বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:০২:৪৮

নারায়ণগঞ্জে ভোটারদের আশ্বস্ত করলেন সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জে ভোটারদের আশ্বস্ত করলেন সাখাওয়াত

মহিউদ্দিন অদুল : প্রতীক বরাদ্দের পর গতকাল মঙ্গলবার ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার দ্বিতীয় দিন। দুপুর দেড়টা। বঙ্গবন্ধু সড়কের একটি সংযোগ সড়ক ধরে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. শাখাওয়াত হোসেন খান রেললাইনে গিয়ে উঠেন।

দু’পাশের দোকানিদের কাছে ভোট চেয়ে হাঁটছিলেন। হ্যান্ডশেক করছিলেন। করছিলেন কোলাকুলি। রেললাইনের পাশে আবদুর রহমান নামে এক মধ্যবয়সীর কাছে ভোট চাইতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন-‘নিজের ভোট নিজে দিতে পারবো তো?’ তাকে আশ্বস্ত করলেন সাখাওয়াত।

এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাখাওয়াত বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন এলাকা ঘুরছি। অনেক জায়গায় ভোটাররা এই একই প্রশ্ন করছেন। তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে কিনা জানতে চান। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সে ভীতি তাদের মধ্যে কাজ করছে।

স্থানীয়দের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন বলেন, সেলিনা হায়াৎ আইভী জনপ্রিয় হলেও এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হতে পারে। আর ইতিপূর্বে মহানগরের বাইরে ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কারণে ভোটারদের মধ্যে এই ভীতি এখন প্রবল। আর এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শঙ্কা তো রয়েছেই।

এর আগে গতকাল সকালে মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াতের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সড়কের জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে। সকাল ১১টার আগে তিনি সেখানে পৌঁছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সেখান থেকে যান জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচনী প্রচার ও জনসংযোগে আমাদের ভুলত্রুটিগুলো সংশোধন করে কাজ করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন কথা বলতে গেলে খুন করা হয়। গুম করা হয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা যা দেখেন ও শুনেন তা লিখতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জে ৭ মার্ডারের মতো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে জড়িত আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বারের পক্ষ থেকে সেই খুনের বিরুদ্ধে আইনজীবী হিসেবে এখন পর্যন্ত আন্দোলন করে যাচ্ছেন শাখাওয়াত। আইভীকে মানুষ পছন্দ করলেও তিনি যে নৌকায় উঠেছেন তা মানুষ পছন্দ করে না বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।  

সমাবেশে মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ নির্বাচনকে আমরা চ্যালেঞ্জ ও টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি। জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। মাদক, অস্ত্র, খুন, গুম, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। গত নির্বাচনে আইভী শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণসহ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার সিকিভাগ কাজও হয়নি। মেয়র নির্বাচিত হলে শীতলক্ষ্যা সেতু করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে। এ শহরে স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শীতলক্ষ্যায় ব্রিজ করার চেষ্টা করা হবে বলে উল্লেখ করেছি। আর নারায়ণগঞ্জকে রাজশাহীর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমৃদ্ধ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করবো বলে জানিয়েছি। এছাড়া তার ভোট চাওয়ার বেশির ভাগ সময় জুড়ে পেছনে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর মিছিল সঙ্গে ছিল।

শহীদ মিনারের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিএনপি নেতা তৈমূর, গয়েশ্বর, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবুল কালামসহ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সে স্থান ত্যাগ করেন। স্থানীয় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সেখান থেকেই জনসংযোগে নামেন সাখাওয়াত। বঙ্গবন্ধু সড়কের পশ্চিম পাশের ফুটপাথ দিয়ে রাস্তার হকার, পথচারিদের কাছে লিফলেট বিলি করেন। জড়িয়ে ধরেন পথচারিদের। ভোট প্রার্থনা করেন। পেছনে নেতাকর্মীদের স্লোগান চলছিল।

বেশকিছু দূর গিয়ে তারা বঙ্গবন্ধু সড়ক নামে অপর একটি সংযোগ সড়কে গিয়ে পড়েন। তা ধরে পশ্চিম পাশের রেললাইনে গিয়ে উঠেন। দু’পাশের দোকানি ও বাসাবাড়িতে গিয়ে ভোট চান তিনি। ভোটারদের অনেকে তাদের শঙ্কা প্রকাশ করে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবার বিষয়ে অভিযোগ-অনুযোগও তুলে ধরেন তার কাছে। কিছুদূর গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে রেললাইনের পূর্বপাশ ধরে জনসংযোগ করে ফিরে আসেন তিনি। আবার ওঠেন একই সংযোগ সড়কে। সেখানে জনসংযোগের কিছুটা বিরতি দেন নেতাকর্মীরা।

দুপুরের পর তিনি গিয়ে হাজির হন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক নেতকর্মীর ভিড়। মাঠের জনসংযোগের চেয়ে অফিসে নেতাকর্মীদের ভিড় বেশি কেন জানতে চাইলে যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, মাঠে নেতাকর্মীরা তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দুপুরের কিছুটা বিরতি নিয়ে অনেকে অফিসে এসেছে। এখানে জড়ো হয়ে তারা আবার ছড়িয়ে পড়বে। এমজমিন
৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে