প্রায় দুই বছর আগে দুই লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেন ফরিদ মিয়া (২৫)। এর মধ্যে চাপ প্রয়োগ করে একাধিকবার আরো যৌতুক নেন। সর্বশেষ বিদেশ যাওয়ার কথা বলে আরো দুই লাখ টাকা দাবি করে পাননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে না জানিয়ে গত ১১ দিন আগে স্ত্রীকে তালাক দেয় কাজী অফিসে। কিন্তু তালাকের কথা আদৌ জানতেন না স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তালাক দিয়ে গত বুধবার ফরিদ মিয়া শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। স্ত্রীর সঙ্গে রাত্রী যাপনের পর চাহিদামতো কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে জামাই আপ্যায়নের সময় পিয়ন বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে নাম ধরে ডেকে হাতে একটি খাম ধরিয়ে স্বাক্ষর নেয়। আগ্রহ হয়ে খাম খোলার পর ভেতরে পাওয়া যায় তালাকের নোটিশ। হতভম্ব হয়ে পড়েন গৃহকর্তাসহ বাড়ির সকলেই। এক পর্যায়ে ফরিদকে বেঁধে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে।
ওই গ্রামেই গৃহবধূর বাবার বাড়ি। ফরিদ মিয়া নান্দাইল পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চারিআনিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। না জানিয়ে তালাক দেওয়া ও পরে প্রতারণা করে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ উল্লেখ করে ফরিদ মিয়াকে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নান্দাইল মডেল থানায় মামলা করেছেন স্ত্রী। পুলিশ ফরিদ মিয়াকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ওই নারীর বাবা বলেন, ফরিদ তার মেয়ের সঙ্গে জঘন্য প্রতারণা করেছে। আমি তার কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
মামলার বিবরণে ফরিদের স্ত্রী অভিযোগ করেন, গত দুবছর আগে তাদের বিয়ে হয়। গত দুই বছরে কয়েক দফায় বেশ কিছু টাকাও দেওয়া হয়। গত চার-পাঁচ মাস আগে যৌতুক হিসাবে দুই লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য ফরিদ তাকে নির্যাতন করতেন। কিন্তু একসাথে দুই লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না বলে তিনি স্বামীর নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করতেন। তারপরও দুই লাখ টাকা আনার জন্য গত ১০ মে তাকে জোর করে বাবার বাড়িতে পাঠানো হয়। গত বুধবার রাতে ফরিদ মিয়া তাদের বাড়িতে আসে। রাতে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো এক সঙ্গে এক ঘরে ছিলেন। পরদিন ডাক পিয়নের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ পান। নোটিশে গত ২৩ মে ফরিদ তাকে তালাক দিয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর হমান আকন্দ বলেন, এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে থানায় এজাহর দিলে সেটি মামলা হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ফরিদ মেয়েটির সঙ্গে অভিনব প্রতারণা করেছে।