মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে দল দুটি কেন্দ্রীয়ভাবে নানা ছক তৈরি করছে। ৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরই ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে দুই দল। এরই মধ্যে নাসিকে ঘরোয়াভাবে দুই দলের পক্ষ থেকেই চলছে নানা ধরনের তত্পরতা।
কয়েক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। উঠান বৈঠকসহ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। দুই দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এনসিসি নির্বাচন মনিটর করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য দুই দলেই চলছে কমিটি গঠনের কার্যক্রম।
জানা যায়, পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নামবেন। এরই মধ্যে দলের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন স্থানে প্রচারকালে নেতা-কর্মীদের এ তথ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগীরা নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে যেতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রী নন কেন্দ্রীয় এমন নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে প্রচারণায় নামানো হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই আমরা অংশ নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকেও বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেব না। এ নির্বাচন মনিটরের জন্য একটি টিম গঠন করা হচ্ছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন প্রচারণায় নামবেন কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও তার শারীরিক অবস্থার ওপর।’
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা যারা এমপি-মন্ত্রী নই, তারা সবাই নাসিক নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে থাকব।’
ফসল ঘরে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ : নাসিক নির্বাচনে আটঘাট বেঁধে মেয়র প্রার্থী আইভীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রচারণায় অংশ নিয়ে সরকারের উন্নয়ন ভোটারদের কাছে তুলে ধরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনরায় নিয়ে আসাই হবে তাদের কাজ। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর অবিরাম প্রচার-প্রচারণা চালাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এজন্য ইতিমধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় বসে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নাসিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে প্রধান সমন্বয়ক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও আবদুর রহমানকে ঢাকায় বসে প্রচার-প্রচারণার সার্বিক মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জে সমন্বয় করতে সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শামীম ও নওফেল প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন বলে জানা গেছে।
জনা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পরই কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাঠে নামবেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, এস এম কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, গোলাম রাব্বানী চিনু প্রমুখ। জানা গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে নাসিক এলাকায়। সে কারণে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে প্রধান করে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এ ছাড়া সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ভোট টানতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ইসলামী দলগুলোর প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি ও বেশ কিছু আলেমকে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিগত প্রায় আট বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ, জনপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় নেতারা শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জন ও আগামীর করণীয় এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে থাকব। আশা করি জনগণের রায় নৌকার পক্ষেই থাকবে।’
জয়ের আশায় মাঠে যাবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা : দলের প্রার্থী অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ হওয়ায় বিএনপি হাইকমান্ডের সার্বক্ষণিক দৃষ্টি থাকবে নারায়ণগঞ্জে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জকে এসিড টেস্ট হিসেবে নিয়েছে দলটি। গতকাল বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর তারা নিয়মিত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। অঙ্গসংগঠন ও জেলার সমন্বয়ে এ টিমের পরিধি আরও বাড়ানো হতে পারে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে টিমের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারাও সুবিধামতো সময়ে প্রচারে নারায়ণগঞ্জে যাবেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, টিমের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম ও শহিদুল ইসলাম বাবুল। জানা যায়, স্থানীয়ভাবেও নাসিকের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করবে দলটি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বস্তরের কমিটি গঠন করবে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর, জেলা ও শহর ছাত্রদলের নেতারা স্থানীয় ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টিম গঠন করে প্রচারণা চালাবেন। ছাত্রদল কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের নেতা, যারা নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী, তাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। আর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করবেন।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে বিএনপির শঙ্কা : নাসিক নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, নাসিক নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ হওয়া নিয়ে মানুষের সংশয় এখনো কাটেনি। নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং অফিসার বলেছেন নাসিকের অন্তর্ভুক্ত সব ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। কমিশনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা যদি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাহলে ভোটারদের উত্কণ্ঠা নিশ্চয়ই বৃদ্ধি পাবে।
ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট প্রদান ও তাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নাসিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন কতটা জরুরি, তা রিটার্নিং অফিসারের কথায়ই পরিষ্কার। গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম ভূইয়া, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ। বিডি প্রতিদিন
২৯ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি