রানা আব্বাস: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ যুব অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে আইসিসি। সেখানে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে মিরাজ জানাচ্ছেন, বিশ্ব-র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার হতে চান। ভিডিওচিত্রটির শেষ দিকে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ‘মিরাজ কি পরবর্তী সাকিব আল হাসান?’
ভবিষ্যতের কথা তোলা থাক। আপাতত মিরাজের সামনে বিশ্বকাপ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে যেটি শুরু হচ্ছে কাল থেকেই। তাতে মিরাজকে নেতৃত্ব দিতে হবে সামনে থেকেই। দলকে নিয়ে যেতে হবে বহু দূর। ঘরের মাঠে খেলা। প্রত্যাশার চাপ সামলাতে পারবেন তো!
মাত্রই ঘামঝরানো অনুশীলন করে ফিরলেন। তবে চোখেমুখে যেন এতটুকু ক্লান্তি নেই। স্বপ্নময় কিশোর দুই চোখ। ঠিকরে বেরোচ্ছে আত্মবিশ্বাস। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই, দুটি প্রীতি ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জয়—মিরাজ আত্মবিশ্বাসী হতেই পারেন।
আর এ কারণেই প্রত্যাশার চাপকে বড় করে দেখছেন না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়ক, ‘অন্য কিছুতে মনোযোগ দিচ্ছি না। আমাদের ওপর সে রকম কোনো চাপ নেই। যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা। মানুষের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকবে। আর আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বলে দিচ্ছে, আমরা ভালো করছি। সবার আশা ও আমাদের প্রতি সমর্থন থাকবে। তবে এতে কোনো চাপ নেই।’
সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলকে নিয়ে যেভাবে আলোচনা হচ্ছে, তাতে প্রত্যাশার ভারে নুয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ায় যায় না। অতি সাবধানী হতে টিম ম্যানেজমেন্ট তাই আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অধিনায়ককে কথা বলতে দিতেই চাইছিল না। কাল ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ শুরু। হোক না ছোটদের বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ তো। এর আগে অধিনায়কের কথা না বলতে হয়! শেষমেশ অধিনায়ক এলেন।
কোচ মিজানুর রহমান অবশ্য বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন অন্যভাবে, ‘চাপের জন্য ঠিক নয়। এ টুর্নামেন্টের জন্য দেড় বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। খেলোয়াড়দের বয়স অল্প। মনোযোগটা যাতে খেলার বাইরে না যায়, সেটাই বলা হচ্ছে বারবার। কথা তো তারা বলছেই। তবে অতিরিক্ত কথা বলে যাতে মনোযোগটা নষ্ট না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ওরা ভবিষ্যতে বড় খেলোয়াড় হবে, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে। ফলে খেলার মতো কথা বলাও তো শিখতে হবে।’
প্রথম ম্যাচেই বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি। বলতে পারেন, প্রথমেই কঠিন ম্যাচ। কিন্তু সত্যিটা হলো, এটাই ভালো হয়েছে। গত এক বছরে দেশ ও দেশের বাইরে প্রোটিয়া যুবাদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের ১৪ ম্যাচের ১১টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। ফলে দারুণ শুরু আশা করতেই পারে স্বাগতিকেরা। চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে শুরু করতে পারলে বাড়তি আত্মবিশ্বাসও মিলবে।
এই ‘বাড়তি’টাতেই শঙ্কা টিম ম্যানেজমেন্টের। বেশি আত্মতুষ্টিতে ভুগে না আবার পা হড়কান যুবারা! এ নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট সতর্ক কোচ, ‘সবার লক্ষ্য ভালো পর্যায়ে যাওয়ার। কাজেই আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। ম্যাচ জিততে যা করার দরকার, সব করতে খেলোয়াড়েরা প্রস্তুত।’
দলের লক্ষ্য দারুণ কিছু করা। ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী থাকবে মিরাজের? আইসিসির ভিডিওতে বলেছেন, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে চান। বিরাট এই স্বপ্ন পূরণ হতে অনেক পথ হাঁটতে হবে তাঁকে। তবে আপাতত নিজেকে প্রমাণ করতে বিশ্বকাপের মঞ্চকে বেছে নিতে চান মিরাজ, ‘এ টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করার সুযোগ আছে। সেরা অলরাউন্ডার হতে চাই।’
মিরাজ যদি হন সেরা অলরাউন্ডার, দলও যদি দারুণ কিছু করে—এবারের যুব বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হতে আর কী চাই! ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যদি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারেন, সেটা হবে পুরো দেশের জন্য বিরাট এক উপহার। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি যে হবে সেটাই! -সূত্র প্রথম আলো
২৬ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস