স্পোর্টস ডেস্ক : অনুর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন এমন অনেক ক্রিকেটার জাতীয় দলের বড় তারকা হয়েছেন। দেশের মাটিতে বসছে অনুর্ধ্ব-১৯ দলের জমকালো বিশ্বকাপ।
অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বিগত দিনে দিনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা মুখ খুলেছেন এবারের বিশ্বকাপের বিষয়ে। নিচে তাদের মতামত তুলে ধরা হলো।
হান্নান সরকার (২০০০ সালের অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ অধিনায়ক) : আমার কাছে মনে হয়েছে এবারের দলটি অনেক গোছানো। সবচেয়ে বড় কথা, খেলোয়াড়রা সবাই একটি দল হিসেবে খেলছে। দুই বছর ধরে এখানে ১৫ থেকে ২০ জন খেলোয়াড়ই ছিল। হয়তো এখন ৫ জন কমে গেছে। এতোদিন ধরে একসঙ্গে খেলার কারণে সবাই সবার খুব ভালো টিমমেট হয়ে উঠেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে। দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই অল্প বয়সেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এই অভিজ্ঞতা এই টুর্নামেন্টে অনেক কাজে দেবে। প্রত্যেক ক্রিকেটারই তাদের ব্যক্তিগত ভালো পারফরম্যান্সের কারণে দলের পারফরম্যান্সও ভালো হচ্ছে। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সবার প্রত্যাশা তাই আকাশচুম্বি। আমিও ভালো কিছুর প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। সাধারণ টুর্নামেন্ট আর বিশ্বকাপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বকাপ নামের মধ্যেই অন্য রকম রোমাঞ্চ আছে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে আমাদের প্রত্যাশা উপরের দিকেই থাকবে। তারপরও বিশ্বকাপ নতুন একটি টুর্নামেন্ট। এখানে নতুন করে খেলতে হবে। ক্রিকেটে ভাগ্য বলে কিছু বিষয় আছে। আশা করি সেইসব এবার আমাদের পক্ষে থাকবে। সবাই মিলে ভালো সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দলটি। আমার মনে হয়, এভাবেই একটি দল হিসেবে তারা মাঠের লড়াইয়ে নামবে। দলে ভালো এবং খারাপ সময় আসতে পারে। ওই সময়গুলো যেন একে অপরে পাশাপাশি থাকে।
নাফিস ইকবাল (২০০২ সালের অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ অধিনায়ক) : গত দুই বছর ধরে এই দলটা ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলছে। আমি পুরো দলটার খেলাগুলো ফলো করার চেষ্টা করেছি। এই দলে অনেক ভালো ভালো ক্রিকেটার আছে। যারা অনেক বড় বড় দলগুলোকে সাম্প্রতিক সময়ে হারিয়েছে । এই দলটি কমপক্ষে ফাইনালে খেলবে বলে আমি আশা করি। আমার বিশ্বাস অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাসের সংমিশ্রণে খুব ভালো দল হিসেব সুনাম কামাবে মিরাজরা।
এই দলে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীলতা নেই। শান্ত টপ অর্ডারে খুব ভালো খেলে। সাইফ দুর্দান্ত ক্রিকেটার। মিরাজ অসাধারণ ক্রিকেটার। আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগের অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন, পেসার মেহেদী রানা ওরা খুব ভালো মানের খেলোয়াড়। সিলেটের জাকির দারুণ ব্যাটসম্যান। এবারের দলটি সবমিলেয়ে সেরা দল বলবো আমি।
সোহরাওয়ার্দী শুভ (২০০৮ সালের অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ অধিনায়ক) : আমরা যে কয়েকবার যুব বিশ্বকাপ খেলেছি, তার মধ্যে এবারের দলটিই বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দেশের মাটিতে খেলা। সেই সঙ্গে হোম কন্ডিশনের সকল সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সামর্থমতো খেলতে পারলেই ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে। গত এক-দেড় বছর ধরে অনেক ম্যাচ খেলেছে যুব দলটি। তারা প্রত্যেকেই অবগত নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে। আগামীকাল (বুধবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা। ওদের বিপক্ষে পর পর দুটি সিরিজেই আমরা বড় ব্যবধানে জিতেছি। এছাড়া সোমবার শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের জায়গায় পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বলবো, আমার মনে হয় হোম কন্ডিশনের কারণে এবার অনেক ভালো সুযোগ আছে।
এই বিশ্বকাপে মিরাজের ভালো কিছু করার যথেস্ট সম্ভাবনা আছে। সে খুব দ্রুতই জাতীয় দলে খেলবে বলে আমার মনে হয়। শুধু মিরাজের কথা বললে ভুল হবে আসলে। দলে যারা আছে সবাই খুব প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এই দলটার বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলবে। তরুণ ক্রিকেটারদের আমি বলবো, তারা যেন চাপ না নিয়ে খেলাটাকে পুরোপুরি উপভোগ করে।
মাহমুদুল হাসান লিমন (২০১০ সালের অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ অধিনায়ক) : আমি যতটুকু দেখছি এই দলে অনেক ভালো মানের ক্রিকেটার রয়েছে। মিরাজ-শান্তর সঙ্গে গত বছর কলাবাগানের হয়ে একসঙ্গেই ক্রিকেট খেলেছি। ওরা দারুণ ক্রিকেটার। শুধু তারা নয় পুরো দলটি ব্যালেন্স একটি দল। আমি খুব আশাবাদী এবারের দলটি নিয়ে। তারা সবার প্রত্যাশা মেটাতে পারবে। মিরাজ এবং শান্তর খুব ভালো সম্ভাবনা আছে টপ স্কোরার হওয়ার। এছাড়া সাইফ হাসান পিনাকেরও ভালো চান্স আছে। মূল কথা দল হিসেবে দারুণ একটি দল এটি ।
দেশের মাটিতে খেলা, ওদের কাছে সবার প্রত্যাশার মাত্রাও একটু বেশি। আমি বলবো, ওরা এই বিষয়টি চিন্তা না করে নরম্যাল ভাবে চিন্তা করে খেললেই রেজাল্ট চলে আসবে। চাপ না নিয়ে উপভোগ করতে বলবো সবাইকে।
এনামুল হক বিজয় (২০১২ সালের অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপ অধিনায়ক) : এবার শিরোপা জেতার ব্যাপারে খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। সবাই খুব ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠের লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুতি শেষ করেছে । অনেকেই প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েছে। আশা করি বিশ্বকাপে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে। গত কয়েক সিরিজে ওরা ভালো ক্রিকেট খেলে যেভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছে। আমার মনে হয় এটা টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ওটা কন্টিনিউ থাকবে। আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রনে বাংলাদেশকেই আমি এগিয়ে রাখবো।
এই দলে মিরাজ অসাধারণ একজন ক্রিকেটার। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সবগুলো গুণাবলীই তার মধ্যে আছে। শান্ত বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক এখন। আশা করি বিশ্বকাপে সে আরও কিছু রেকর্ড করবে। গত কয়েক ম্যাচে তার আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে গেছে। আশা করি টুর্নামেন্টে এটা বয়ে নিয়ে যাবে। সাইফ হাসানও দারুণ ক্রিকেটার। দলের সবাইকে দেখলে মনে হয় সবাই খুব ক্ষুধার্ত।-বাংলা ট্রিবিউন
২৭ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর