মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:১২:৪৬

৭ খুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনকে এখন চেনেন না দীর্ঘদিনের সহযোগীরা!

৭ খুনের প্রধান আসামী নূর হোসেনকে এখন চেনেন না দীর্ঘদিনের সহযোগীরা!

নিউজ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগী দাবি করেছেন, তাঁরা নূর হোসেনকে চেনেন না। গতকাল সোমবার জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে এই বক্তব্য দেন।

দুটি মামলায় ১৯ আসামির উপস্থিতিতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা জবানবন্দি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ পড়ে শোনান রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী খোকন। এরপর আদালত আসামিদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যাপারে জানতে চাইলে, ১৯ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এর মধ্যে ১৪ জন আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো সাফাই সাক্ষী বা লিখিত বক্তব্য না দিয়ে বিচারকের কাছে ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

তবে নূর হোসেনের দীর্ঘদিনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, রহম আলী, মিজানুর রহমান দীপু ও আবুল বাশার আদালতকে বলেন, তাঁরা নূর হোসেনকে চেনেন না। তাঁদের নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবির পাশাপাশি তাঁদের পক্ষে সাফাই হিসেবে আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেন। মামলার ১২ আসামি পলাতক রয়েছেন।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত, পরস্পর যোগসাজশ ও অর্থের বিনিময়ে অন্যান্য র্যা ব সদস্যের সহায়তায় সাতজনকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর নূর হোসেনের পক্ষের আইনজীবী খোকন সাহা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জেরার সময় জানতে চেয়েছিলেন—অপহৃত সাতজনকে হত্যার পর লাশ যেখান থেকে ট্রলারে তোলা হয়েছিল, সেই কাঁচপুর ল্যান্ডিংস্টেশন শীতলক্ষ্যা নদীর কোন দিকে অবস্থিত। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা উত্তর দিয়েছিলেন যে উত্তর পাশে অবস্থিত।

খোকন সাহা আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার, আমি একাধিকবার কাঁচপুর ল্যান্ডিংস্টেশনে গিয়ে দেখেছি, এটি শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত। তদন্ত কর্মকর্তা কাঁচপুর ল্যান্ডিংস্টেশনের স্কেচ ম্যাপ তৈরি না করেই তদন্ত শেষ করেছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জাতির জানা দরকার কাঁচপুর ল্যান্ডিংস্টেশন শীতলক্ষ্যা নদীর কোন দিকে অবস্থিত?’ সঠিক দিক নির্ণয়ে একটি কমিশন গঠনের জন্য তিনি আদালতের কাছে আবেদন করেন। তবে আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন।

সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজেদ আলী বলেন, গতকাল সব আসামিকে তাঁদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ পড়ে শোনানো শেষ হয়েছে। আদালত যুক্তিতর্কের জন্য ২১ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ২৪ অক্টোবর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র্যা বের সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) এম এম রানার বিরুদ্ধে আনীত সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে পড়ে শোনানো হয়।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ তাঁর পাঁচ সহযোগী এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে একটি এবং চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। -প্রথম আলো।
০১ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে