স্পোর্টস ডেস্ক : ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে সাকিব আল হাসান যে নিরাপত্তা চেয়েছেন তা বিসিবি প্রত্যাখান করলেও, তাকে সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের অবদানের কথা স্বীকার করে মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলতে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বর্তমান সরকারের কাছে। কোন খেলোয়াড় খেলোয়াড়ি জীবন শেষ না করে রাজনীতিতে যেন যোগ না দেয় সেই বিষয়েও সতর্ক করেন সাবেক অধিনায়ক।
কানপুরেই যে অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি হচ্ছে সেটার আঁচ পাওয়া যায় বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মন্তব্যে। ফাহিম আকুতি জানিয়ে বলেছেন, 'ঘরের মাঠে ও যদি অবসর নিতে পারত তাহলে খুবই ভালো হতো। সবার ভালোবাসা নিয়েই যদি ও বিদায় নিতে পারত ভালো হতো।'
মাঠের হিরো রাজনীতিতে জড়িয়ে এখন ভিলেন। যে কারণে বিদেশে বসে আকুতি জানাতে হচ্ছে শেষ টেস্টটা দেশের মাটিতে খেলার।
সাকিবের দেশের মাটিতে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা সেটা এখন কঠিন সমীকরণ। আওয়ামীলীগ সরকারের এমপি হওয়ায় সাকিব শুধু মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানও মানছেন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিরূপায় বিসিবি।
রাকিবুল বলেন, 'সাকিবের কিন্তু দুইটা রূপ আছে। একটা হলো ক্রিকেটার সাকিব, আরেকটা মানুষ সাকিব। আমরা যদি মানুষ সাকিবের মূল্যায়ন করি, সেখানে কিন্তু অনেককিছুই সুখকর পাবো না। তাকে ফাইন করা হয়েছে শেয়ার মার্কেট কারসাজির কারণে। সাকিবকে এখন বের হতে হবে আইনের মধ্য দিয়েই। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব সিদ্ধান্ত একদম শীর্ষ থেকে আসে। কোনটার কী ইমপ্যাক্ট আছে......'
তিনি যোগ করেন, 'সাকিব যদি শুধু খেলোয়াড় হতো, তবে একটা কথা ছিল। সে একজন সাবেক এমপি। এমন একটা দলের যাদের এখান থেকে সরানো হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ড এই দায়িত্ব নেবে, নিয়ে কিছু একটা করবে, করার ক্ষমতা রাখে আমার মনে হয় না। সরকার যদি মনে করে যে, "না, ঠিক আছে, সে একটা ভুল করেছে, যা হয়েছে হয়েছে, এতোবড় একটা ক্রিকেটার, বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এই কেসটাও এতোটা নির্ভরযোগ্য না, তাকে আমরা ছাড় দিতে পারি কিনা...'
আরেক ক্রিকেটার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'ফ্যানসদের কাছে কিংবা ক্রাউডের কাছে সে কতখানি নিরাপদ থাকবে, সে গ্যারান্টি তো মনে হয় সরকারও দিতে পারবে না। বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশে আসার ঝুকিপূর্ণ আমরা কেনোই-বা বলব, কিন্তু যে একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার বেলায়, এটা মনে হয় সে নিজেও ভালোমতো জানে, এটা ঝুঁকি নেয়া হবে যদি সে এখানে আসে।'
অথচ দেশের ক্রীড়াঙ্গণের মহাতারকার বিদায়টা হওয়ার কথা ছিল রাজসিক। বর্তমান পরিস্থিতি জন্য সাকিব নিজেও দায়ী মনে করছেন সাবেকরা। সতর্ক বার্তা দিলেন বর্তমান ক্রিকেটারদেরও।
রকিবুল বলেন, 'অ্যাকটিভ ক্রিকেটার হিসেবে, ফুটবলার হিসেবে, বা অ্যাকটিভ যে কোনো জায়গায় থাকাকালীন কারোর রাজনীতিতে আসা আমি সমীচীন মনে করি না এবং এখনও আমি বলব আপনাদের মাধ্যমে, এখনো যদি কেউ এমন চিন্তাভাবনা করে থাকেন, খেলা শেষ করবেন, রিটায়ারমেন্টে যান; তারপর আপনার রাজনৈতিক কোনো দর্শন যদি থাকে, সেই দর্শনকে আপনি যদি প্রতিপালন করতে চান, আপনি রাজনীতিতে যান।'
ইশতিয়াক বলেন, 'আওয়ামী লিগের যেভাবে পতন হয়েছে, সেই পার্টির সদস্য হিসেবে, সংসদ সদস্য হিসেবে প্রভাবটা তার ওপরেও পড়েছে। এই জন্যই আমার মনে হয়, তার রাজনীতিতে যোগ দেয়াটা বেশি সমালোচিত হয়েছিল এসব কারণেই।'
তবে বর্তমান সরকারের কাছে একটা অনুরোধ রেখেছেন সাবেক অধিনায়ক রকিবুল, 'আমি একটা অনুরোধ রাখতে পারি, টেস্ট ম্যাচটা সে খেলতে চাইছে, এটা যদি তাকে খেলার ব্যবস্থাটা করে দেয়া হয় এবং তাকে যদি সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিতে পারে ক্রিকেট থেকে, ভালো হতো'
মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার রীতি খুব একটা নেই দেশের ক্রিকেট। সাকিবের সাহসী সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানিয়েছেন সাবেকরা। যদিও তাদের মতে, রাজনীতিতে না জড়ালে আরো কিছুটা লম্বা হতে পারতো সাকিবের ক্যারিয়ার।