এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মুন্সীগঞ্জের পদ্মা ও মেঘনায় শীতের শুরুতেই বাড়ছে নদীর পাঙাশের দাপট। ইলিশের কাঙ্ক্ষিত দেখা না মিললেও নদীতে ধরা পড়ছে বড় সাইজের পাঙাশ। এতে ভোর থেকেই নদীর পাড়ের হাটগুলোতে বাড়ছে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভিড়।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তে ভোর হতেই জেলে ও ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে হাজির হন। তবে এখন ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকার কথা থাকলেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে। এর পরিবর্তে দেখা মিলছে বড় সাইজের নদীর পাঙাশের।
এতে আড়তে গত কয়েক দিন ধরেই চলছে উৎসবের আমেজ। মূলত নৌকা থেকে মাছের ঝুঁড়ি নামানোর পর পরই ক্রেতা-বিক্রেতা সবার চোখ যাচ্ছে নদীর পাঙাশের দিকে। একেকটি মাছের আকার দেখে বিস্মিত হচ্ছেন সবাই। দামেরও তেমন ওঠানামা নেই, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। আর পাইকাররা অন্যত্র বিক্রির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিলাম-ডাকের মাধ্যমে।
মাওয়া মৎস্য আড়তের সাবেক সভাপতি ছানা রজ্ঞন দাস বলেন, ‘প্রতি বছরই নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাঙাশ বেশি ধরা পড়ে। এবারও ঝাঁকে ঝাঁকে পাঙাশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। জেলেরা নৌকা ভরে ভরে আড়তে পাঙাশ নিয়ে আসছে।’
শুধু মাওয়া মৎস্য আড়ত নয়, জেলার মিরকাদিম, হাসাইল, দিঘিরপাড় বাজারেও বেড়েছে পাঙাশের সরবরাহ। মিরকাদিম মৎস্য আড়তের আড়তদার হাজী রুহুল আমিন বলেন, ‘এত পাঙাশ আগে কখনো দেখিনি। বড় বড় সাইজের পাঙাশে আড়ত ভরে উঠছে। আগে মাঝে মাঝে ধরলেও এখন যেন একেবারে মৌসুম লেগেছে।’
আড়ত ও হাটের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতে পাঙাশের দাপট বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারাও খুশি। বড় আকারের নদীর পাঙাশের স্বাদ নিতে তারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এতে মুন্সীগঞ্জের মাছের ঘাটগুলোতে ভিড় করছেন ঢাকার বাইরে থেকে আসা ক্রেতারাও। তারা বলছেন, নদীর পাঙাশের স্বাদই অন্যরকম। শীতের সময়ে এর স্বাদ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
পাঙাশের এই সরবরাহ আড়তদার ও ক্রেতাদের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখেও। জেলে সুমন হালদার বলেন, ‘ভোরে জাল তুলতেই পানি কেঁপে ওঠে। গত ১৫ দিন ধরে পদ্মায় ইলিশ কম, কিন্তু দুই-তিনটা করে বড় পাঙাশ উঠছে জালে। আড়াই কেজি থেকে ১২ কেজি পর্যন্ত সাইজের পাঙাশ ধরা পড়ছে।’
বকচর এলাকার জেলে আব্বাস মিয়া জানান, তিন দশকের জেলেজীবনে এমন সময় দেখেননি। ইলিশ না থাকলেও ইলিশের জালেই ধরা পড়ছে বড় পাঙাশ। আর পাঙাশের জালে তো প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু এই মাছ।
নদী গবেষকরা বলছেন, পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঙাশের চলাচল নদীর মাঝপথে বেড়ে যায়। তখন জেলেদের জালে বেশি ধরা পড়ে। তবে ইলিশের অনুপস্থিতির এই ফাঁকে জেলেদের বেঁচে থাকার পথ তৈরি হলেও নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য কোন দিকে যাচ্ছে-তাও খেয়াল রাখা জরুরি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকায় সুস্বাদু বড় বড় পাঙাশ প্রচুর পরিমাণে জেলেদের জালে ধরা পরছে। এটা গত ২৫ অক্টোবর ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে। তাই প্রতিদিনই স্থানীয় মৎস্য আড়ত ও হাট বাজারগুলোতে এখন নদীর পাঙাশের ছড়াছড়ি। এতে জেলেরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শেখ রাসেল বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালে মুন্সীগঞ্জসহ ২০ জেলায় নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। এই সময়ে নদীতে পাঙাশের বিচরণ বেড়েছে। মৎস্য অধিদফতর এখন পাঙাশের বংশবিস্তার নিরাপদ করার জন্য পাঙাশের রেনু নিধনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নিরাপদে পাঙাশ আহরণের জন্য বড় খাঁচা ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’