নিউজ ডেস্ক : আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে ‘ভরাডুবি’র আশঙ্কা নিয়েও বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের প্রার্থী ঘোষণা না হলেও বিগত নাসিক নির্বাচনে পরাজিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারই অনেকটা চূড়ান্ত। তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটেরও প্রার্থী।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি নাসিক নির্বাচনে না থাকার কথা জানিয়েছে। ছোট ছোট অন্য দলগুলো এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তবে বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকলে নারায়ণগঞ্জে লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় নারায়ণগঞ্জে।
বিএনপি বলছে, এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার নজির নেই। মোটামোটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৪ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৪ ডিসেম্বর। আর ৫ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। উল্লেখ্য, এবার নির্বাচন হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে ও দলীয় প্রতীকে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে বৈঠকে তৈমূর আলম খন্দকারকে দলীয় প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তৈমূর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। আজ-কালের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিচ্ছি। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনায় তৈমূর আলম খন্দকারের নাম রয়েছে। সব কিছুই পর্যালোচনা করে শিগগিরই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় জানান, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না।’
এদিকে দলের সব নেতা-কর্মীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে কমবেশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নেই। সে ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ কিন্তু বাইরে নয়। এ রকম ঘটনা অতীতে ঘটেনি, তা কিন্তু নয়।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘১৫ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে হয়তো কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আমার নাম প্রস্তাব করা হয়নি। কিন্তু আমি তো মনোনয়ন বোর্ডের কাছে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছি। সার্বিক বিবেচনায় মনোনয়ন বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূলে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে আছেন।’
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের দেওভোগে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পৈতৃক বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলের প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রে। কিন্তু এই তিনজনের কাউকে না দিয়ে কেন্দ্র থেকে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো পক্ষ নেই। পক্ষ একটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা আছে। সে কারণে কমবেশি দ্বন্দ্ব-বিভেদ থাকতে পারে। আমি মনে করি, একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করব। যে যেই পক্ষেই থাকুক না কেন, একটি নির্বাচন শুরু হলে তার আগে অনেক কিছু হয়, অনেক কিছু ঘটে। কিন্তু যখন দল সিদ্ধান্ত দেয়, সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেয়।’
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আমি মনে করি আনোয়ার কাকা একজন খাঁটি আওয়ামী লীগ, উনি আমার সঙ্গে কাজ করবেন। অন্যরা যারা কাজ করতে চান, তাদেরও স্বাগত জানাই।’ আসন্ন সিটি নির্বাচনে শামীম ওসমানের কী ভূমিকা হবে, এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘আমি কী করে বলব ওনার কী ভূমিকা হবে। এই প্রশ্ন ওনাকে করেন। তবে আমি মনে করি, উনি যদি দলের অনুগত কর্মী হন, তবে নিশ্চয়ই দলের নির্দেশ মেনে চলবেন।’
শামীম ওসমানের বাড়িতে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘প্রয়োজন মনে হলে যেতে পারি। উনি আমার ভোটার। আমি যদি দল-মত-নির্বিশেষে বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে যেতে পারি, তাহলে তার বাড়িতে নয় কেন?’
আইভী বলেন, ‘আমি গত ১৩ বছরে সিটি করপোরেশনে দলবাজির ঊর্ধ্বে রেখে কাজ করেছি। দলের সঙ্গে আমি ছিলাম এবং আছি। দল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।’ পরে মেয়র আইভী আনোয়ার হোসেনের বাসায় যান। তবে আনোয়ার হোসেনসহ তার পরিবারের কেউ এ সময় বাসায় উপস্থিত ছিলেন না।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে জেলা বিএনপি সভাপতি ও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। ম্যাডামকেও সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বুঝিয়েছি। এখন ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) যা সিদ্ধান্ত দেবেন তাই হবে। দল বা ম্যাডাম চাইলে শুধু প্রার্থী হওয়া কেন আমি আত্মহত্যাও করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটিতেও আমাকে প্রার্থী করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এলাকার সার্বিক অবস্থাও শীর্ষ নেতৃত্বকে বুঝতে হবে। লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই। বাকশালী শাসন চলছে। মারও খাচ্ছি, আবার মামলাও খাচ্ছি। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। আগে নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সব কিছুই ম্যাডামকে জানিয়েছি। এখন সবকিছু বিবেচনায় তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’
অভিমান করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ম্যাডাম প্রচারণা চালাতে গিয়ে তার গাড়িতে হামলা হয়। ভাঙচুর করা হয়। আমিও সেখানে গুলি খাই। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। এখন নির্বাচন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতিও মাথায় রাখতে হবে। দলকেও বুঝতে হবে, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড আছে কি না। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখা যায় কি না তাও বলতে হবে।’
আগের নাসিক নির্বাচনেও দলের নীতি-নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জানিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আগের বারও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ৫ ঘণ্টা আগে আমাকে প্রত্যাহার করে নেয়। এবারও সেই ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে সর্বশেষ কথা হলো ম্যাডাম যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমার সিদ্ধান্ত।’ বিডি প্রতিদিন
২০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি