নিউজ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)-এর দ্বিতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে এ ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণের সবগুলো ভোটকেন্দ্র সকাল হতেই প্রস্তুত হয়ে আছে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্র ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এক সাংবাদিক জানান, নির্বাচনি এলাকার প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় পুলিশি ব্যারিকেড রয়েছে। কোনও যানবাহনকে নির্বাচনি এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দূরপাল্লার মানুষদের ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তায় প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন বাসের অপেক্ষায়। কেউ ঢাকা যাবেন, কেউ যাবেন বাইরে। কিন্তু রিকশা ছাড়া কোনও যানবাহন চলাচল করছে না।
চাষাড়া মোড় থেকে অপর একজন সংবাদিক জানান, সকাল ৮টায় নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডের মাসদাইরের আদর্শ স্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সকাল সাড়ে ৯টায় ১৬নং ওয়ার্ডের দেওভাগ শিশুবাগ এলাকায় ভোট দিবেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন সকাল ৯টার পর।
শফিকুল ইসলাম আরও জানান, ভোর হতেই দেওভাগে মেয়র প্রার্থী আইভির বাসার সামনে সাংবাদিকরা জড়ো হয়েছেন। সাখাওয়াত হোসেনের বাসার সামনেও সাংবাদিকরা ভিড় জমিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভোটগ্রহণের পুরোপুরি প্রস্তুত।
নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বহিরাগতদের অবস্থানসহ যানবাহন চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ইসি। সরকারও এ বিষয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
ভোটেরে আগের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন- সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটগ্রহণ ও ভোটারদের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এ নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভোটের আগের দিন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তারা ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী হলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা এবং বিএনপি মনোনীত অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে। জাতীয় পার্টি কোনও প্রার্থী দেয়নি। দলটি ডা. আইভীকে সমর্থন করেছে। এদিকে ২০ দলীয় জোটভুক্ত দু’টি দল প্রার্থী দিলেও শেষ দিকে এসে তারা বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ও ইসলামী ঐক্য জোটের মুফতী এজাহরুল হক (মিনার) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের প্রার্থীরা ফল মেনে নেওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিএনপি নির্বাচন বর্জন না করার ঘোষণাও দিয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদ ছাড়াও ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ৩৮জন ও ২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদের নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয়ভাবে। তবে দুই দলের মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন সব ওয়ার্ডেই।
ইসির হিসাব অনুযায়ী, ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৪টি। এর মধ্যে ৪টি অস্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষের (বুথ) সংখ্যা ১ হাজার ৩০৪টি। ভোটগ্রহণে চার হাজারের বেশি নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো নাসিকে ভোট হয়েছিল। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভ করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালের ২৩ জুন দেশের সপ্তম সিটি করপোরেশন হিসেবে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করে নাসিক। সিদ্ধিরগঞ্জ, কদমরসূল ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে ২৭টি ওয়ার্ডে বিন্যস্ত করে ৫ মে গঠিত হয় নাসিক। ৭২.৪৩ বর্গ কি.মি. আয়তনের এই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার। -বাংলা ট্রিবিউন।
২২ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম