শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ১০:১৬:৩৭

মাথা ঘুরছিল, তবু খেলেছেন, রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিও করেছেন মাশরাফি!

মাথা ঘুরছিল, তবু খেলেছেন, রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিও করেছেন মাশরাফি!

স্পোর্টস ডেস্ক : গত বছর ডেঙ্গু হওয়ার পর থেকে একটি সমস্যা প্রায় ভোগাচ্ছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। মাথা ঘোরায়, ঝিমঝিম করে, শরীর থাকে দুর্বল। এবার কদিন আগে জ্বরে পড়া ও জ্বর নিয়ে খেলার পর সমস্যাটি পিছু ছাড়ছে না একদমই; ভোগাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। সেই অস্বস্তি নিয়েই করলেন রেকর্ড গড়া শতক!

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে শনিবার ফতুল্লায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ৫০ বলে শতক করেছেন মাশরাফি, যা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের দ্রুততম। ৫১ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে মাশরাফির ১১ ছক্কাও বাংলাদেশের রেকর্ড।

রেকর্ডের কথা অবশ্য জানতেন না মাশরাফি। ম্যাচ শেষে ফতুল্লা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দেশের একটি গণমাধ্যমের কাছ থেকেই জানতে পারলেন রেকর্ডের কথা।

শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের অধিনায়ক, ‍‍‍‘রেকর্ড হয়েছে নাকি? কোনটা!’ বিস্তারিত শোনার পর অবশ্য আবার কণ্ঠ ভাবলেশহীন, ‘রেকর্ডের জন্য তো খেলি না। এসব নিয়ে ভাবিও না। দল জিতেছে এটাই আসল কথা। জয়টা খুব দরকার ছিল।’

‘অনেকে ভাবতে পারেন এসব কথার কথা, সবাই বলে থাকে। কিন্তু আসলেই আমার কাছে দলের জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার সেঞ্চুরিতে দল জিতেছে, রেকর্ডের চেয়ে এটা অনেক বড়।’

শতক করা বা রেকর্ড গড়া যে তার ভাবনায় ছিল না, সেটির প্রমাণ হতে পারে মাশরাফির আরেকটি কথা। শতকের একদম কছে যাওয়ার আগে খেয়ালই করেননি নিজের রান।

‘ফিফটি হওয়ার পর শরীর খারাপ লাগছিল। আমি চাইছিলাম যত দ্রুত দলের রান বাড়ানো যায়। যে ওভারে চারটি ছক্কা মারলাম, সেটায়ই তৃতীয় ছক্কা মারার পর সবার চেঁচামেচি শুনে স্কোরবোর্ডে তাকিয়ে দেখি ৯৭ রান। এরপর একটি সিঙ্গেল, পরে ছক্কায় সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পরও তেমন কিছু মনে হয়নি। রান আরও বাড়াতে হবে, এটাই ছিল চিন্তা।’

৯৮ থেকে বাঁহাতি স্পিনার ওয়াহিদুল আলমকে জায়গায় দাঁড়িয়ে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে শতকের পর আর এগোতে পারেনি মাশরাফি। আউট হয়েছেন ১০৪ রানেই। ৫১ বলের ইনিংসে ১১ টি ছক্কা, ২টি মাত্র চার!

ম্যাচ শেষে শরীরটা ভালো লাগছিল না মাশরাফির। জানালেন, ম্যাচের আগেও ছিল একই অবস্থা।

‘সকালে মাঠে গিয়ে দেখি মাথা ঘোরাচ্ছে। খারাপ লাগছিল। পরে ৫২ রান হওয়ার পর থেকে খুব খারাপ লাগছিল। তবে মাঠে নামলে ওসব বেশিক্ষণ মাথায় থাকে না।’

খারাপ লাগার পরও না খেলার উপায় ছিল না, দলের বাজে অবস্থা। এই ম্যাচ আরও তার ওপর ছিল বাড়তি দায়িত্ব। অসুস্থতার কারণে দলের সঙ্গে ছিলেন না কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী। সিদ্ধান্তগুলিও তাই মাশরাফির নিজেকেই নিতে হয়েছে। ব্যাটিংয়ে ৬ নম্বরে উঠে আসার সিদ্ধান্তটিও যেমন ছিল তারই।

‘তখন দলের যা রান রেট, তাতে সেভাবে এগোলে আমরা হয়ত ২৭০-২৮০ করতে পারতাম। এই ব্যাটিং উইকেটে সেটা যথেষ্ট হতো না। এজন্যই আমি চেয়েছিলাম নেমে যতটা সম্ভব দ্রুত কিছু রান করতে।’

শেষ পর্যন্ত মাশরাফির ভাবনা সত্যি প্রমণিত হয়েছে। কলাবাগানের ৩১৬ রান তাড়ায় শেখ জামাল গিয়েছিল ২৯৫ পর্যন্ত।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও একটি শতক আছে মাশরাফির। ২০০৫ সালে জাতীয় লিগে খুলনার হয়ে সিলেটের বিপক্ষে করেছিলেন ১৪০ বলে ১৩২। মাশরাফির অসাধারণ ইনিংসেই হারের মুখ থেকে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল খুলনা।

সেবারের শতকে ড্র, এবারেরটায় জয়। দল অন্ত:প্রাণ মাশরাফি তাই এগিয়ে রাখছেন এই শতকটিকেই।

‘এই সেঞ্চুরিটিই বেশি ভালো লেগেছে। দল খুব ভালো অবস্থায় ছিল না, একটা জয় খুব দরকার ছিল। আজকের সেঞ্চুরিটি দলকে সেই জয় এনে দিতে সাহায্য করেছে।’

ষষ্ঠ ম্যাচে কলাবাগানের এটি ছিল মাত্র দ্বিতীয় জয়। পয়েন্ট টেবিলে তারা ১২ দলের মধ্যে তলানি থেকে তৃতীয়তে। এর আগে ১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে খেলে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি, তবু জিততে পারেনি দল। এবার জিতিয়েই ছাড়লেন ব্যাটিং কীর্তিতে। মাশরাফির আশা, এই জয় থেকেই ঘুরে দাঁড়াবে দল।

‘কয়েকটি ম্যাচে আমরা জয়ের মত অবস্থায় থেকে পারিনি। তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। খুব ভালো কিছু করলে সুপার লিগে খেলা অসম্ভব নয়।’

কে জানে, হয়ত অধিনায়কের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সই হবে দলের জন্য টনিক। ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক উপাখ্যান রচনা করবে কলাবাগান।-বিডিনিউজ২৪ডটকম
১৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে