নারায়ণগঞ্জ : বিল্লাল হোসেন মজুমদার (৫৮)। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেলগেটের গেটম্যান তিনি। ট্রেনে কেটে আত্মহত্যা করতে রেললাইনে শুইয়ে পড়া এক যুবককে বাঁচিয়ে তিনি এখন বীর। নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে লাইনে শুইয়ে থাকা যুবককে বাঁচান। এক সেকেন্ড দেরি হলে দু’জনেরই মৃত্যু হতো। এই বীরত্ব দেখিয়ে রেলওয়ের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি বিল্লাল। তাকে সম্মাননা জানাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
মো. বিল্লাল হোসেন তালুকদার যুগান্তরকে জানান, ২১ অক্টোবর সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন আউটারের রেলগেটের দু’পাশে রাস্তার ওপর আড়াআড়ি লোহার দণ্ড ফেলে রাখেন। কারণ এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী ২১৭ নং যাত্রীবাহী ট্রেন আসছিল। এ সময় লোহার দণ্ডের দুই পাশে বিভিন্ন যান দাঁড়িয়ে থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই রেললাইন পার হচ্ছিল। তিনি এক হাতে নিশান নাড়াচ্ছিলেন, অন্য হাত দিয়ে পথচারীদের বাধা দিচ্ছেলন।
হঠাৎ ২৫-২৬ বছরের এক যুবক রেললাইনে শুইয়ে পড়েন। ঠিক সে সময় দ্রুতবেগে চলে আসে ট্রেনটি। ছেলেটিকে বাঁচাতে হাতে থাকা নিশান উড়িয়ে ট্রেন চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না। তাই নিজের জীবন বাজি রেখে লাইনে শুইয়ে থাকা যুবকটির হাত শক্ত করে ধরে টান দিয়ে লাইন থেকে সরিয়ে নেন। এক সেকেন্ড দেরি হলে নিশ্চিত দু’জনেরই মৃত্যু হতো।
বিল্লাল হোসেন তালুদকার বলেন, ‘মাত্র ১ সেকেন্ডের ব্যবধান। আমি নিজেও জানি না কি করে যুবকটিকে বাঁচালাম। বয়স্ক মানুষ, শরীরেও তেমন জোর নেই। মনের জোরেই তাকে টান দিয়ে লাইন থেকে সরিয়ে আনি। এরপর যুবককে তার মায়ের হাতে তুলে দিই। তার মা বলেছে, তার ছেলে বাড়ি থেকে রাগ করে চলে এসে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। যুবকের বাড়ি চাষাঢ়া মাসডাইল গ্রামে।’
পুরো ঘটনাটি চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের লাগানো সিসি ক্যামেরায় বন্দি হয়। চাষাঢ়া স্টেশন মাস্টার আমিনুল ইসলাম ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে বিল্লাল হোসেন কেঁদে ফেলেন।
ঢাকা রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. মুজিবর রহমান জানান, ‘আমরা যখন ক্যামেরার ফুটেজ দেখছি তখনই চমকে উঠছি। রেলওয়েতে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। এমন ঘটনায় সাহস করে কেউ এগিয়েও আসে না। তাই এ সাহসী গেটম্যানকে সম্মানিত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কাজী রফিকুল আলম বলেন, ভিডিওটি এখনও দেখিনি। তবে বিল্লালের বীরত্বের কথা শুনেছি। তাকে নিশ্চয় পুরস্কৃত করা হবে। সে রেলওয়ের গৌরব।
’৮৪ সাল থেকে রেলে আছি জানিয়ে বিল্লাল হোসেন বললেন, ‘এর আগেও ১৯৮৭ সালে গোপীবাগ রেলগেট এলাকায় আলাউদ্দিন নামক ডাকাতের সঙ্গে লড়েছি। ওই ডাকাত রেলের লোহার মূল্যবান সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল।
ডাকাতের সঙ্গে লড়েছি, কিন্তু সরঞ্জাম নিতে দেইনি। ডাকাত কুপিয়েছে আমায়, এক মাস হাসপাতালেও ছিলাম। এত কিছু করছি রেলওয়ের জন্য। এখনও আমার চাকরিটি অস্থায়ী। শুরুতে মাসে ২৪শ’ টাকা পেতাম। পরে ৫ হাজার টাকা হয়। এখন ৭ হাজার ৭শ’ টাকা পাচ্ছি। এ টাকা দিয়ে রাজধানীতে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই স্ত্রীসহ পরিবারের ৪ সদস্য চাঁদপুর কচুয়ার টেগুরিয়া গ্রামে থাকে। -যুগান্তর।
০১ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম