শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:৪০:১৭

এই হার কি বলে, হাথুরুর সৌম্য থিউরি কি ঠিক ছিলো?

এই হার কি বলে, হাথুরুর সৌম্য থিউরি কি ঠিক ছিলো?

স্পোর্টস ডেস্ক: শেরেবাংলায় হেড ডাউন করে থাকার কথা ছিল না তার! বরং আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারতেন। বিসিবির সাথে দ্বিতীয় দফায় যে চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন তার মেয়াদকাল যখন ২০১৯ বিশ্বকাপ। তখন তো চিন্তাভাবনায় ছিল শুধু বাংলাদেশই; কিন্তু চাকরিটা শুধু ছেড়েই যাননি, কিছু আযাচিত মন্তব্যে হাতুরাসিংহের ওপর বিরক্ত ক্রিকেটাররা এমনকি বাংলাদেশের দর্শকেরাও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই যেন হাতুরাসিংহেরই বিপক্ষে। তাদের এই হার কি বলে, হাথুরুর সৌম্য থিউরি কি ঠিক ছিলো?

মাশরাফির বক্তব্যও ছিল এমনই। প্রফেশনাল কোচ আজ এক দলের, কাল অন্য দলের কোচ হবেন এটাই স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। জিম্বাবুয়ের হেড কোচ হিথ স্ট্রিকও তো বাংলাদেশের বোলিং কোচ ছিলেন। কই, তাকে নিয়ে নেই তো কোনো উচ্চবাচ্য। বরং যে ক্রিকেটার সুযোগ পান তার সাথে সাক্ষাৎ করে কুশলাদির খবর নেন। এমন সম্পর্কই হওয়া উচিত গুরু-শিষ্যের মধ্যে; কিন্তু হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের উত্থানের পেছনে যার অপরিসীম অবদান, তাকে নিয়ে যেন এখন বিরক্তি!

কাল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও খেলেছেন একটা জেদ নিয়ে। সে জেদের মুখে লঙ্কান দল নয়, ওই হেড কোচই। ব্যাটিং বোলিংসহ প্রতিটা ডিপার্টমেন্টেই উজ্জীবিত পারফরম্যান্স হওয়ার কারণ ওই জেদ। ম্যাচের আগের দিনও খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করেছে। সেটার মূলে ছিল ওই ব্যক্তি। খেলার মধ্যে টিভি স্ক্রিনে একবার হাতুরাসিংহেকে দেখিয়েছিল। গোটা গ্যালারিতে দর্শকেরা হৈ হৈ করে ওঠেন। হাতুরাসিংহও বিষয়টা বুঝে হেসে ফেলেন। আঙুল উঁচিয়ে কী যেন বোঝাতে চেয়েছেন। প্রফেশনালদের অবশ্য এমনটাতে কিছু আসে যায় না। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট-প্রিয় দর্শকদের আবেগ তো একটু বেশি। হয়তো বিষয়টা ভুলতে সময় লাগবে।

কাল এ ম্যাচে বাংলাদেশ যেন আরো তেতে উঠেছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও অমন পারফরম্যান্স করার ছিল অপেক্ষা। করলেনও তারা। ব্যাটিংয়ে মিরপুর শেরেবাংলাতে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিল ৩২৯/৬ রান পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫-তে। বাংলাদেশের কোচ ছিলেন এ হাতুরাসিংহেই। এরপর ওই পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেক ম্যাচেও ৩২৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। ফলে এবার তার কাছে গিয়েই থেমেছেন ৩২০-এ। এরপর বোলিংয়ে যা করেছেন সেটা ১৫৭ রানে অল আউট করে ১৬৩ রানে জয় তুলে নেয়া।

বাংলাদেশের এ জয়ে হাতুরাসিংহের অবশ্য কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং গর্বের বিষয়। যে অবস্থানে দলটাকে তিনি তুলে রেখে গেছেন, সেটা অব্যাহত রেখেছে দলটা। এটা তার ক্রেডিট। এটাও তো ঠিক, শ্রীলঙ্কা গত এক বছরে খুব বাজে অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এ সিরিজই তার প্রথম। ফলে হুট করেই এমন কোনো জাদু তো তার কাছে নেই যে, সেটা দিয়ে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিতে পারবেন সব। ধীরে ধীরে গুছিয়ে ফেলবেন। হয়তো একদিন শ্রীলঙ্কাকেও এগিয়ে নিয়ে একজন সফল কোচ হিসেবে নিজেকে আবারো প্রমাণ করবেন। মাশরাফিও তাই চান। এক মন্তব্যে তিনি হাতুরাসিংহের জন্য শুভ কামনা করেছিলেন। তবে এটাও ঠিক, কাল বাংলাদেশের খেলার ধারাবাহিকতা ছিল দুর্দান্ত। খুব শিগগিরই এত ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ সর্বশেষ যে বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচে জিতেছিল, সেটা কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকে হারানো, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে; কিন্তু সে ম্যাচেও এতটা অল রাউন্ড নৈপুণ্য ছিল না। এক কথায় এ ম্যাচকে কেন্দ্র করে মাশরাফি, সাকিবরা যা চেয়েছিলেন তার যেন শত ভাগই তারা পেয়েছেন। সম শক্তির একটা দলের বিপক্ষে প্রথম ব্যাটিং করে ৩২০ রান সংগ্রহ করে আবার বোলিংয়ে ১৫৭ রানে অল আউট করে বিশাল জয় তুলে নেয়া এটা দলের সামর্থ্যরেও প্রমাণ মেলে। প্রতিপক্ষের ড্রেসিংরুমে বসে হাতুরাসিংহে শুধু দেখলেন। সাবেক শিষ্যদের এমন পারফরম্যান্স চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিইবা করার ছিল তার। বাংলাদেশের এ সাফল্য অব্যাহত থাকুক এটা সম্ভবত হাতুরাসিংহে নিজেও চাইবেন। কারণ ক্যারিয়ারের প্রথম হেড কোচ ছিলেন তিনি বাংলাদেশেরই!
২০ জানুয়ারি ২০১৮/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে