মনজুর আহমেদ অনিক, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে বুবলি বেগম (৪৫) নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বুবলি বেগম নওগাঁ জেলার পাঁচচাটিয়া এলাকার সেলিম মিয়ার স্ত্রী। তিনি এনআর গার্মেন্টসের ৭ তলার ৮ নম্বর লাইনের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন।
শ্রমিকরা জানান, গত তিনদিন ধরে এনআর গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিল। মালিকপক্ষ এতে অস্বীকৃতি জানালে বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। থেমে থেমে চলতে থাকে সংঘর্ষ।
দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদীসহ অন্তত ২৫ জন সাধারণ শ্রমিক আহত হন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে আহতদের নগরীর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ফতুল্লা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মুহাম্মদ মঞ্জুর কাদের বলেন, শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা এলোপাতাড়ি দৌড়াতে থাকে। এ সময় ওই নারী শ্রমিক আহত হন। পরবর্তীতে তিনি মারা যান। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। ঘটনার পর বিসিক শিল্প নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুব উন নবী জানান, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা করলে ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশ শ্রমিকদের উপর কোন আঘাত করেনি। শ্রমিকরা পুলিশের উপর হামলা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত আর্মড ব্যাটালিয়ান পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর (সোমবার) একই দাবিতে ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত ফকির গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় অর্ধশত সাধারণ শ্রমিক আহত হন। পরে কারখানার মালিক, বিসিক কর্তৃপক্ষ ও শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠক করে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সূত্র: আমাদেরসময়.কম