মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৩০:০৮

‘ভাইরে বাঁচাইতে ঘরেই জুমার নামাজ পড়াইছি’

‘ভাইরে বাঁচাইতে ঘরেই জুমার নামাজ পড়াইছি’

নারায়ণগঞ্জ থেকে : ‘স্যার ভাইয়েরে যখন ওরা হত্যার হুমকি দিলো, তখন তারে বাঁচাইতে শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তেও মসজিদে যাইতে দেই নাই। ঘরেই জুমার নামাজ পড়াইছি। খুনের আগে বাড়ির সামনে অচেনা লোকজন এসে ঘুরাঘুরি করতো। মানুষজন এসে ভাইয়েরে সতর্ক কইরা যাইতো। কিন্তু শেষ রক্ষা হইলো না। নূর হোসেনের কথায় র‌্যাবের লোকেরা নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণ করে। নেতৃত্ব দেয় র‌্যাবের তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানা। ওই সময় নূর হোসেনের লোকেরা র‌্যাবকে সহযোগিতা করছে।’

গতকাল নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতে এসব কথা বলেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আবদুস সালাম। গতকাল আবদুস সালামসহ মোট ৮ জন নতুন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। এই আটজন সাক্ষী ছাড়াও ইছুব নামে অপর এক সাক্ষীকে জেরা করেন ৩৫ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা। এ নিয়ে মোট ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং জেরা সম্পন্ন হলো। আদালত আগামী ২রা মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।

সাক্ষ্য প্রদানকালে আবদুস সালাম আরও বলেন, ২০১৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তার কাজ নিয়ে নূর হোসেনের খালাত ভাই মোবারকের সঙ্গে নজরুলের দ্বন্দ্ব হয়। এরপরই নজরুলকে হত্যার হুমকি দেয় নূর হোসেনের লোকজন। ওই ঘটনার পর নজরুলের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই নজরুল ভাই আমার (আবদুস সালাম) যাত্রাবাড়ীর বাসায় থাকতো। ওই মামলায় ২০১৪ সালের ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন তিনি। দুপুর দেড়টা থেকে পৌনে ২টার মধ্যে নজরুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়।

তিনি বলেন, গাড়িতে উঠেছি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রাবাড়ী পৌঁছাবো। বাসায় এসে ভাত খাবো। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার  হলে তার মোবাইলে ফোন করলে মোবাইল বন্ধ পাই। এরপর ভাবির কাছ থেকে জানতে পারি, তিনিও নজরুল ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছেন। এরপর আমি নারায়ণগঞ্জ কোর্টে আসি এবং পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের র‌্যাব-১১’র অফিসে যেতে বলেন। কোর্টে এসে শুনি র‌্যাবের লোকজন কোর্ট থেকেই নাকি নজরুল ভাইকে অনুসরণ করছিল। ওই সময় অনুসরণকারীকে নজরুল ভাইয়ের সহযোগীরা ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছিল।

পরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থাকা কিছু মাটি কাটার শ্রমিককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি ৩টি গাড়িতে করে আসা র‌্যাব সদস্যরা ২টি প্রাইভেট কার থেকে ৬-৭ জনকে তুলে নিয়ে গেছে। সাক্ষ্য শেষে আবদুস সালামকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি বলেছেন আপনার ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনি কী কোনো জিডি, মামলা বা অভিযোগ করেছেন কী না? জবাবে তিনি বলেন না। এজাহারে ও তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে র‌্যাবের কথা বলেননি। জবাবে তিনি বলেন এসপি স্যারের কাছে বলেছি।

আপনি নজরুল ইসলামের আপন ভাই এবং বাদীর দেবর হন তাই আদালতে মিথ্যে সাক্ষী দিয়েছেন, জবাবে সালাম বলেন সত্য না। আবদুস সালাম ছাড়া অন্য যারা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তারা হলেন-নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটন এবং গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ও জব্দ তালিকা তৈরিকারী বন্দর থানার সাবেক এসআই আবু তালেব, নিহত সিরাজুল ইসলামের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম, সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী বন্দরের চর ধলেশ্বরী এলাকার আশ্রয় প্রকল্পের বাসিন্দা ফকির চাঁন, বন্দরের শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা ১৬ বছরের কিশোর ইব্রাহীম, ইবনে হাসান, নিহত আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকারের ভাতিজা অ্যাডভোকেট অরুনাভ সরকার এবং নিহত চালক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছোট ভাই আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া নিহত অপর গাড়িচালক ইব্রাহিমের ভাই ইছুবকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।  -এমজমিন

২৬ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে