সেলিম জাহিদ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এই মুহূর্তে বিএনপির কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়াসহ দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ২৮টি ওয়ার্ডে বসবাসকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মাঠে নামানোর জন্য ১০৪ জন কেন্দ্রীয় নেতার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদের শেষ ভাগে এবং নিরপেক্ষ নতুন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ২০ দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কোন ওয়ার্ডে কোন অঞ্চলের মানুষ বেশি থাকে, সে বিষয়ে দলীয় লোকদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে অন্য অঞ্চলের মানুষ বেশি। করপোরেশনের সাড়ে চার লাখ ভোটারের বড় একটি অংশ মুন্সিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার।
এ কারণে বিএনপি শহরের যে এলাকায় যে অঞ্চলের মানুষ বেশি, সে এলাকায় ওই অঞ্চলের নেতাদের সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করে নির্বাচনী প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ১০৪ জন কেন্দ্রীয় নেতার প্রাথমিক তালিকা করে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও ইকবাল হাসান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান (রিপন), আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখের নাম আছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, এর বাইরেও দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের জয় নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে জনসংযোগে নামার সাংগঠনিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও মহিলা দলের পৃথক টিম গঠন করার কথা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত বিএনপির সমন্বয় কমিটির একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রতিদিন গণসংযোগের জন্য দলের ঢাকা মহানগর কমিটি থেকে ১০০টি এবং মহিলা দল থেকে ১০টি টিম চাওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানতে বিএনপি সংখ্যালঘু নেতাদের নিয়ে পৃথক প্রচার টিম করার প্রস্তুতি চলছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া ও সঞ্জীব চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতা গৌতম চক্রবর্তীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৭ জন নেতা আছেন। তাঁদের দিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার চালানোর প্রস্তাব দলীয় প্রধানকে দেওয়া হয়েছে।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সর্বাত্মক সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠে কতটা সুযোগ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা কোনো নির্বাচনই দুর্বলভাবে নিইনি। কিন্তু পুলিশ, র্যাব যদি আরও শক্তভাবে নামে, তাহলে তো আমরা অসহায়।’
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে তাঁরা গতানুগতিক ধারার বাইরের একজন বিতর্কমুক্ত ও সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাকে প্রার্থী করেছেন। এটা ভোটারদের বেশি আকৃষ্ট করবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জের মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাত খুনের মামলায় যে ঝুঁকি নিয়েছেন, তা নারায়ণগঞ্জের মানুষের মনে দোলা দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, মাঠের কর্মসূচি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার পর কয়েক বছর ধরে দলীয় তৎপরতা কার্যত ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাজধানীর কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন সাংগঠনিক এ বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ওঠার একটি উপলক্ষ হতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার যোগ্যতা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নেই। তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিএনপি এই নির্বাচনে যাচ্ছে।
দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, স্থানীয় সরকারের আগের নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনও যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে পরবর্তী আন্দোলন বা জনমত গঠনে এ নির্বাচন বড় ইস্যু হবে। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটা আলোচনায় আনার জন্য নতুন উপলক্ষ তৈরি হবে। আর এ নির্বাচনে জিতলে প্রমাণিত হবে বিএনপি এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, মানুষ ভোট দিতে পারে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনেরও এটা শেষ নির্বাচন। শেষটাও খারাপ করলে তারা কলঙ্ক নিয়ে যাবে। এ জন্যই আমরা নির্বাচন করছি।’ -প্রথম আলো
০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম