছে। যা নজিরবিহীন। অতীতে দু’দেশের অধিনায়ক বা ক্রিকেটারদের মধ্যে ঝামেলার ইতিহাস অনেক আছে। কিন্তু একটি সিরিজকে কেন্দ্র করে বোর্ড বনাম বোর্ড সংঘাত দেখা যায়নি।

প্রশাসকদের লড়াইয়ে প্রথম শটটি নেয় কোহালিদের বোর্ড। বেঙ্গালুরুতে ড্রেসি‌মরুম থেকে স্টিভ স্মিথের ডিআরএসের সাহায্য চাওয়াকে কটাক্ষ করে তারা মঙ্গলবারেই নিজেদের সরকারি ওয়েবসাইটে শিরোনাম দিয়ে দেয়, ‘ডিআরএস: ড্রেসিংরুম রিভিউ সিস্টেম’। তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে তীব্র লেখালেখি হয়।

সম্ভবত তারই জেরে স্মিথের পাশে জোরাল ভাবে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) জেমস সাদারল্যান্ড পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন বুধবার। তিনি কোহালির বক্তব্যকে ‘অসংযত’ আখ্যা দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘স্টিভ স্মিথ অসাধারণ এক ক্রিকেটার। অনেক উঠতি ক্রিকেটারের কাছে রোল মডেল। ওর ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে যে, অনৈতিক কিছু ইচ্ছাকৃত ভাবে ও করবে না। কোহালির মন্তব্য আমাদের অসংযত মনে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া খেলার মধ্যে ক্রিকেটের স্পিরিট-বিরোধী কিছু করবে না।’

সাদারল্যান্ডের বিবৃতির কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা সাংবাদিকদের কাছে ই-মেল পাঠিয়ে দেয় ভারতীয় বোর্ড। তাতে কোহালিকে সমর্থন করে তারা লেখে, ‘ভারতীয় বোর্ড সম্পূর্ণ ভাবে কোহালির পাশে রয়েছে। আমরা আইসিসি-কে ঘটনা খতিয়ে দেখতে বলেছি কেন স্মিথ ড্রেসিংরুম থেকে ডিআরএস নিয়ে সাহায্য নিচ্ছিলেন’।

এখানেই শেষ নয়। নিজেদের বোর্ডের সরকারি ওয়েবসাইটকে হাতিয়ার করে চেতেশ্বর পূজারা ও আর. অশ্বিন একটি ভিডিও কথোপকথন পোস্ট করেছেন বুধবার। সেখানে স্মিথের ঘটনা নিয়ে অশ্বিন বলেন, ‘‘শেষ বার এমন দেখেছি অনূর্ধ্ব ১০ ক্রিকেট খেলার সময়।’’ কে বলবে, আর ক’দিন পরে স্মিথের অধিনায়কত্বেই আইপিএলে একই ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে নামবেন অশ্বিন। পুণে সুপারজায়ান্টস এখন তাঁদের মাথাতেই নেই। যুদ্ধের আগুন এমনই লেলিহান শিখার মতো জ্বলছে।
আরও পড়ুন: ড্রেসিংরুমে কার খোঁজ করছিলেন অধিনায়ক
এমনকী, পূজারার মতো শান্ত স্বভাবের ক্রিকেটারও ভিডিওতে খুল্লমখুল্লা জানিয়েছেন, কী ভাবে তিনি ওয়ার্নারকে স্লেজ করছেন। অস্ট্রেলীয় মিডিয়া এই ভিডিওটির কথা তুলে লিখতে শুরু করে দিয়েছে যে, স্মিথের দলকে চূড়ান্ত ভাবে অপমান করছে ভারতীয় দল আর কোহালিদের বোর্ড সেই পদক্ষেপে তাঁদের মদত দিচ্ছে।

এটা ঠিকই যে, বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে সাধারণত স্লেজিং বা দু’দলের তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে এত দিন কিছু লেখা হতো না। মাঠে যা-ই ঘটুক, বোর্ডের ওয়েবসাইটে তার স্রোত এসে লাগতে দিতেন না দু’দেশের কর্তারা। এখন সেই সৌজন্যও উড়ে যাওয়ার মুখে। ভারতীয় শিবিরের আবার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অস্ট্রেলীয় মিডিয়া সারাক্ষণ তাদের দলের হয়ে আমাদের বাউন্সার দিয়ে চলেছে। কখনও মার্ক ওয়-কে দিয়ে আক্রমণ করানো হচ্ছে। কখনও ইয়ান হিলি বলছেন। আমরা চুপচাপ বসে থাকব কেন?’’ দু’এক জন ভারতীয় ক্রিকেটার এমনও দাবি করছেন যে, অতীতে তাঁরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছেন,  ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটেও আক্রমণাত্মক বিবৃতি দিয়েছেন তাঁদের দলের খেলোয়াড়রা। ‘‘সৌজন্য লঙ্ঘণ করতে তো ওরাই প্রথম শিখিয়েছে,’’ বলছেন এঁরা।

ম্যাচ রেফারি অবশ্য বলে দিয়েছেন, স্মিথ বা কোহালি কাউকে বেঙ্গালুরুর ঘটনা নিয়ে ডাকা হচ্ছে না। কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।  যদিও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, দাউদাউ করে যে ভাবে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে, আইসিসি কি চুপচাপ থাকতে পারবে?-আনন্দবাজার
৯ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে