স্পোর্টস ডেস্ক : ‘স্কোরলাইন যত জীর্ন-শীর্ন দেখাচ্ছে, আমরা আসলে তত খারাপ দল না’বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবস্থা খারাপ, খুব বেশি খারাপ। কতটা খারাপ? তা চট্টগ্রাম টেস্টের পরিসংখ্যানই (প্রথম ইনিংসে ১৫৯ আর পরের ইনিংসে ১৪৩) বলে দিচ্ছে ব্যাটিংটা কত খারাপ হয়েছে। প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসে করা ৫৭৫ (৬ উইকেটে ডিক্লেয়ার) রানের জবাবে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
শুধু উভয় ইনিংসে দেড়শোর আশপাশে অলআউট হওয়া এবং ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায় ডোবা নয়, প্রোটিয়াদের সাথে নিজের মাটিতে একদম দাঁড়াতে পারেনি শান্তর দল। কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বীতাও গড়া সম্ভব হয়নি। ঘরের মাঠে নিজেদের চেনা জানা মাঠ, উইকেট ও পরিবেশে চরম পর্যদুস্ত যাকে বলে।
আজ বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন ১৬ উইকেটের পতন ঘটেছে। আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে মুমিনুল ও তাইজুলের হাত ধরে দেড়শো পাড় হওয়া বাংলাদেশ, সকালের সেশনটা একটু ভালো কাটালেও, লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে তিন ঘণ্টায় অলআউট হয়ে গেছে।
মানা যেত, যদি প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদার বোলিং তোড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভেসে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। বাস্তবে তা নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪৩.৪ ওভারে ১৪৩ রানে ১০ উইকট হারানো বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন ঘটেছে দুই প্রোটিয়া স্পিনারের বলে।
যার একজন কেশব মহারাজ। ভারতীয় বংশোদ্ভুত এ বাঁ-হাতি এরই মধ্যে স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারপরও তার ট্র্যাক রেকর্ড বাংলাদেশের তাইজুল ইসলামের চেয়ে ভালো নয়। তাইজুলের ৪৯ টেস্টে উইকেট ২০৯। ৪ উইকেট ১২ বার। ৫ উইকেট ১৪ বার। ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট ২ বার। সেখানে ৫৪ টেস্টে কেশব মহারাজের উইকেট ১৮৪ টি। তার ৪ (৬ বার), ৫ (১০ বার) ও ১০ উইকেট (১ বার) শিকারের রেকর্ডটাও তাইজুলের চেয়ে কম।
তারপরও কেশব মহারাজ একাই প্রথম ইনিংস পর্যন্ত এ সিরিজে ফাস্ট বোলার রাবাদার সাথে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। সফলও হয়েছেন বেশ। ঢাকার শেরে বাংলায় ৩টি করে ৬ উইকেট পাওয়া কেশব মহারাজ চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন।
কিন্তু তার সাথে মাত্র ৩ টেস্টে ৩ উইকেট পাওয়া আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার সেনুরান মুথুসামি দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের জন্য রীতিমত আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ান। ৪৫ রানে ৪ উইকট দখল করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় সহজ করে দেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম বার টেস্ট খেলতে আসা দুই বাঁ-হাতি স্পিনারের কাছে খাবি খাওয়া যে কত বড় ব্যর্থতার, গ্লানির তা বলে শেষ করা যাবে না। সম্ভবত ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী হলো আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
এমন এক ব্যর্থতায় মোড়ানো ম্যাচের পর কি বলবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? এ ব্যর্থতার কী কারণ ব্যাখ্যা করবেন তারা? ভক্তরা উন্মুখ হয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কথা শোনার জন্য। কিন্তু সে পথে হাঁটলেন না তিনি তেমন। ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের চেয়ে তিনি ব্যস্ত থাকলেন তার অধিনায়কত্ব নিয়ে।
শুধু বললেন, ‘স্কোরলাইন যত জীর্ন-শীর্ন দেখাচ্ছে, আমরা আসলে তত খারাপ দল না। আমরা ঠিক ১০০-১৫০ রানে অলআউট হয়ে যাবো এমন দল না।’
তবে তার নিজের রান করতে না পারাটাকে ব্যর্থতা বলতে দ্বিধা নেই শান্তর। তার অনুভব, তার আরও মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা উচিৎ। নিজের ব্যাটিং সম্পর্কে শান্তর কথা, টপ অর্ডার হিসেবে তার কাজ রান করা। লম্বা সময় উইকেটে থাকা। দীর্ঘ ইনিংস খেলা; কিন্তু বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না।
‘হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার কাছে মনে হয় আমি ব্যাটার হিসেবে যেহেতু উপরের দিকে ব্যাটিং করি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা ব্যাটার হিসেবে রান করা। যেটা আমার মনে হয় যে, হচ্ছে না। সবথেকে খারাপ জিনিস হচ্ছে, আমার লাস্ট বেশ কয়েকটা ইনিংস দেখেন, ২০ থেকে ৪০ এর মধ্যে আমি আউট হচ্ছি- সেট হওয়ার পর আমি আউট হচ্ছি। যেটা একটা দলের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। এ জায়গাটাতে আমার আরেকটু মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা উচিত।’
তিনি অধিনায়ক পদে থাকতে চাচ্ছেন কি না? অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শান্ত আগেভাগে জানিয়ে দিলেন, এখনো বোর্ড সভাপতির সাথে তার কথা হয়নি। ‘আমার এখনও সভাপতির সঙ্গে কথা হয়নি। কথা হলে আমি বা সভাপতি ক্লিয়ার একটা মেসেজ দিতে পারবো।’
সাংবাদিকদের সাথে ফারুক আহমেদের কথা-বার্তা হয়েছে , সে উদাহরণ টেনে শান্তর ব্যাখ্যা, ‘অধিনায়কত্বের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট কথা বলেছেন আপনাদের সঙ্গে। এ ব্যাপারে এখানে আমি আর কোনো মন্তব্য না করি। হয়তো ক্রিকেট বোর্ড থেকেই একটা (খবর) পাবেন।’