মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৪০:৪০

মুন্সীগঞ্জে আলুর কেজি কত হলো জানেন? মাথায় হাত কৃষকের!

মুন্সীগঞ্জে আলুর কেজি কত হলো জানেন? মাথায় হাত কৃষকের!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে ফের কমেছে আলুর দাম। গত তিন দিন আগেও ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। দাম বেড়েছে শুনে কৃষকরা হিমাগারে আলু বিক্রি করতে এসে কম দাম দেখে ফিরে যাচ্ছেন দলিল নিয়ে। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার কিছু হিমাগার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মাকহাটি হিমাগারের গেটের সামনে কৃষকদের ভিড়। আলুর দলিল হাতে নিয়ে দরদাম করছেন অনেকে। দাম শুনেই নিরাশ কৃষক। তিন দিন আগে আলু ৭০০ টাকা বস্তা শুনে বিক্রি করতে এসেছিলেন অনেকে। এতে যদিও মূলধনের অর্ধেকই পাওয়া যাবে না। তারপরও ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু হিমাগারে আসতেই পাইকাররা আলুর মূল্য বলছেন ৫৫০-৫৮০ টাকা। এতেই নিরাশ হয়ে ফিরছেন দলিল নিয়ে। টংগিবাড়ী উপজেলার নুর সানোয়ারা এবং শরীফ কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

হিমাগারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আলু রোপণ মৌসুমকে সামনে রেখে হিমাগারগুলোতে ব্যস্ততার শেষ নেই। অনেক কৃষক আলু নতুন করে রোপণ করার জন্য বীজ আলু নিতে এসেছেন হিমাগার হতে। অনেকে আবার এসেছেন আলু বিক্রি করতে। শেষ সময় হিমাগার কর্তৃপক্ষের ব্যস্ততার অন্ত নেই।

আলু বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি গ্রামের কৃষক সেকান্দর বেগ বলেন, আলু কিছুদিন আগে ৭০০ টাকা বস্তা ছিল। দাম শুনে বিক্রি করতে এসে দেখি দাম আবার কমছে। তাই বিক্রি না করে চলে যাচ্ছি। দাম আরেকটু বৃদ্ধি পেলে তবে বেচবো।

রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দিন আগে ৭০০ টাকা বস্তা  ছিল। এখন ৫৬০ টাকা। তাই বিক্রি না করেই ফিরে যাচ্ছি। গতবার আলু লাগাইয়া সারের দামই ওঠে নাই। জমির লিজ, বীজ, শ্রমিকের  খরচ তো বাদই। তাই এবার চাষাবাদ কমাই দিছি। গতবারের অর্ধেক করছি।

অপর আলু চাষি বেলাল হোসেন বলেন, সরকার লোকাল বীজের রেট করছে ৩৫ টাকা। অন্যান্য বীজের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর বিদেশ থেকে আমদানি করা আলুর বীজ ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা। আর আমরা নিজেরা কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু বিক্রি করতে পারি না। আমরা জমিতে যে বীজ আলু লাগাই তা কিনতে গেলে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। গতবার আলু বিক্রি কইরা সবই লস হইছে।

কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আলু বিক্রি করতে আসছিলাম পাইকার ৬০০ টাকা বস্তা বলে। দুই দিন আগে ৭০০ টাকা বস্তা ছিল। সরকার বলল ২২ টাকা কেজি কিনবো। আমরাতো ১০ টাকাই ঠিকমতো পাচ্ছি না।

আলু ব্যবসায়ী আশরাফ মিয়া বলেন, এ বছর ১৬ লাখ টাকার আলু কিনে হিমাগারে রাখছিলাম। ১৬ লাখ টাকার আলু ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের চালান সব শেষ। দাম যখন একটু বেশি থাকে সরকার তখন লোক পাঠাইয়া দেয় বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। এখন যে আলু বিক্রি হয় না সরকার ২২ টাকা কেজি  দরে কিনবো কইয়া আমাদেরতো খোঁজ নেয় না।

আলু ব্যবসায়ী হাজী সৈয়দ দেওয়ান বলেন, কিছুদিন আগে আলু নেপালে বিক্রি হইছে। সে সময় আলু বস্তাপতি ২০০ টাকা বেড়ে যায়। এখন আবার কমে গেছে।

অপর ব্যবসায়ী আলাল মিয়া বলেন এ বছর সারা বছরই ৩৫০-৪০০ টাকা বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ৬-৭ দিন আগে দাম বাড়ছিল এখন আবার কমে গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারে রাখা ৫০ কেজি আলুর বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। হিমাগার ভাড়া ৩০০ টাকা। হিমাগার ভাড়া বাদ দিয়ে  কৃষকের মূলধন মিলছে মাত্র ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। কৃষকরা জানান, এই টাকা আলুর খালি বস্তা কিনতে এবং জমি হতে আলু তুলে হিমাগারে আনতেই খরচ হয়ে গেছে। কৃষকের উৎপাদন খরচের খাতায় মিলছে শূন্য।
 
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদন এবং হিমাগার পর্যন্ত নেওয়ার জন্য পরিবহন ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকের সঙ্গে হিমাগার ভাড়া মিলিয়ে খরচ পড়ছে ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকা। এর মধ্যে এ বছর হিমাগারের ভাড়াও বেড়েছে। গত বছর ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ভাড়া ছিল ২১০ থেকে ২৫০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকা। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান আরও বেড়েছে। তাদের হিসাবে এখন প্রতি বস্তায় লোকসান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। 
 
হিমাগার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরজুড়েই হিমাগারে আলুর বস্তার দাম ছিল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। যার কারণে কৃষক আলু বিক্রি করতে হিমাগারে আসেনি। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে আলুর বস্তা ৭০০ টাকা হয়ে যায়। কিন্তু এখন আবার দাম কমতে শুরু করেছে। গতবারের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি আলু হিমাগারে মজুত রয়েছে।
 
এ ব্যাপারে টংগিবাড়ী উপজেলার ধীপুর এলাকার সানোয়ারা এবং নুর কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার হুমায়ূন বলেন, আমাদের এখানে দুটি হিমাগারে এখনো ১ লাখ  ৮০ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। গত বছর এ সময়ে দুটি হিমাগারে ৮০ থেকে ৯০ হাজার বস্তা আলু ছিল। এ বছর এখন গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ আলু মজুত আছে।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর মুন্সীগঞ্জের ৬ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮২ হাজার টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ৩০ হাজার টন। জেলায় মোট ৭৪টি হিমাগার থাকলেও সচল আছে ৬১টি। সেগুলোর ধারণক্ষমতা ৫ লাখ টন।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে জেলায় সচল ৬১টি হিমাগারে ১ লাখ ৯০ হাজার টন আলু রয়েছে। এটা এখন হিমাগার হতে বের হয়ে যাচ্ছে। আসা করি কিছুদিনের মধ্যে হিমাগারে থাকা আলুগুলো বিক্রি এবং কৃষক জমিতে রোপণ করে ফেলবে। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর মুন্সীগঞ্জে ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের বিকল্প শষ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করায় আলু আবাদ গত বারের তুলনায় কিছুটা কমেছে। 

বিদেশ হতে আমদানি বীজ আলুতে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে  হাবিবুর রহমান বলেন, সে ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি। বিকল্প আলু বীজ হিসেবে বিএডিসির বীজ রোপণ করা যেতে পারে। আমাদের পর্যাপ্ত বিএডিসি বীজ রয়েছে, যা ৩৫ টাকা কেজি দরে আমরা বিক্রি করছি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে