তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কথা বলে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তাকে কোনও ধরনের টেনশন না করতে বলেছেন তিনি। শুক্রবার রাতে ফোনে কথা বলার সময় আনোয়ারকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার খবরটিও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে আনোয়ার হোসেনকে দেখতে হাসপাতালে যান শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমান এবং সেলিনা হায়াৎ আইভী।
রাত ১০টায় আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে দেশের ৬১টি জেলার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আনোয়ার হোসেন দলের মনোনয়ন চাননি। এমনকি গত ১৫ নভেম্বর যখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মেয়র পদে আনোয়ার হোসেনের নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্তের সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অনির্ধারিতভাবে সহসভাপতি চন্দন শীলের নাম প্রস্তাব করেন এমপি শামীম ওসমান। তখন সবাই হাত উচিয়ে সমর্থন দিলেও নির্দেশনা না থাকায় জেলা পরিষদের পছন্দের নাম কেন্দ্রে পাঠানো যায়নি। তবে চন্দন শীল পরে নিজেই ধানমণ্ডিতে সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন। তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও চন্দন শীলের বৈঠকে তাকে সমর্থন জানানো হয়। সবশেষ গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন চন্দন শীল। সেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দোয়া চান।
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আনোয়ার হোসেন এখন আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ। তাকে দেখতে শুক্রবার রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
জিএম আরাফাত আরও জানান, শুক্রবার দুপুর অসুস্থ হওয়ার পর দ্রুত তাকে ঢাকার ধানমণ্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রথমে কথা বলেন আনোয়ার হোসেন। পরে প্রধানমন্ত্রীও ফোন করে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, কথোপকথনের শেষে আনোয়ার হোসেন আমাকে জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার কথা বলেন। শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আনোয়ার হোসেনকে জানান, ‘তোমাকে আমরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর সেই আশ্বাসের পর আনোয়ার হোসেনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা যায়। আনোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে ফোনেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘নেত্রী আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ চিরঋণী। এ ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। আপনি আমাকে মূল্যায়ন করে আমাকে ধন্য করেছেন।’
সেলিনা হায়াৎ আইভী জানান, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সিলেটের শাহজালাল ও শাহপরাণ মাজার জিয়ারত করতে শুক্রবার ভোরে সিলেটে যান তিনি। পরে বিকাল ৪টায় জানতে পারেন আনোয়ার হোসেনকে অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে ইসলাম হার্ট সেন্টার ও পরে সেখান থেকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তিনি সিলেট থেকে রওনা দিয়ে শুক্রবার রাতে ঢাকা ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে আনোয়ার হোসেনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে থেকেই আসন্ন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু, আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাবিবুল্লাহ কাঁচপুরীর নাম আলোচনায় ছিল।
তবে যেহেতু আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে সেহেতু এখান কেউ প্রতিদ্বন্দী নাও হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। -বাংলা ট্রিবিউন।
২৬ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম