শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৩:১৬

স্যার, আমরা কি মানুষ না?

স্যার, আমরা কি মানুষ না?

নারায়ণগঞ্জ: সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা নৌবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত এমএম রানা আদালতকে উদ্দেশ করে বলেছেন, 'আমরা কি মানুষ না?'

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জেরার এক পর্যায়ে রানা এ কথা বলেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী শাখাওয়াত হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ সাঈদের পক্ষে তার আইনজীবী সুলতানুজ্জামান ও সাহাবুদ্দিন জেরা করার সময় কাঠগড়ায় থাকা রানা আদালতকে বলেন, 'স্যার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।'

এসময় রানা আরও বলেন, 'এতজন আসামি একসঙ্গে হওয়ায় অসহনীয় গরম। এছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হাত-পা ব্যাথা করছে। আমরা কি মানুষ না? একদিনে জেরা শেষ না হলে আরেক দিন সময় দেন।' পরে আদালত তার আবেদন আমলে নিয়ে তারেক মোহাম্মদ সাঈদের পক্ষে তার আইনজীবীদের অসমাপ্ত জেরা করার জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সাত খুনের দুটি মামলায় গ্রেফতারকৃত ২৩ আসামির উপস্থিতিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মন্ডলকে দ্বিতীয়বারের মতো জেরা করা হয়। তবে এদিন আসামি, বাদী ও সরকারপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে আগের মতো কোনো বচসা কিংবা উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

সকালে আরিফ হোসেনের পক্ষে অসমাপ্ত জেরা শুরু করেন তার আইনজীবী এমএ রশিদ ভূইয়া। দুপুর ১২টার পর শুরু হয় তারেক সাঈদের পক্ষে জেরা। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন, বাদীপক্ষে সাখাওয়াত হোসেন খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জেরা চলাকালে দুপুর ২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিরতি ঘোষণা করেন আদালত। বিরতির সময় মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষ থেকে সব আসামিদের বিরিয়ানি দেয়া হয়। এসময় বিরিয়ানি না পেয়ে কাঠগড়ায় এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

খাবার না পেয়ে নূর হোসেনকে কাঠগড়ায় চড়-থাপ্পড় মারেন র‌্যাবের বহিষ্কৃত হাবিলদার এমদাদ। এসময় নূর হোসেনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত মর্তুজা জামান চার্চিল ফুঁসে ওঠে হাবিলদার এমদাদ হোসেনকে কিলঘুষি মারেন। এক পর্যায়ে নূর হোসেন হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন, 'ভাবছো কি ছাড় পাইয়া গেছো, জাগারটা জাগায় বয়াইয়া দিমু।'

এ নিয়ে অন্য আসামিদের মধ্যেও হইচই শুরু হলে পুলিশ আদালতের প্রধান দরজা বন্ধ করে দিয়ে কাঠগড়ায় প্রবেশ করে পরিস্থিতি শান্ত করে। সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ও অপর বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।

দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭ জন করে। এখন পর্যন্ত সাত খুনের দুটি মামলায় অভিন্ন ১২৭ সাক্ষীর মধ্যে ১০৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন শেষে জেরা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। তিন দিন পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। যুগান্তর

২৪ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/ইসলাম/নাঈম/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে