এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মাদারীপুরের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনরা। অথচ তারা পান না ন্যায্য পারিশ্রমিক।
মসজিদ কমিটি থেকে সম্মানির অর্থ দিয়ে সন্তানদের ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়াও করাতে পারেন না। পারেন না দুবেলা ভাল খেতেও। এমতাবস্থায় সরকারিভাবে বেতন-ভাতার দাবি তুলেছেন তারা। অবশ্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে কথা হয় হাফেজ এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০ বছর ধরে মাদারীপুর সদর উপজেলার হোগলপাতিয়ার আকন বাড়ি জামে মসজিদে ইমামতি করেন। মসজিদ কমিটি থেকে তাকে প্রতিমাসে সম্মানী দেয়া হয় মাত্র তিন হাজার টাকা। পরিবারে পাঁচ সদস্য থাকায় ইমামতির বাইরে কৃষিকাজের বাড়তি অর্থ দিয়ে কোনোমতে চলছে সংসার।
এদিকে নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাইতুল মামুর জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন মাওলানা আব্দুল মান্নানও বলেন একই সুরে। কমিটি থেকে তাকে দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা। এখানে খাদেম না থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করতে হয় তাকে। ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় সন্তানদের ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়াও করাতে পারেন না। পারেন না দুবেলা ভাল খেতেও।
সামান্য সম্মানী পেলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এমন দায়িত্ব পালন করছেন জেলার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা। এমন পরিস্থিতিতে অহসায়ত্বের কথা জানায় মসজিদ কমিটির সদস্যরা। সরকারিভাবে বেতন-ভাতার দাবি তুলেছেন তারা। জেলা প্রশাসন বলছে, বিষয়টি এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ছোটবড় মিলিয়ে জেলায় সাড়ে ৫ হাজার মসজিদ রয়েছে। শহর পর্যায়ে মসজিদগুলোতে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম থাকলেও গ্রামাঞ্চলের মসজিদে একজনই পালন করেন সব দায়িত্ব।
ঝাউদির এলাকার মসজিদের ইমাম কাজী মোহাম্মদ শাজাহান মোল্লা বলেন, আমার পরিবারে ৫ সদস্য রয়েছে। এই মসজিদ থেকে যে বেতন দেয় তা দিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। আমার সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করাতে পারি না। দুইবেলা ভাল খেতেও পারি না। আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। এজন্য ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের দুরবস্থা।
নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাইতুল মামুর জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ বলেন, এই মসজিদ থেকে আমাকে ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়। এ দিয়ে বর্তমান বাজারে কিছুই হয় না। আমাদের সরকারি বেতন-ভাতা দিলে উপকৃত হতাম।
সিরাজুল হক হাওলাদার বলেন, আমাদের মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা কম। তাই বেশি টাকাও উঠানো যায় না। মাসে ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এই ৩ হাজার টাকা ইমামের হাতে তুলে দেই। আমরা এক্ষেত্রে অনেকটাই অসহায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাদারীপুরের উপপরিচালক এবিএম গোলাম সরওয়ার বলেন, গণমাধ্যমে অনুমতিছাড়া কথা বলা নিষেধ আছে। কোনো তথ্য লাগলে আগে লিখিত জানাতে হবে, পরে অনুমতি পেলে তা দিতে পারবো।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (মিডিয়া সেল) শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা সামান্য বেতন বা সম্মানী পান। তা দিয়ে বর্তমান বাজারে কোনোকিছুই হয় না। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার জেলা প্রশাসন আলোচনা করেছে। চিঠির মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জানানো হয়েছে। বিষয়টি মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের কীভাবে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা যায়। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা করা গেলে সেটিও করা হবে।