রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:২৫:২৬

আমার কোন বই ছিলো না, পরীক্ষার মাত্র ২৭ দিন আগে বই কিনে ‘এ মাইনাস পেয়েছি’: সাকিব আল হাসান

আমার কোন বই ছিলো না, পরীক্ষার মাত্র ২৭ দিন আগে বই কিনে ‘এ মাইনাস পেয়েছি’: সাকিব আল হাসান

স্পোর্টস ডেস্ক :  ‘সাকিব আল হাসান: আপন চোখে, ভিন্ন চোখে’-বইটি উপলক্ষ্যে নিজের বাসায় বসে জীবনের দীর্ঘতম ও সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সাক্ষাতকারটি দিয়েছিলেন সাকিব। আজ থেকে তিন বছর আগের এই মহাগুরুত্বপূর্ন সাক্ষাতকারটির প্রথম পর্ব দিয়ে আমরা শুরু করছি আমাদের সাকিব উৎসব-

► আজ থেকে ঠিক আট বছর আগে এই দিনে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন। একেবারে কম সময় নয়। আট বছরে কতোটা বদল এলো জীবনে? ক্রিকেটে কতোটা পরিবর্তন দেখলেন?

জীবনে তো অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামগ্রিকভাবে ক্রিকেটে কতোটা পরিবর্তন হয়েছে, সেটা তো বড় ব্যাপার। আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের কথা যদি বলি, মনমানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ২০০৬ সালের সেই সময়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে এখন ক্রিকেটারদের প্রতিদ্বন্ধীতা করার মানসিকতা অনেক বেশী। জেতার জন্য খেলার প্রবনতা এখন অনেক বেশী। সবমিলিয়ে মানসিক এই পর্যায়েই পরিবর্তনটা বেশি হয়েছে।

►আপনার নিজের কতোটা পরিবর্তন হলো?

তা তো অনেক। প্রথম যখন এলাম, তখন তো শুধু আনন্দ, খুশি। তখন ক্রিকেট ছিল শুধুই উপভোগের ব্যাপার। তখন কোনো টেনশন ছিল না, কোনো প্রত্যাশার ব্যাপার ছিল না। কিন্তু যখন ভালো খেলা শুরু করেছি, আস্তে আস্তে প্রত্যাশা বেড়েছে। এরপর এই প্রত্যাশা পূরণের একটা চাপ তৈরী হয়েছে। সেটা পূরণের একটা দায়িত্বও তৈরী হয়েছে। অনেকদিন ধরে খেলার ফলেও এক ধরণের দায়িত্ব চলে আসে। সবমিলিয়ে বলতে পারেন, এটা সময়ের পরিবর্তন। এইসব পরিবর্তন ছাড়া ব্যক্তি আমার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না।

►আপনার ছোটবেলার গল্প, বিকেএসপির গল্প; কমবেশি আপনার কাছেই শুনেছি। সেই ছোটবেলার একটা ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে। সে সময়ের বন্ধুদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ আছে?

প্রায় সবার সঙ্গেই আছে। কারো সঙ্গে একটু বেশি, কারো সঙ্গে একটু কম। কিন্তু যোগাযোগ আছে। এমন বন্ধু বোধহয় নেই, যার সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ হয় না। আর কিছু না হোক, ঈদে তো একবার দেখা হয়। তবে এটা ঠিক যে, যোগাযোগ অনেক কমে গেছে। কারণ এটাই বাস্তবতা। এখন সবাই যার যার জীবন নিয়ে অনেক ব্যস্ত। এখন আর তো সেই দিন নেই যে, আগের মতো সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকা, একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া যাবে। জীবনই তো এখন অনেক সিরিয়াস। এখন বয়সটাই এমন। এখন কেউ চাকরি করছে, কেউ পড়াশোনা শেষ করেছে, কারো আবার বাচ্চা হয়েছে, সংসার হয়েছে।

►সবার খোজ খবর রাখেন? কে কেমন আছে?

সবারটাই জানি। আমাদের মাগুরার সার্কেলটার একটা দারুন দিক হল, সবাই খুব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আমাদের ব্যাচে ডাক্তার আছে বেশ কয়েক জন, বুয়েট থেকে বেরিয়েছে কয়েক জন, বেশিরভাগই ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো ভালো সাবজেক্টে পড়েছে। মানে কাউকেই পাবেন না, যে জীবনে খুব একটা সফল হতে পারেনি। এরকম ব্যাচ আপনি খুব একটা খুজে পাবেন না। আমাদের ব্যাচের সবাই খুব সফল।

►হঠাৎ করে কোনো পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে কী হয়?

আমার সাথে এরকম হঠাৎ করে এখন আর পুরোনো বন্ধুদের কারো সঙ্গে দেখা হয় খুব কম। এখন আর সে সুযোগও নেই। আমার সঙ্গে অনেকের সঙ্গে অনেক দিন পর একসঙ্গেই দেখা হয়। একজনের সঙ্গে হঠাৎ দেখা খুব একটা হয় না। আসলে আমি ছাড়া বাকী বেশীরভাগ বন্ধুরা হল পড়াশোনার দিকে। ফলে ওদের ঘোরাফেরা, ছুটি হয় একই সময়ে; আমি সে সময়ে হয়তো খেলা নিয়ে থাকি। ফলে ঈদে বা এরকম ছুটিতে একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, একজনের সঙ্গে হঠাৎ আর হয় না।

►আপনার বর্তমান জীবনে ফিরে আসি। আপনার সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক তো খুব ইন্টারেস্টিং। বলা হয় একটি পত্রিকার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক খুব ভালো, অন্য একটির সঙ্গে খুব খারাপ। এই ধারণাটা কেন তৈরী হয়েছে বলে মনে হয়?

আমি আসলে এভাবে কখনো ভাবিনি। যে সম্পর্ক ভালো বলে ধারণা আছে, সেটা নিয়ে তো বলার কিছু নেই। কারণ আমি তো বটেই, সবাই চায় সব মিডিয়ার সঙ্গে, সবার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো থাক। কেউ কখনো চাইবে না, কারো সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হোক। আপনি বলেন, এটা কী কেউ ভাববে যে – এর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খারাপ করা দরকার! কেউ চায় না সম্পর্ক ইচ্ছে করে খারাপ করতে। আমিও কখনো করবো না; কোনো বোধশক্তি-ওয়ালা মানুষই সেটা চাইবে না। আমারও কখনো সেটা ছিল না। ফলে এটুকু বলতে পারি, যে আমি কখনো কোনো মিডিয়ার সঙ্গে বা কারো সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইনি।

►সংবাদ সম্মেলনে বা সাংবাদিকদের সঙ্গে আপনার সামগ্রিক আচরণ নিয়ে অভিযোগ আছে। কাটা কাটা উত্তর দেন, অনেক সময় তাচ্ছিল্য করেন, যেটা বলার তা বলেন না…

সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারটা বলি। আমি আসলে যেটা বাস্তবতা সেটাই সবসময় বলার চেষ্টা করি সংবাদ মাধ্যমে। হ্যা, যেটা সবাই শুনতে চান, শুনতে পছন্দ করেন; তা সবসময় বলা হয় না। হ্যা, এটা মনে হয় আমারই দোষ। আমি চাইলে আরেকটু ডিপ্লোমেটিক হতে পারি। দেখেন, ব্যাপারটা আমি কিছুই বুঝি না, তা নয়। আপনি কী প্রশ্ন করেছেন এবং কী উত্তর দিলে আপনি খুশি হবেন, আপনার পছন্দ হবে, সেটা আমি জানি। এখন আমি ওই পছন্দের উত্তরটা সবসময় দিতে চাই না। আমি সৎ থাকতে চাই। প্রশ্নটার যে উত্তর আমার সত্যি বলে মনে হয়, আমি সেটা বলি। আমার কাছে মনে হয়, এটা সমস্যা। আমি বুঝি। আমি প্রশ্ন শুনলে বুঝি, কোন উত্তরটা দিলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু আমি চেষ্টা করি, নিজের মনের কথাটা বলার। চেষ্টা করি বলাটা ঠিক হল না; এটাই আমি। আমি আমার মতো করেই করেই উত্তরটা দিতে চেষ্টা করি। এটাই হয়তো সমস্যা।

►ব্যক্তিগত পর্যায়েও আপনি সাংবাদিকদের ঠিক গুরুত্ব দেন না বা সাক্ষাতকার দিতে আপত্তি করেন, এমন সব অভিযোগও আছে।

গুরুত্ব দেই না, এটা ঠিক না। আসলে আমার ভঙ্গির কারণে এমন কারো মনে হতে পারে। কিন্তু ইচ্ছা করে আমি কাউকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, এমন কখনোই করি না। আর ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারের ক্ষেত্রে যেটা হয়, এটা তো আসলে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি সাক্ষাতকার দিতেই চাই। কিন্তু যে সব সময় সাক্ষাতকার চাওয়া হয়, দেখা যায় এক সঙ্গে ৩০ জন আলাদা আলাদা করে সাক্ষাতকার চাচ্ছেন। সেটা তো দেওয়া সম্ভবও না। আর আমারও তো নিশ্চয়ই সেটা দিতে ভালো লাগবে না।

►সাকিব কেমন লোক? আপনি সাকিবকে কিভাবে বর্ননা করবেন?

প্রথমত মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী মানুষ। খুবই বাস্তবানুগ চিন্তাভাবনা করা একজন মানুষ। বাস্তবকে খুব সহজে মেনে নিতে পারে। আর নিজের মতো করে চলতে চাওয়া একটা মানুষ।

►এই নিজের মতো করে কেন চলতে চান? সামাজিক প্রানী হিসেবে বাচতে ইচ্ছে হয় না?

সেটা আসলে আমার কখনোই করা হয়নি। আমি বিকেএসপিতে বড় হয়েছি; অনেকটা নিজের মতো করেই বড় হয়ে উঠেছি। আমি যতোদিনের বিকেএসপি শেষ করেছি, ততোদিনে দুই বছর জাতীয় দলে খেলে ফেলেছি। মানে ঢাকা শহরে সেভাবে স্থায়ী হওয়ার আগেই আমি হোটেল জীবন, একা থাকা, ছোট্ট একটা গণ্ডিতে থাকা, অল্প বন্ধু; এগুলোতেই অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ঢাকায় একটা মানুষ যেভাবে স্বাভাবিকভাবে ঘোরে বা অন্যদের সঙ্গে মেশে, সেটা আমি কখনোই করতে পারিনি। ফলে কী বলে এটাকে? আমি একটু আত্মকেন্দ্রিক?

►না, আত্মকেন্দ্রিক বললে তো একটু নেগেটিভ হয়। এটাকেই ওই নিজের মতো করে বাচা বলে মনে হয়…

হ্যা, নিজের মতো করেই সবসময় থেকেছি। এটাই সাকিব।

►আপনার এই নিজে নিজে থাকা বা একটু অন্যরকম চরিত্র নিয়ে আমি আপনার সতীর্থদের সঙ্গে, আপনার কোচদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই প্রায় একটা ব্যাপার বলেছেন যে, আপনি আসলে যেমন, তেমন করে আমরা আপনাকে চিনি না। আপনাকে দূর থেকে থেকে আত্মকেন্দ্রিক, অ্যারোগেন্ট মনে হলেও আসলে নিজের জগতে খুবই আড্ডাবাজ, মনখোলা একজন ছেলে। মোদ্দা কথা, তাদের মতে আপনাকে খুব ভুল বোঝা হয়। আপনি কী একমত এ বিষয়ে?

আসলে আমার যারা ঘনিষ্ট, তারা সবাই এটাই বলবে। দূর থেকে আসলে যে কাউকেই সঠিক জাজ করা একটু কঠিন। কারো সম্পর্কে আপনি যখন দূরের ভাষ্যটা শুনবেন, তখন নেগেটিভটা সত্যি বলে মনে হবে। আবার ওই লোকটার ভাষ্য শুনলে মনে হবে, না যা শুনেছি, তার সব সত্যি ছিল না। আমার ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমার সঙ্গে কেউ ভালোভাবে মিশলে আমার সম্পর্কে পুরো ধারণাই বদলে যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আমি সৎ, অনেক সৎ জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। আমার জীবনে ভনিতা বলে কিছু নেই, আমি কখনো কোনো প্রয়োজনে অভিনয় করতে পছন্দ

করি না। হ্যা, অন্য কারো চেয়ে আমাকে ভুল বোঝা হয়তো বেশি সম্ভব। আমি যেহেতু একটা ছোট সার্কেল নিয়ে চলে অভ্যস্থ, তাই আমার সম্পর্কে ঘনিষ্ঠভাবে জানা মানুষের সংখ্যা তো কম। আমি এই নিজের সার্কেলের বাইরে নিজেকে খুব একটা প্রকাশও করি না। ফলে আমার দু একটা আচরণ দেখে মানুষ আমাকে বিচার করে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। যে লোকটা আমাকে কাছ থেকে বেশি দেখেনি, সেই লোকটা আমাকে এক দু বার দেখে আসলেই ধারণা করতে পারবে না যে, আমি মানুষটা কেমন। হ্যা, আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা আমার ঘনিষ্ঠ মানুষ। আমি যাদের সঙ্গে খোলামেলা, তাদের সঙ্গে খুবই খোলামেলা। ফলে তারা এটা বলবেই যে, আমাকে খুব ভুল বোঝা হয়।

►ভুল বোঝাটার আরেকটা কারণ মনে হয়, আপনার উপস্থাপন ভঙ্গি। বা আপনার কথা যেভাবে মিডিয়ায় আসে। যেমন সেই ভালো লাঞ্চের জন্য দ্রুত অলআউট হয়ে আসার কথাটা বা অরেঞ্জ জুসের কথাটা। আপনি যেভাবে বলতে চেয়েছেন, হয়তো সেভাবে লোকেরা জানতে পারেনি। এ রকম কারণে ভুল বোঝা হলে সেটা কেমন লাগে?

এটাতে আফসোস একটু হয়। আসলে কেউই তো নিজের একটা নেগেটিভ ইমেজ দাড় করাতে চায় না। হ্যা, আমি যেটা সোজা সাপটা বলি, তাতেও হয়তো কেউ কেউ কষ্ট পায়। কিন্তু এসব কথায় মানুষ কষ্ট পেয়ে তখন তো খারাপ লাগেই। আমি তো এগুলো আসলে এভাবে কখনোই মিন করিনি। কথার প্রেক্ষিতে, মজা করে কিছু কখা বলি; সেটা মূল আলোচনা থেকে আলাদা করে প্রেজেন্ট করা হলে অর্থ বদলে যায়। এটা আপনি সাংবাদিক, আপনি ভালো বুঝবেন। এসব ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটা বর্ননা করলে ওই কথাটাকেই একেবারে ভিন্ন মনে হতে পারতো।

►এবার একটু হালকা হতে শুরু করি। আপনি একটা সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, কবিতা আপনাকে খুব বিস্মিত করে। আবার এই যে ইলেকট্রিসিটি বা জগতের ছোটখাটো আবিষ্কার, এসবেরও আপনি বিস্মিত হন। আপনার এই বিস্ময়ের জায়গাটা একটু বলবেন?

বিস্ময়ের ব্যাপার না! এই যে মানুষ কবিতা লেখে, গান লেখে; আমি ভেবেই পাই না, কিভাবে মানুষ এমন চিন্তা করে! কিভাবে এমন মিল থাকে লেখায়, এইসব ছন্দ কিভাবে মানুষ লিখতে পারে? আমি আসলে…। আমার বৌ মাঝে মাঝে বলে, তুমি মনে হয় পাগল। কিন্তু আপনি ভাবেন, প্রতিটা কাজ। বিশেষ করে শিল্পীদের কাজগুলো কেমন বিস্ময়কর। এই যে সামনের সোফাটা দেখেন। একটা ডিজাইন, কতো ভেবে ভেবে মিলিয়েছে। আবার একটা ছবি আকে, কতো রকম অর্থ হয়; কিভাবে পারে সে!

►শুধু শিল্প? বিজ্ঞান অবাক করে না?

খুব অবাক হই। এই যে লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে। সুইচটা টিপে দিলেই এগুলো চলছে। এটা বিস্ময়কর না? বিজ্ঞানীরা কিভাবে জানলো যে, এভাবে তারের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎকে নেওয়া যাবে! আগুন আবিষ্কার হল; আচ্ছা বুঝলাম, সেটা হয়তো পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকি করতে গিয়ে হয়ে গেছে। তারপরও আমার প্রশ্ন আছে – আগুনটা যে ধরে থাকলো, মানুষ জানলো কি করে যে একটা জ্বালানি দিতে হবে। আসলে প্রতিটা মানুষের কাজ দেখে আমি মুগ্ধ হই, আমার শ্রদ্ধা তৈরী হয়।

►ক্রিকেটে এমন বিস্ময় আছে?

আইন কানুনের ব্যাপারটা ভাবেন। আইন কানুনগুলো কতো পূর্নাঙ্গ! কিন্তু যারা প্রথম এটা বানালো, তারা এতো সব সুক্ষ্ম দিক কিভাবে মনে রাখলো? আমার তো পড়েই মনে থাকে না। আসলে আমি বলি, প্রতিটা পেশা, প্রতিটা কাজ একটা শ্রদ্ধার দাবি রাখে। একটা সাধারণ কর্মজীবি থেকে শুরু করে করপোরেট অফিসের প্রধান; সবার দারুন দক্ষতা লাগে। একজন কেরানী থেকে একজন জজ; সবার কাজই কিন্তু খুব কঠিন। দারুন স্কিল দরকার কাজে।

►মানুষের এইসব কর্মকান্ড আপনাকে মুগ্ধ করে, বিস্মিত করে। বিশ্বের এই চলতে থাকা, মহাবিশ্বের ব্যাপার স্যাপার আপনাকে অবাক করে না?

না। মহাবিশ্ব নিয়ে কেন কিছু বিস্ময় তৈরী হয় না? আমি তো মুসলিম। আমি ধর্ম অনুসরণ করে জীবনযাপন করি। তাই এ ক্ষেত্রে আমার ধর্ম যে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেটা আমি মেনে নেই। আসলে আমি সবকিছু সরল করে দেখতে পছন্দ করি। আমি বুঝি, আমি যেহেতু মুসলিম পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে, সব ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে, সত হয়ে থাকলে আমার আর বাকীটা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে। হ্যা, আমি বিজ্ঞানের খবরটবর পড়ি। তবে এ নিয়ে ভাবি না।

►রাজনৈতিক খবর পড়েন না?

হ্যা, প্রচুর পড়ি। আমাদের এখানে রাজনীতির খবরই তো সব। সকাল থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত রাজনীতি নিয়ে আলোচনা। ফলে রাজনৈতিক খবর খুব দেখি।

►এতে কোনো দল বা মতের প্রতি পক্ষপাত তৈরী হয়?

না, না। সেটা হলে তো ভেতরের মজাটা বুঝতে চেষ্টা করতে পারবো না। আমি একটা একটা ঘটনার সবগুলো মত বোঝার চেষ্টা করি। কী ঘটছে, ভাবি। খুব কঠিন ব্যাপার।

►ছোট বেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?

অনেক কিছু-ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট। যখন যে পেশায় সফল একজন মানুষ দেখতাম, মনে হত এনার মতো হতে হবে।

►আইসক্রিমওয়ালা, সিনেমা হলের টিকিট চেকার?

নাহ। আসলে আমার জীবনে কখনো ড্রামাটিক কখনো কিছু চিন্তা করেছি বলে মনে পড়ি না। যেটা সম্ভব না, সেটা ভাবিনি। আমি পড়ালেখা করলে যা বলেছি, তার একটা সম্ভব ছিল। তাই লক্ষ্য গুলো খুব রিয়েলিস্টিক ছিল।

►আপনার মা বলেছেন, আপনি পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলেন।

আমিও বলি। আমি আসলেই পড়ালেখায় ভালো ছিলাম। ছোটবেলার কথা বাদ দিন। আমি ক্রিকেটে পুরো চলে আসার পর, এইচএসসি পরীক্ষার ২৭ দিন আগে বই কিনেছি, ২৬ দিন পর পরীক্ষা দিয়ে ‘এ মাইনাস’ পেয়েছি-চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.৯০ পেয়েছি। বিশ্বাস হয়? আমার বই ছিল না। ২৭ দিন আগে যখন বই কিনতে গেছি, দোকানদার বলে, এ বছরের বই কিনবেন কেন? আমি বললাম, এ বছর আমার পরীক্ষা। সে অবাক হয়ে বলে, তাহলে গাইড বই নেন। আমি মূল বই কিনেছি।

►ওই সময় মূল বই পড়ে পরীক্ষা দিয়েছেন?

হ্যা। একটা সাবজেক্টে মনে হয় গাইড কিনেছিলাম। আমার লাগতো না। আমি মূল বই পড়ে নিজের মতো করে সাজেশন বানিয়ে পড়তাম। সাজেশন দেয় না স্যাররা? তারা হয়তো ১০টা প্রশ্ন করে দিয়েছেন, তার ভেতর থেকে ২ টা আসবে। আমি আবার ওটাকে ছোট করে ৫ টা প্রশ্ন পড়তাম; ওখান থেকে ২ টা আসতো পরীক্ষায়।

►এটাকে কী অনুমান বলবেন?

বুঝতে পারার ক্ষমতাও বলতে পারেন। একটা সাবজেক্টের কথা বলি – ইকোনমিক্স। ওখানে আমাদের একটা প্রশ্নের ‘ক’ বা ‘খ’ যে কোনো একটা অংশের উত্তর দিতে হতো। মানে, ১০টা প্রশ্নে মোট ৫টার উত্তর দিতে হবে। আমি কয়টা প্রশ্ন পড়ে গিয়েছিলাম জানেন? ৬টা। ৬টাই এসেছিল। একটা প্রশ্নে ‘ক’, ‘খ’ দুটোই এসেছিল। বাকীগুলোতে একটা করে ছিল আমার পড়া।

►তার মানে একটা এদিক ওদিক হলেই বিপদে পড়ে যেতেন?

হয়তো। আবার নাও হতে পারতো। আমি আসলে বইটা খুব মন দিয়ে পড়তাম। ব্যাপারগুলো ভালো বুঝতাম। ফলে একটা ধারণা থাকতো। এরপর একেবারে না পড়া প্রশ্নেরও কিছু উত্তর করতে পারতাম। নিজে নিজে লিখতে পারতাম।

►সে ক্ষেত্রে আপনি সাংবাদিকতাও তো করতে পারবেন।

হতে পারে। আমি আসলে অনেক কিছুই ভালো করতে পারতাম বা চেষ্টা করলে পারবো। হতে পারে, এক সময় সাংবাদিকতা করছি।

►পড়াশোনার এই যে জীবনের কথা বললেন, তাতে ভালো অ্যাকাডেমিক একটা ক্যারিয়ারও হতে পারতো। সেটা হয়নি বলে আফসোস আছে?

না। কারণ, পড়াশোনাটা এনজয় করতাম না যে। মানে, যখন খেলা বনাম পড়াশোনার প্রশ্ন আসতো; আমি কিছুতেই পড়াশোনাটা মানতে পারতাম না। পড়াশোনা করতাম। কিন্তু কখনো ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল না। সমস্যাটা হত বিকালে অনেক সময় কোচিং করতে যেতে হত। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতাম না। আমি তো কল্পনাই করতে পারি না ফুটবল বা ক্রিকেট রেখে আমি কিভাবে কোচিং করতে যাবো!

►আপনাকে যতোদূর বুঝি, কোনো কিছু নিয়েই আফসোস নেই। কিন্তু আপনার ফুটবল প্যাশন দেখে মনে হয়, এটা অন্তত মিস করেন।

প্যাশন ফুটবলে একটু বেশী হয়তো। আসলে প্যাশন তো ক্রিকেটেও। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার হয়, ক্রিকেট তো আমার রোজকার জীবন। আমার ভালোবাসা, আমার পেশা; সবই ক্রিকেট। এটা যেহেতু রোজ খেলি তাই এটার প্যাশনটা হয়তো সেভাবে প্রকাশ করি না। ফুটবলটা যেহেতু খেলি না, ওখানে, ভক্ত হিসেবে, সমর্থক হিসেবে প্যাশনের প্রকাশটা বেশিই হয়।

►আচ্ছা, একটু অন্যভাবে প্রশ্নটা করি। ধরেন বার্সেলোনা না, অ্যাটলেটিকো বা মালাগার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবং এই অলরাউন্ডার সাকিব; কোন জীবন বেছে নেবেন?

হা হা হা…। আমি এটা না বলি। আমি বলি, আমার এই জীবন নিয়ে আমি খুশি। আসলে একটু সিরিয়াস নোটে বললে, মালাগা বা বার্সেলোনার চেষ্টা করলে হয়তো ভুলও হতে পারতো। আমাদের দেশে অনেক প্রতিভাধর খেলোয়াড়ই তো আছেন। হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা সফল হতে পারেননি। অনেকেই তো জানে না, কোন দিকে গেলে সফলতা আসতে পারতো। আমাদের সিস্টেম তো সেভাবে সফলতার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আমি অনেককে দেখেছি, দারুন প্রতিভাধর, খুবই প্রতিভাধর; একটা পর্যায়ে হারিয়েই গেছে। এটা হয়তো তাদের পথ ছিল না। ফলে, ফুটবল হয়তো আমার পথ ছিল না। গ্যারান্টি কোথাও নেই, ক্রিকেটেও নেই। এখানেও আজ পারফরম না করলে কাল আপনি নেই। তবে এখানে যেহেতু সাফল্য পেয়েছি, তাই এখানেই খুশী থাকা উচিত।

►সাধারণ একটা ছেলের জীবন, আপনার বয়সী ঢাকার একটা বেকার ছেলের জীবন কী আপনাকে কখনো টানে? কখনো মনে হয়, ইস ওর মতো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা যেত বা চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া যেত!

নাহ। উহ…। আসলে কখনো কখনো একটু যে ঈর্ষা হয় না, তা না। বোঝা বড় মুশকিল। আমি নিজেকে কখনো ওভাবে ভাবতেই দেইনি। আমি তো নিজেকে এই সাকিব হিসেবে মেনেই নিয়েছি। আমি যখন প্রথম জাতীয় দলে ডাক পেলাম, ফাহিম স্যার (নাজমুল আবেদীন ফাহিম) আমাকে বলেছিলেন, ‘সাকিব, চাইলেই কিন্তু আর দশ জনের মতো জীবন আর কাটাতে পারবা না। তোমাকে এটা মেনে নিতে হবে। তুমি দেখবা, তোমার অনেক বন্ধু রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে, ফুচকা খাচ্ছে; এটা তুমি চাইলেও আর পারবা না। এটাই তোমার লাইফ।’ ফলে এটা আমার মধ্যে ওভাবেই সেট হয়ে গেছে। আমি এই জীবনটাকেই মেনে নিয়েছি। তবে এমন না যে, কখনোই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ফুচকা খাইনি। ওরকম বন্ধু সার্কেল সঙ্গে থাকলে তো করা যায়। এই তো সেদিনও রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আড্ডা দিলাম, ফুচকা খেলাম।

►তাই! রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছেন বা কথা বলছেন, লোকজন তো নিশ্চয়ই বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে-ওই যে সাকিব! এই দৃষ্টিটা এড়াতে পারেন?

তা তো অনেকেই তাকিয়ে থাকে। আমি যেহেতু কখনো একা এরকম দাড়াই না, ফলে খুব একটা গায়ে লাগে না। অনেকে কাছেও এসে পড়ে, কথা বলে। হ্যান্ডশেক করে, ছবি তোলে।

►এরকম হঠাৎ এগিয়ে আসা লোকগুলোকে কিভাবে নেন? হঠাৎ রাস্তায় দেখে কেউ ‘সাকিব ভাই, সাকিব ভাই’ করে এগিয়ে এলো, ছবি তুলতে চাইলো…

নির্ভর করে তখন কী অবস্থায় আছি। অনেক সময় তো বিরক্তি লাগে। এমনিতে ফ্রি থাকলে, কোনো টেনশনে না থাকলে ভালোভাবেই নেই। অনেকে আসে তো। ছবি তোলে, অটোগ্রাফ নেয়। তবে ভিড়ের মধ্যে তাড়াহুড়ো করছি বা খেলা চলছে তখন গ্যালারি থেকে কেউ এগিয়ে এলো; এমন অবস্থায় বিরক্তি লাগে। আসলে এটা তো সবারই। স্বাভাবিক থাকলে থাকলে একধরণের প্রতিক্রিয়া হয়, একটু মেজাজটা অশান্ত থাকলে অন্য ধরণের প্রতিক্রিয়া।

►সাকিবের এই জীবন, এটা আপনি উপভোগ করেন সবমিলিয়ে?

শতভাগ। আমি উপভোগ করি এবং খুশি এই জীবন নিয়ে।

►কিন্তু এই জীবনের বাড়তি হিসেবে তো অনেক উপদ্রব আসে। সব তারকার এতো হয় না, আপনার হয়। এই জীবনের সঙ্গে বিতর্ক আসে, আপনাকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথাবার্তা হয়; এটা নিশ্চয়ই উপভোগ করে না?

না। বিতর্ক, এরকম কথাবার্তা তো কেউই উপভোগ করে না। তবে এটাও আমি মেনে নিয়েছি। ভালোগুলোর সঙ্গে প্যাকেজ হিসেবেই এগুলো আসে। আমাদের বাংলাদেশে এমনই নিয়ম হয়তো বা হতে পারে সব জায়গায়। আমি এ জন্য কাউকে দোষও দেই না। ধরুন, একটা বিতর্ক তৈরী করার মতো খবর, এটা মানুষ বেশী পড়তে চাইবে। আমি নিজেই তো পত্রপত্রিকায় এসব সেনসেশনাল খবর পড়তে পছন্দ করি। ফলে সেরকম কিছু পাওয়া গেলে বেশী আলোচনা হবে, বেশীক্ষন টিকে থাকবে; এই স্বাভাবিক। পজেটিভ খবরও যে মানুষ দেখে না, তা নয়। আমি এখানে নিজেকে যেটা বলে শান্ত রাখি যে-এই নিউজ বা আলোচনা বেশীক্ষন স্থায়ী হবে না। আমাদের দেশটা এতো মানুষের দেশ যে, প্রতিনিয়ত এখানে ইস্যু তৈরী হতে থাকে, বিষয় বদলায়। ফলে একটু অপেক্ষা করলেই দেখা যায়, বিষয়টা বদলে গেছে। তাই এই বাড়তি হিসেবে আসতে থাকা ব্যাপারগুলোকে নিয়ে আমি খুব বিচলিত হই না।

►নিজের ব্যাপারে না হয় এরকম নির্মোহ থাকছেন। পরিবার যখন জড়িয়ে যায়? আপনি বিয়ে করার পর থেকে আপনার প্রতিটা ঘটনায়, সম্পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক, আপনার স্ত্রীর নাম আসে। এতে কী অসহায় লাগে?

না, অসহায় লাগে না; হাসি লাগে। আমি সত্যি বলি, হাসি লাগে। আমার কী মনে হয় জানেন? মানুষ এতো ভেবে, গালি দেবে বলে দেয় না। এগুলো আসলে কী-বোর্ডের সামনে বসে, তাৎক্ষনিক যা মনে আসে, বলে ফেলে। সে নিজে যদি এইগুলো ভাবতো যে, এর কী প্রতিক্রিয়া বা এটা বললে সেটা শোভন হল কি না; তা হলে এসব বলতো না। আমি নিশ্চিত লোকজন যা বলে, সবই তাদের মনের কথা নয়।

►এবার ক্রিকেট। প্রথমেই বলেন, কোন সাকিব এগিয়ে? বোলার, নাকি ব্যাটসম্যান?

আগেও অনেকবার বলেছি-পঞ্চাশ, পঞ্চাশ।

►কিন্তু আপনি বোধহয় নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন।

না, আসলে ব্যাটিংয়ের সাফল্যটা বেশী উপভোগ করি। ব্যাটিং নিয়ে পরিশ্রমটা বেশী করি তো। তাই সেখানে সাফল্য পেলে বেশী ভালো লাগে। বোলিংয়ের ব্যাপারটা অনেকটাই হয়ে যায় বলে একটু সাফল্যটা কম উপভোগ করি মনে হয়। তার মানে এই না যে, আমার বোলিংয়ের গুরুত্বটা আমি বুঝি না। তবে ব্যাটিংটা নিয়ে অনেক বেশী সময় দেই।

►মানে, বোলিংটা অনেকটাই গিফটেড বলছেন?

আমার তাই মনে হয়।

►আর্ন্তজাতিক যেসব বিশেষজ্ঞ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা বোলার সাকিবকে একটু বেশী মূল্যায়ন করেন।

এটা করার কারণ আছে। আমি বিদেশী লিগগুলো যখন খেলি, ওখানে টি-টোয়েন্টিই বেশী খেলি। এই ফরম্যাটে চার ওভার বোলিং প্রতি ম্যাচেই করি। কিছু সাফল্য আসে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সাফল্যটা তো অমন নিশ্চিত না। রোজ ব্যাটিং পাইও না। ফলে বোলার হিসেবে চোখে একটু বেশী পড়ি। অবশ্য এখন বিদেশী দলগুলোতে একটু বেশী পারফরম করার সুযোগ পাচ্ছি।

►নেটে একটু কম পরিশ্রম করেন বলে একটা জনশ্রুতি আছে। আমরা অন্তত অন্যদের তুলনায় আপনাকে একটু কম দেখি। এটা কেন একটু বলবেন?

না, আমি কম পরিশ্রম করি বলে মনে হয় না। আসলে আমি জানি, কতোটুকু পরিশ্রম করতে হবে। আমার সামর্থের সেরাটা বের করে আনতে নেটে কতোটা পরিশ্রম করতে হবে বুঝি। কেউই চায় না, তার সামর্থের সেরাটা বের হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকুক। এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে। আমি সিরিজের সময় একটু কম প্র্যাকটিস করি, ইচ্ছে করেই। কারণ, আমার মনে হয় ওই সময়টা মাথাকে বেশী কাজে লাগানোর সময়। প্র্যাকটিস তো এর আগেই করেছি। আগে যেটা করেছি বা অতিরিক্ত যেটা করেছি, সেটা তো দেখানোর ব্যাপার না।

►আপনার কম অনুশীলন নিয়ে আপনার দু জন কোচের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। তারা একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, আপনি আসলে অনুশীলনে নিজের সঠিক ডেলিভারি বা সঠিক শটগুলো পেয়ে গেলে আর চালিয়ে যান না। আর খুব দ্রুত সঠিকটা ধরে ফেলতে পারেন বলে তারা মনে করেন।

খানিকটা তো এরকমই। আমার কাছে যখন মনে হয়, সব ঠিক আছে; আর প্র্যাকটিস খুব একটা করি না। আসলে প্র্যাকটিস একটা তো আছে বারবার সেরাটা করতে থাকা। আরেকটা হল, নানা চেষ্টা করে সেরাটা আবিষ্কার করা। আমি সেটা করে ফেলতে পারলে আর কেন অনেক সময় ধরে করে যাবো?

►আপনার সেরা পারফরম্যান্স নিয়ে বলুন। সেরা বোলিং কোনটা?

প্রথমে টেস্ট বলি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওই ৭ উইকেট (২০০৮, চট্টগ্রাম)। এ ছাড়াও ভালো অনেকগুলোই। আসলে আমার কাছে সবগুলোই ভালো লাগে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই দুটো ৫ আর ৬ উইকেট। আরও এরকম কয়েকটা আছে। তবে ৭ উইকেটটা সবার আগে থাকবে। ওয়ানডেতে তো ৫ উইকেট পাইনি। চার উইকেট আছে কয়েকটা। তার মধ্যে, কোনটা?

►ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে?

না। ওটার চেয়ে নিউজিল্যান্ডে যে ৪ উইকেট ওদের বিপক্ষে, ওটা বেশী ভালো লাগে। আচ্ছা, টেস্টে ইংল্যান্ডে, ম্যানচেস্টারে যে ৫ উইকেট, ওটাকেও বেশ এগিয়ে রাখতে হবে।

►কন্ডিশনের কারণে এগুলোকে এগিয়ে রাখছেন? উপমহাদেশের বাইরে বলে?

খানিকটা। দক্ষিণ আফ্রিকার যে উইকেটে ওই ৫-৬ উইকেট পেলাম, এর আগে ওখানে বোধহয় কোনো বাহাতি স্পিনার ৫ উইকেট পায়নি। স্পিনাররাই তো ওখানে উইকেট পায় না খুব একটা। ফলে কন্ডিশনের কারণে এগুলো একটু এগিয়ে থাকবে। -খেলাধুলা

এমটিনিউজ২৪/এম.জে/এস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে