কিশোরগঞ্জ : শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই চলছিল পুলিশের। ঘরের ভেতরেই ছিলেন ঝর্না রানি ভৌমিক (৩৪)। হঠাৎ জানালা দিয়ে গুলি এসে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে। সাথে সাথে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
নিহত ঝর্না রানির বাড়ি চর শোলাকিয়ায়। তার স্বামীর নাম গৌরাঙ্গ ভৌমিক। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঈদ জামাতের পাশেই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলো।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন ৪ জন।
জঙ্গিরা আকস্মিকভাবে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়।
৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঈদগাহের প্রবেশমুখে তল্লাশির সময় এ বর্বর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৬ পুলিশ সদস্য। গুরুতর অবস্থায় তাদের হেলিকপ্টার করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
শোলাকিয়া মাঠের আড়াইশ' মিটারের মধ্যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারী নিহত হন বলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
ঈদের সকালে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনায় শোলাকিয়া মাঠের জামাতে অংশ নিতে জড়ো হওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।
সকাল ৯টার দিকে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে ইমামতি করতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে পৌঁছেন আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।
ঈদগাহে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিলে তার কাছে বোমাহামলার খবর আসে। এ কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।
পরে প্রধান ইমামের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় জামিয়া ইমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা শোয়াইব ঈদের জামাতে ইমামতি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদ জামাতে অংশ নিতে অনেকেই আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠে আসছিলেন।
এ সময় স্কুল ফটকের কাছে বসানো পুলিশ চেকপোস্ট লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
শোলাকিয়া মাঠ থেকেও ওই শব্দ পাওয়া যায়। মাঠে যাওয়ার পথে সামনে বোমা বিস্ফোরণ এবং মানুষের ছোটাছুটিতে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল বলেও জানান স্থানীয়রা।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক সন্দেহভাজন নিহত হন।
পরে বিজিবি ও র্যাবের একটি দল পুলিশের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয়।
১ জুলাই গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৮ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। এবার ঈদের প্রধান জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যেও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে বোম হামলার ঘটনা ঘটলো।
কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাব কাজ করছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
হামলাকারীদের ব্যাপারে এখনো কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। তবে হামলাকারীদের আটকে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম