রবিবার, ২২ মে, ২০১৬, ১২:২৩:৪১

সাংবাদিক ঘরে, হঠাৎ বাবার ফোনে মুস্তাফিজের মেসেজ, কি ছিল তাতে?

সাংবাদিক ঘরে, হঠাৎ বাবার ফোনে মুস্তাফিজের মেসেজ, কি ছিল তাতে?

স্পোর্টস ডেস্ক: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নবম আসরে প্রথম বারের মতো অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফ কাটার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। সেখানে প্রতিটি ম্যাচেই আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি এই যুবক। স্বভাবত দেশ থেকে অনেক দূরে মুস্তাফিজ। অথচ এই মুস্তাফিজ তিন দিনের জন্যও বাড়ির বাইরে থাকেননি।

ছয় সন্তানের মধ্যে বাড়ির সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে আদরের ছেলেটা যে কখনোই এত দিন বাড়ি ছেড়ে থাকেনি। তবু এই কষ্ট মেনে নিয়েছেন মা। বুঝে গেছেন, তাঁর কোলের ছেলেটা, এই সেদিন মুখে ভাত তুলে খাইয়ে না দিলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা ছেলেটা এখন শুধু তাঁর একার নয়। এই ছেলেটার ওপর এখন সারা বাংলাদেশের অধিকার। এ ছেলেটার জন্য শুধু তিনি নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ প্রার্থনা করেন না; করে বাংলাদেশের মানুষ। আইপিএল, হোক না সেটা শুধুই ভারতের ঘরোয়া এক টুর্নামেন্ট; সেখানেও মুস্তাফিজের ভালো বোলিংকে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ নিজেদের গর্ব হিসেবেই দেখে। মুস্তাফিজ নামটা এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত। আর তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গে যে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নামটাও!

এখন আর দেশে থাকার সময় হয় না মুস্তাফিজের। ফাইভ স্টার হোটেলে হোটেলে কাটে জীবন। যে জীবনে একধরনের আনন্দ অবশ্যই আছে। তা তিনি উপভোগও করেন। কিন্তু কাঁটাচামচ দিয়ে খুব কেতা করে খাওয়ার চেয়ে তাঁর বেশি ভালো লাগে গরু আর মুরগির মাংসের ভুনা। সেটাও দেশি মুরগি হতে হবে অবশ্যই। বাড়ি ফিরলে তাঁর এই দুটি পদ রান্না করা বাধ্যতামূলক। টেবিলে আবার সাজিয়ে রাখতে হবে সেই রান্না। মুস্তাফিজ খাবেন কম, দেখবেনই বেশি। ভিনদেশি খাবার খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে যাওয়া চোখকেও যেন তৃপ্তি দিতে চান। সবচেয়ে বড় কথা, মায়ের হাতের রান্নার চেয়ে সুস্বাদু খাবার পৃথিবীতে আর আছে নাকি!

মুস্তাফিজের পরিবারের কি অবস্থা, কেমন আছেন তারা। কথা গুলো শুনতে  সেখানে হাজির হয়েছিলেন দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিকের প্রতিবেদক। সেই সময় সময়ই তাঁর মুঠোফোনে কী একটা মেসেজ এল। ‘দেখিছেন’, বলে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফোন। মুস্তাফিজ সন্ধ্যার খাবারের একটা ছবি পাঠিয়েছেন মাত্রই—কী সব শাকসবজি! এসব খেয়ে মন ভরে!

মুস্তাফিজুর রহমানতবু মুস্তাফিজ সেই জীবনের সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। বাবা নিজে হিসাব করে বলে দেন, ‘ছেলেডার আর বয়স কত হবিনে? ২০ বছর ৫ মাস! কত কিছু নিজেরে নিজেরে করতি হয়।’ আর কী কী বদলেছে এ সময়টায়? চার শ মণ ধানের গোলা আর মহিষের বাথান সরিয়ে ফেলার ইতিবৃত্ত শোনাতে শোনাতেই আবুল কাশেম বলেন, ‘সে কী যে মাইনষের ভিড়! কী কব!’
দূরদূরান্ত থেকে, প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে এখনো সাহেব-সুবোদের ২২ গজি খেলাটার চেয়ে ‘গেদন’ (দাঁড়িয়াবান্ধা) এখনো বেশি জনপ্রিয়; সেখানকার মানুষও ছুটে আসে। মুস্তাফিজের দেখা তো পরিবারের লোকেরাই এখন পান কপালগুণে, দর্শনার্থীদের যেন এই বাড়ির ইট-চুন-সুরকি দেখেও আনন্দ! ‘ও যেবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেইলে ফেরল, দুই দিনে তো মনে হয় কেবল পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টিই খাইয়েছি বাড়িতে আসা মেহমানদের’—আবুল কাশেমের কণ্ঠে গর্ব খেলা করে।
২২ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে