বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬, ০৪:১৯:১১

যন্ত্রণা আর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন রেনু

যন্ত্রণা আর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন রেনু

নিউজ ডেস্ক: ওমানে প্রায় ২ মাস নিখোঁজ থাকার পর দেশে ফিরেছেন রেনু আক্তার। তবে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা আর বন্দি জীবনের দুঃসহ স্মৃতি। বলেন, দিনের পর দিন একাধিক বাসায় কাজ করে গেছেন বিনা বেতনে। ৩ মাস পর বেতন চাইলেই তার ওপর চলেছে অমানুষিক নির্যাতন। এমনকি ঘরের দরজা আটকে গলায় ছুরি ধরে জবাইও করতে চেয়েছিল গৃহকর্তা। গৃহকর্তা তাকে জানিয়েছিলো, দেশটিতে কর্মরত লোকমান নামে তার এক আত্মীয়ের কাছে আগেই ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সে টাকা স্পর্শ করার সৌভাগ্যও হয়নি তার। উল্টো দেশে তার পরিবারের কাছে বিভিন্ন সময় বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করে ওই আত্মীয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে এয়ার এরাবিয়ানের জি-৯১১৭ ফ্লাইটে করে ওমান থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ গ্রামের রেনু আক্তার।

এর আগে দুই মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো তার। রেনুর স্বামী লাল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড্‌। তিনি বর্তমানে কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই দালালের প্রলোভনে পড়ে ধার-দেনা করে স্ত্রীকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। ঘরে দুই সন্তান, মাথার ওপর ঋণের বোঝা আর এখন যোগ হলো অসুস্থ স্ত্রী। কিভাবে চলবে তার সংসার এই ভেবে দিশাহারা কর্ম অক্ষম লাল মিয়া।         
পারিবারিক সূত্র জানায়, পরিবারের অসহায় অবস্থার মধ্যে লাল মিয়ার ভাতিজির স্বামী ওমান প্রবাসী ভোলার চরবোরহানউদ্দিন উপজেলার টকবগি গ্রামের লোকমান রেনুকে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেয়। সেই মোতাবেক ৬০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে লোকমানের হাতে তুলে দেয়। মেসার্স বিডেক্স ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করে। এরপর গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর ওমানের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। রেনু দেশটিতে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। সেখানে কাজ করার ৫ মাস পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ওই সময় কিছু টাকাও পাঠিয়েছিলেন রেনু।

কিন্তু এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় লোকমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে জানায় তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেই মোতাবেক গত ১৭ই মাচ রেনুর ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিনের পর থেকেই রেনুর সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবারের। দালাল লোকমান দেশে পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতে থাকে।  ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামও রেনুর সন্ধানে কাজ করতে থাকে। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে আবেদনও করে তারা।


ফিরে আসা নির্যাতিত রেনু আক্তার জানান, ওমান যাওয়ার সময় লোকমান তাকে একটি বাসায় কাজের কথা বলেছিলো। যার বেতন হবে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তাকে দুটি বাসায় কাজ করতে হয়েছে। যে বাসায় কাজ নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন সেখানে ভোর থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কাজ করতেন তিনি। এরপর ১১ টা থেকে রাত অবদি কাজ করতেন আরেক বাসায়। এভাবে দিনের পর দিন কাজ করে গেলেও তার বেতন দেয়া হয়নি। তিনমাস পর গৃহকর্তার কাছে বেতন চাইলে তিনি জানান, ৮০ হাজার টাকা দিয়ে আনা হয়েছে। আরও ২-৩ মাস কাজ করার পর বেতন দেবে। বেতন চাইলেই গৃহকর্তা তাকে মারধর করে।

রেনু বলেন, তাকে প্রায়ই জুতা দিয়ে মারতো। এদিকে লোকমানের কাছে গৃহকর্তার দেয়া ৮০ হাজার টাকা চাইলে তা অস্বীকার করে। এরপরই সে গৃহকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চায়। গত ১৭ই মার্চ এয়ারপোর্টে এনে তাকে পাঠিয়ে দিতে চাইলে তিনি দেশে ফিরতে অস্বীকার করেন। রেনু বলেন, বাড়িতে অসুস্থ স্বামী, দুই সন্তান তার ওপর ঋণ করে এসেছি। তাই তিনি নির্যাতন সহ্য করেও সেখানে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাষ্যমতে, এর একদিন পরই তাকে জেলে নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর চলতো নির্যাতন। হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে মারধর করেছে। দেশে আসার আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই মারধর করতো। কারেন্টের শক দিতো। তার শরীরে এখন অসহ্য যন্ত্রণা। একটানা বসে থাকতে পারেন না। আবার দাঁড়িয়েও থাকতে পারেন না।

রেনু আক্তারের সঙ্গে নিয়ে আসা ওমানের আল মাসারা হাসপাতালের কাগজপত্রে দেখা যায় সেখানে তিনি মানসিক রোগী হিসেবে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাতে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে তিনি গত ১৯শে মার্চ ভর্তি হয়েছিলেন আর ছাড়া পেয়েছেন মে মাসের ১ তারিখে। অন্যদিকে দালাল লোকমান ১৯শে মার্চও লালমিয়াকে ফোন করে ফেরত পাঠানো বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারলে রেনুর আশা ছেড়ে দিতে বলে।-এমজমিন

১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে