মানিকগঞ্জ: লম্বায় ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি, মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ ফুট, ওজন ২ হাজার ৯৪ কেজি। বয়স ৩ বছর ১০ মাস। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় খাইরুল ইসলাম খান্নু’র খামারে ‘রাজা বাবু’ নামের এই গরুটি কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। খাইরুল ইসলাম খান্নু ‘রাজা বাবু’র দাম হাঁকাচ্ছেন ২২ লাখ টাকা। এলাকাবাসী দাবি করছেন, ‘রাজা বাবু’ই এবার দেশের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু।
খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নু জানান, প্রতিদিন ‘রাজা বাবু’র জন্য তার বাজেট প্রায় ২ হাজার টাকা। খাবারের মেন্যুতে থাকে কলা, মাল্টা, কমলালেবু, চিড়া, বেলের শরবত ইত্যাদি। এই ষাঁড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় রয়েছেন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক। নিরাপত্তায় রাতে পুলিশ টহলও দেয়। রাজা বাবুকে দেখতে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন বলেও জানান খাইরুল ইসলাম।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সেলিম জাহান জানান, গত ২৭ জুলাই রাজা বাবুকে দেখতে বরাইদে খায়রুল ইসলাম খান্নুর বাড়িতে যান তিনি। তাকে জানানো হয় রাজা বাবুর বর্তমান বয়স ৩ বছর ১০ মাস। ৬ দাঁতের ওই ষাঁড়ের আকার ও ওজন পরিমাপ করেছেন তিনি। এতে দেখা যায়, গরুটির উচ্চতা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি, লম্বা ৮ ফুট, বুকের পরিমাপ ১০ ফুট, মুখের চওড়া ৩ ফুট ২ ইঞ্চি, গলার বেড় ৫ ফুট, শিং ১ ফুট লম্বা, লেজের দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং ওজন ২ হাজার ৯৪ কেজি অর্থাৎ ৫২ মন। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এই গরুটিই বর্তমানে দেশে আকার ও ওজনে সবচেয়ে বড় গরু।’
খাইরুল ইসলাম খান্নু বলেন, ‘দুই বছর আগে সাভার উপজেলার বারাহিরচর এলাকার কৃষক কুদ্দুস মুন্সীর কাছ থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ১৮ মণ ওজনের এই হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি কিনি। এক বছর লালন-পালনের পর গত কোরবানির ঈদের সময় গরুটির ওজন দাঁড়ায় ৩৯ মণে। ক্রেতারা গরুটির দাম করেছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একটু বেশি দামে বিক্রি করার আশায় গতবার গরুটি বিক্রি করতে পারিনি। এবার গরুটির ওজন বেড়ে হয়েছে ৫২ মণ। এবার এর দাম হাঁকাচ্ছি ২২ লাখ টাকা।’
খামারি খাইরুল ইসলাম খান্নুর স্ত্রী পরিষ্কার বেগম বলেন, ‘বিশাল আকারের এই ষাঁড়ের পরিচর্যা করা খুবই কঠিন। দিনে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বার গোসল করাতে হয়। সারাদিন বৈদ্যুতিক পাখা চালাতে হয়। কারেন্ট না থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়। সারাদিনই চলে গরুর যত্নআত্তি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের খামারে আরও যে ৭টি গরু আছে সেগুলোর যত্ন নেওয়াই দায়। এবার যেন বাড়ি থেকেই গরুটি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারি সেটাই আশা আমাদের।’
খাইরুল ইসলাম দম্পতির মেয়ে ইতি আক্তার বলেন, ‘আমি এসএসসি পাস করার পর ২০১৭ সালে সাভারে শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গবাদি-পশু, হাস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক ৩-মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমি এখন খামারের গরুর সার্বিক দেখাশোনা করি। গরুটি দেখতেও রাজার মতো, খায়ও রাজার মতো। একারণে আমি গরুটির নাম রেখেছি রাজা-বাবু।’
টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার সিংহরাগী গ্রামের ইমরান খান এই রাজা বাবুকে দেখতে এসে বলেন, ‘আমার একটি ছোট গরুর খামার আছে। আমি ফেসবুক গ্রুপে এই গরুর খবর জানতে পেরে গরুটি দেখতে এসেছি। এত বড় গরু কখনই দেখিনি। আমি এখন নিজেও গরুর খামার আরও বড় করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। আমার সঙ্গে আরও ৫ জন এসেছেন এই গরুটি দেখার জন্য।’
ফেসবুকে ‘গরুর হাট’ পেজের এডমিন আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গত কোরবানির ঈদের আগেও এই গরুটি দেখতে এসেছিলাম। আমার ফেসবুক গ্রুপে ও ইউটিউবে ওই গরুর ছবি ও ভিডিও ফুটেজ আপলোড করেছিলাম। তা দেখে অনেক ক্রেতাই এসেছিলেন। এবারও আমি গরুটির ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ আমার গ্রুপে আপলোড করবো যাতে ওই খামারি নিজ বাড়ি থেকেই গরুটি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন।’
সাটুরিয়া থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘রাজা বাবু বিশাল আকৃতির গরু। কেউ শত্রুতা করে এর ক্ষতি করতে পারে। অথবা চুরিও হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আমরা রাজাবাবুর প্রতি নজর রাখছি। বিশেষ করে রাতে টহল পার্টিকে সতর্ক রাখা হয়।’
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে কোরবানির ঈদে ৩৪ মণ ওজনের গরু ‘লক্ষ্মী সোনা’ রাজধানীর গুলশানে ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন খাইরুল ইসলাম।