শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:১৫:৪৮

এবার ক্রিকেটে চালু হতে যাচ্ছে যে নতুন ফরম্যাট

এবার ক্রিকেটে চালু হতে যাচ্ছে যে নতুন ফরম্যাট

স্পোর্টস ডেস্ক : ১৬শ শতাব্দীতে ক্রিকেটের আবির্ভাবের পর গত তিন শতকে খেলাটির তিনটি সংস্করণের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে বিশ্ব। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। এর মধ্যে আবার চলতি শতকে কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ১০ ওভার ও ১০০ বলের ক্রিকেটও চালু হয়েছে। 

তবে এগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- আইসিসির অনুমোদন পায়নি। আবার ১০ ওভার কিংবা ১০০ বলের ক্রিকেট নতুন কোনো ফরম্যাটও নয়, বলা যায় এগুলো টি-টোয়েন্টি সংস্করণেই অংশ।

তবে আগামী বছর ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের নতুন একটি ফরম্যাটের। যার নাম দেওয়া হয়েছে টেস্ট-টোয়েন্টি। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে ম্যাথু হেডেন, হরভাজন সিং, ক্লাইভ লয়েড ও এবি ডি ভিলিয়ার্স এই নতুন ক্রিকেট ফরম্যাটের সূচনা করেন। এখানে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির মিশ্রণ স্পষ্ট, তবে ক্রিকেট প্রেমীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কীভাবে খেলা হবে এ ফরম্যাটে? কেনই বা এর নাম টেস্ট-টোয়েন্টি?

 টেস্ট-টোয়েন্টি আসলে কী?
এই নতুন ফর্ম্যাটে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিকে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যই এই ফরম্যাট আনা হচ্ছে। এই ফরম্যাটে প্রতিটা ম্যাচ চলবে একদিন, প্রতিটা ম্যাচে থাকবে টি-টোয়েন্টির মতো লড়াই।
 
২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হবে প্রথম মৌসুম। জুনিয়র টেস্ট-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ নামে শুরু হবে এটি। প্রথম মৌসুম হবে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের নিয়ে এবং আয়োজক থাকবে ভারত। দ্বিতীয় মৌসুম থেকে নারী ক্রিকেটারদেরও সুযোগ দেওয়া হবে।
 
টেস্ট-টোয়েন্টির নিয়ম কী?
মোট ৮০ ওভার খেলা হবে। প্রতিটা দল খেলবে দুটো ইনিংস। প্রতিটা ইনিংস হবে ২০ ওভারের। প্রতিটা ইনিংসের রান পরের ইনিংসে ক্যারিফরওয়ার্ড হবে। ঠিক টেস্ট ক্রিকেটের মতো। প্রতিটা দল এই ফরম্যাটে দু’বার করে ব্যাট করতে পারবে। অর্থাৎ, একটি দল দুটো ইনিংস মিলিয়ে ৪০ ওভার ব্যাটিং করবে। এবং পুরো ম্যাচটাই শেষ হবে একদিনে।
 
ধরা যাক টিম ‘এ’ ও টিম ‘বি’ এর মধ্যে খেলা হচ্ছে। টিম ‘বি’ প্রথমে ২০ ওভার ব্যাট করে ১৭০ রান তুলল। এরপর টিম ‘এ’ ব্যাট করতে নেমে ১৮০ রান করল। তৃতীয় ইনিংসে ফের ব্যাট করতে নামবে টিম ‘বি’। এবার তারা যে রান করবে সেটা যোগ হবে প্রথম ইনিংসের সঙ্গে। ধরা যাক তারা ১৬০ রান করলো। তাহলে তাদের মোট রান গিয়ে দাঁড়াবে ৩৩০। তাহলে চতুর্থ ইনিংসে টিম ‘এ’র জিততে দরকার হবে ১৫১ রান। যদি কোনো দল ২০ ওভারের মধ্যে অলআউট হয়ে যায়, তা হলে তাদের ইনিংস সেখানেই শেষ হবে। সেই ইনিংসে তারা আর ব্যাট করতে পারবে না। পরের ইনিংস আবার নতুন করে শুরু হবে।
 
প্রতিটা দল ১৬ জনের স্কোয়াড নিয়ে তৈরি করতে পারবে। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ৮ জন ভারতীয় ও ৮ জন বিদেশি ক্রিকেটার রাখতে হবে। প্রথম মৌসুমে থাকবে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি। তিনটি ভারতের আর তিনটি অন্য দেশের।
 
ক্রিকেটের এই সংস্করণ উদ্ভাবন করেছেন ওয়ান-ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বাহিরভানি। আগামী প্রজন্মের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করাই এর লক্ষ্য। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বাহিরভানি বলেন, ‘এটি কেবল একটি নতুন লিগ নয়। ক্রিকেটের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে ভবিষ্যৎ গড়ার একটি প্রচেষ্টা এটা। আমরা চাই এ সংস্করণের মাধ্যমে প্রজন্মের ক্রিকেটারদের প্রতিভা সঠিকভাবে উদ্‌ঘাটন ও উদ্‌যাপন করা হোক।’
 
টেস্ট-টোয়েন্টি সংস্করণের পরামর্শক বোর্ডে আছেন ক্রিকেটের কিংবদন্তি স্যার ক্লাইভ লয়েড, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ম্যাথু হেইডেন ও হরভজন সিং। এবি ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘এটি খেলোয়াড় ও দর্শকের জন্য নতুন স্বপ্নের সূচনা।’ হেডেন বলেন, ‘এটি এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের সেতুবন্ধন তৈরি করছে।’
 
নতুন টেস্ট টোয়েন্টি সংস্করণের পরামর্শক বোর্ডে থাকলেও ক্লাইভ লয়েডের মতে টেস্টকে অবহেলা করা হচ্ছে। ক্যারিবীয় এই কিংবদন্তি বলেন, ‘ব্যাপারটা হচ্ছে, আমি টেস্টের ক্রিকেটার। এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। আমার মতে, টেস্টকে অবহেলা করা হচ্ছে বছরের পর বছর। আমার মতে, এই সিস্টেমে নতুন কিছু যোগ করা দরকার। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বা টেস্ট না খেললে সেরা ক্রিকেটার খুঁজে বের করা কঠিন।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে