মুন্সীগঞ্জ: নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সারা দেশে শ্রমিক-মালিকদের অঘোষিত প্রতিরোধ। সড়কে যানবাহন চলাচল কম। এরই মাঝে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫জনসহ ১০ জন নিহ'ত হয়। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ দুর্ঘটনায় শুধু গাড়িই চুরমার হয়নি, নিমিষে চুরমার হয়েছে কয়েকটি পরিবারের স্বপ্ন।
লৌহজংয়ের কনকসার থেকে দুটি মাইক্রো বাসে ঢাকার কামরাঙ্গী চরের উদ্দেশে ছুটে চলেছে ২১ বরযাত্রী। একই পরিবারের ৫ জনসহ সবাই স্বজন। হাসি-ঠাট্টায় মশগুল সবাই। কনের বাড়িতে গিয়ে কে কি করবে-তা নিয়েও চলছিল খোশগল্প। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার আগেই বিয়ের সে আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে।
শুক্রবার ৭টার দিকে নিহতদের ম'রদে'হ আনা হয় গ্রামের বাড়িতে। এ সময় বরের মা আয়েশা বেগম (৫০) বিলাপ করে বলছিলেন, রুবেলের বিয়ের পর লিজাকে বিদায় দিতাম। কি অইলো রে… আমারে না কইয়্যা চইল্যা গেল লিজারে…। লিজার বিয়েতে নতুন বাড়িঘর তুলে দিতাম…। তাও অইল নারে…। এ কেমন নিয়তি খোদার।
বরের বন্ধু রনি, রাকিব ও আমিনুর জানান, দুই মাস আগেই বিয়ের কথা পাকা হয় মুদি দোকানদার রুবেল বেপারী (২৮) ও ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের মিশা আক্তার (২০) সঙ্গে। গতকাল শুক্রবারই ছিল কাবিন। বর রুবেলকে নিয়ে বন্ধুরা একটি মাইক্রোতে ১০ জন। অপর মাইক্রোতে ছিলেন বরের বাবাসহ ১১জন আত্মীয় স্বজন। শুরু থেকেই বরের মাইক্রোটি সামনে ছিল। কিন্তু ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করতেই পেছনে থাকা মাইক্রোটি ওভারটেক করে এগিয়ে যায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ফুট সামনে। এগিয়ে যেতেই বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা যাত্রীবোঝাই স্বাধীন পরিবহনের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমরে মুচরে যায় মাইক্রোটি। চোখের সামনেই ঝরে পড়ে ৬ টি তাজা প্রাণ, পাশের হাসপাতালে নিতেই আরো দু’জন প্রাণ হারায়। মা'রাত্বক আ'ঘাতপ্রাপ্ত ৩ জনকে ঢাকা হাসপাতালে পাঠালে সেখান থেকে আরো ২ জনের মৃত্যুর সংবাদ আসে।
বরের চাচাতো ভাই আবু সাঈদ জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রুবেল মেজো। আর ছোট ছিল বোন লিজা। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় বরের বাবা ও বোন প্রাণ হারায়। এ ছাড়াও মাইক্রোচালক বাদে নিহ'তরা সবাই বরের আত্মীয়স্বজন।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরযাত্রীবাহী ওই মাইক্রো ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। আহ'ত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। নিহ'তরা হলেন- বরের বাবা আবদুর রশিদ বেপারি (৬০), চাচা আবদুল মফিজ (৫৮), বোন লিজা (১৫), ভাবি রুনা (২৫), ভাতিজা তাহসান (৩), ভাগ্নি তাবাসুস অবনি (৫), মামাতো বোন রেনু (১০), ফুফাতো ভাই জাহাঙ্গীর (৪৫), প্রতিবেশী কেরামত আলী বেপারি (৬০) ও মাইক্রোচালক বিল্লাল (৩৮)। এদের বাড়ি লৌহজং উপজেলার কনকসার বটতলা গ্রামে। বরের বাড়িতে এখন শো'কের মাতম। বিয়ের সানাই বাজার পরিবর্তে এখন চলছে কা'ন্নার রোল। শোকে স্তব্দ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম।
হাষাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাসেদ জানান, দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকামুখী বরযাত্রীবাহী মাইক্রো ও মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের যাত্রীবোঝাই বাসের মুখোমুখি সংঘ'র্ষ হয়। এতে মাইক্রোটি পুরোপুরি ও বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ ও শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও দুজন মা'রা যান।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহ'তদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা ও আহ'তদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হাইওয়ে থানা পুলিশকে মামলার জন্য বলেছেন।