এমটনিউিজ২৪ ডস্কে : গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলাস্থ রসুলপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ২০২৩ সালের বিদায়ী ছাত্রীদের সম্বর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠান হয়।
এতে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম বাবু প্রধান অতিথি এবং ডাঃ সায়মা আফরোজা সভাপতি, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ এনাজুর রহমান, প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব গাজী ওসমান গনি, স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু সাঈদ এবং সভাটি পরিচালনা করেন মাওলানা কামাল হোসেন ও মাওলানা ইয়াহিয়া। তবে প্রধান অতিথি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।
অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব গাজী মোঃ খলিলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ রতন মিয়া, ডাঃ মোঃ মশিউর রহমান। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিজ্ঞ চিকিৎসাবিদ সায়মা আফরোজা তার বক্তব্য মার্জিত ও প্রাণজল ভাষায় ব্যক্ত করেন। তিনি গ্রাম বাংলার এ রকম আলোকিত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়ায় নিজেকে গর্ববোধ করেন।
তিনি বলেন, ছাত্রীদের উপস্থাপনা, কোরআন তেলাওয়াত তার হৃদয় স্পর্শ করেছে। আড়াইহাজারের অভিভাবক দেশের আইন প্রণেতা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবুকে ‘আড়ইহাজারের বিশ্বস্থ রাহাবার’ এবং ডাঃ সায়মা আফরোজাকে ‘আমার দেখা এক মহিয়সী নারী’ স্বরচিত কবিতা উপহার দেয় ছাত্রী লুবায়না তাসনুবা।
জনাবা ডাঃ সায়মা বলেন, তাকে সম্বোধিত কবিতায় নিজেকে গর্বিত না করে বাংলাদেশে সর্বত্র শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়–ক এ আহবান জানান। দুঃখী মানুষের সেবক সায়মা আফরোজা জানান, তাকে ডায়নার সাথে তুলনা করা মানায় না।
তবে ছাত্রীদের শিক্ষা অর্জন করে গুণবতী নারীদের ন্যায় উজ্জ্বল ভবিষৎ গড়ার প্রতি তিনি গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি মাদ্রাসার বিভিন্ন দাবী প্রসঙ্গে বলেন, এমপি মহোদয়ের সেগুলো দৃষ্টিগোচর করা হবে এবং দ্রæততার সাথে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামবাংলা সরলমনা মহিলাদের প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সায়মা আফরোজা জানান, অনুষ্ঠানের নানাবিধ উপস্থাপনা, আবৃতি শোনে মুগ্ধ। বিদায়ী ছাত্রী মানপত্র পড়তে আবেগে আপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছে এটা শিক্ষা জীবনের আকুতি। অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানেই এ আবেগ প্রকাশ হয় না। তিনি শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠানের অর্জন উত্তর উত্তর এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেন। এলাকাবাসী প্রচেষ্টা প্রসারিত করে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত এবং এর সৌরভ প্রসারে নিবিদিত থাকবেন। শেষে তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব গাজী ওসমান গণি আল্লাহতায়ালার প্রতি তিনি সকল প্রচেষ্টার কৃতিত্ব প্রকাশ করেন। তিনি জানান, গ্রামের নৈতিক অবক্ষয় দূর করে উন্নত চরিত্রের মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অনেক কিছু না করতে পারলেও কিছুটা হলেও এগিয়েছি। এর পেছনে গ্রামের সাদা মাঠা মানুষগুলোর অবদান এবং সার্বিকভাবে এমপির সহযোগিতা বিশেষ উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি সভায় আসার জন্য সকলকে বিশেষ করে প্রবীণ নেতা এনাজুর রহমানকে ধন্যবাদ জানান।
গতকালের অনুষ্ঠানে শুরুতে শুভেচ্ছা স্বাগতম অতিথির আগমন গান, ‘যদি রাত পোহালে শুনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, খুঁদে নাটিকার মাধ্যমে ‘গিবৎ গাওয়া ভাল নয়’ ইসলামী সংগীত, ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আবৃতি উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।
মাদ্রাসাটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরলস প্রচেষ্টায় এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ৮ শতাধিক ছাত্রীদের এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে সকল স্কুল মাদ্রাসায় ১ম স্থান, জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৫ জন, ৩টি টেলেনপুল বৃত্তি পেয়েছে। ২০২২ সালে আড়াইহাজার উপজেলায় মাদ্রাসায় ১ম স্থান, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন উপজেলায় ও পরে জেলাও শ্রেষ্ট শিক্ষক নির্বাচিত হন, ভোকেশনাল শাখা থাকায় এতে আকৃষ্টতা বেশী। কৃতিত্ব অর্জনে বহির্বিশ্বেও পদার্পন করেছে। কৃষি ডিপ্লোমায় অধ্যায়নরত মাকসুদা আক্তার মাননীয় এমপি মহোদয়ের হাতেগড়া আড়াইহাজার কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সস্টিটিউট থেকে স্কলারশিপ পেয়ে ডেনমার্কে অধ্য্য়ানের সুযোগ পেয়েছে। এ মাদ্রাসার ছাত্রীরা পাস করে অধিক হারে দেশের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করে উজ্জ্বল ভবিষৎ গড়ে তুলছে।
রসুলপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষায় আদর্শ, হাতের কারুকার্য, ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় জেলার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। মাদ্রাসাটি ১৯৯৩ সালে জড়াজীর্ণ থেকে বিশাল ভবনের মালিক। অজপাড়া গায়ে অবস্থান করলেও আজ প্রতিষ্ঠানটি আদর্শ মানুষ গঠনে আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যেমন নিষ্ঠার সাথে সাধারণ পাঠ দান তেমনি ভোকেশনাল থাকায় কারুকার্য শৈলিক শিল্পীর দক্ষতা অর্জনে নিয়োমিত কার্যক্রম। ইতিপূর্বে শিক্ষা বোর্ডের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেও পাঠ দানের কৌশল নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। শ্রেণী শিক্ষার পূর্বে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, এসেমবিøতে অংশ নেয়া, আদর্শ শিক্ষায় ব্রতী হওয়ার শপথ এবং পিটি করা নিত্যদিনের কাজ। শ্রেণী কক্ষে শিক্ষকদের নিয়োমিত শিক্ষা দানের পূর্বে ছাত্রীদের মনোযোগী হবার পরিবেশ করা, পাঠ দানে পড়া আদায়, মেধায় দুর্বল ছাত্রীদের প্রতি আলাদাভাবে অগ্রগতির প্রচেষ্টা চালানো, শ্রেণী শিক্ষকদের প্রতি পড়া সম্পন্ন করার নজরদারী সব মিলিয়ে ‘মানুষ নামে আসে জ্ঞানী হয়ে বেরিয়ে যায়’ এ নীতিতে পরিচালনা কমিটি তদারকী করে আসছে। এটা সম্ভব হয়েছে নীতি নির্ধারণী ব্যক্তির অকুতোভয় সাহস, সীমাহীন ধৈর্য্য, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব, নিষ্ঠাবান আচরণ, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়া, মেধা বিকশিত ব্যক্তিকে সঠিক মূল্যায়ন। জ্ঞানের আলো উদ্ভাসিত করে জাতিকে আরো খেদমত করার পরিচালনা পর্ষদ সকলের দোয়া কামনা করেন।