আম্পায়ারদের ভুল কমাতে আইসিসির নতুন উদ্যোগ
স্পোর্টস ডেস্ক: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানে অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক দীর্ঘ পাঁচ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে ২৪৫ রান করেন। অথচ শোয়েব মালিকের সেই ইনিংসটা থেমে যেতে পারতো মাত্র ৪০ রানেই। তাকে বাঁচিয়ে দেয় ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)।
অল্পের জন্য, আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হওয়া থেকে বেঁচে গেলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক। আর এবার এই ‘বলি’র হার কমাতে ‘স্নিকোমিটার’-এর পরিবর্তে ডিআরএসে যুক্ত হবে ‘আল্ট্রা এজ’ নামের প্রযুক্তি।
মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে খেলোয়াড়েরা এখন সহজেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। চ্যালেঞ্জটা হয় ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) পদ্ধতিতেই। যদিও এটি নিয়ে কম-বেশি বিতর্ক রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। কিন্তু পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এর পক্ষে সমর্থনই বেশি।
ডিআরএসে সাধারণত ব্যবহৃত হয় তিনটি পদ্ধতি। হক-আই, হটস্পট ও স্নিকোমিটার। আর এই স্নিকোমিটারের জায়গাতেই নতুন প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে আল্ট্রা এজ। আল্ট্রা এজ হক-আইয়ের স্নিকো ভার্শন।
প্রথমে জেনে নেই স্নিকোমিটারের কাজ কি? স্নিকো-মিটারের কাজ শব্দ শনাক্ত করা। উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শনাক্ত হয় এ শব্দ। বল প্যাডে লাগল নাকি ব্যাটে, তা নির্ধারণ করা হয় আওয়াজের মাধ্যমে। এটি আবিষ্কার করেন ইংলিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান প্লাসকেট।
বল ব্যাটে লেগেছে কিনা, তা বোঝার জন্য স্নিকোমিটার প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু সেই প্রযুক্তি এতটাই ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ ছিল যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বারবার টেলিভিশন রিপ্লে দেখা সত্ত্বেও তৃতীয় আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারতেন না।
ভুল থেকেই যাচ্ছে এই স্নিকোমিটার প্রযুক্তিতে। ফলশ্রুতিতে নড়েচড়ে বসল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এবার ঠিক হয়েছে ‘স্নিকোমিটারের’ বদলে ‘আলট্রা এজ’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে এবার পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
নতুন ‘আলট্রা এজ’ সিস্টেম বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজিতে (এমআইটি) পরীক্ষা করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। তারা ইতিবাচক মনোভাবই দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার জিওফ অ্যালারডাইস।
তবে আর্থিক স্বল্পতার কারণে অনেক টেস্ট সিরিজেই পূর্নাংগ ডিআরএস রাখা হয় না। সম্প্রতি আবু ধাবিতে পাকিস্তান-ইংল্যান্ড এবং লঙ্কায় শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মধ্যে টেস্ট সিরিজ চলছে। সেখানেও ব্রডকাস্টার জনিত সমস্যায় হট-স্পট এবং স্নিকো ছাড়া ডিআরএস পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান-ইংল্যান্ড টেস্টের দুইটি সিদ্ধান্ত আরো পরিষ্কার ভাবে দেয়া যেতো যদি পূর্নাংগ ডিআরএস সিস্টেম থাকতো। প্রথম ইনিংসে মিসবাহ-উল-হকের নট আউট দেয়া হয়। এছাড়াও দ্বিতীয় ইনিংসে মোহাম্মদ হাফিজকেও নট আউট দেয়া হয়। এই বিতর্ক বন্ধ হওয়ার রাস্তা একটাই। আর তা হলো সব সিরিজেই ডিআরএস থাকা।
শুরু থেকেই ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের (ডিআরএস) বিপক্ষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। শুধু ভারতই নয়, আরও কয়েকটি ক্রিকেট বোর্ডও ডিআরএসের বিরুদ্ধে। প্রযুক্তিটি ব্যয়বহুল হওয়ায় তা ব্যবহার করতে রাজি নয় বোর্ডগুলো।
তবে নির্ভুল ক্রিকেটিয় সিদ্ধান্তের জন্য এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। এমনটাই মনে করেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সর্বত্রই ডিআরএসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
তবে কবে থেকে বা কোন টেস্ট সিরিজ দিয়ে এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তা এখনো জানায়নি আইসিসি। তবে, এই প্রযুক্তির উপকার বাংলাদেশ ক্রিকেটও পাবে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে অনেক কমে আসবে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত! প্রিয় নিউজ।
সূত্র: ইএসপিএন ক্রিকইনফো
২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ