মঙ্গলবার, ০৩ মে, ২০১৬, ০৩:১৩:৩৬

'নূর হোসেনরে আনেন, আমি ওরে মাইরা ফালামু'

'নূর হোসেনরে আনেন, আমি ওরে মাইরা ফালামু'

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় ১২৭ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ এ পর্যন্ত ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। কেউ এখন পর্যন্ত সাক্ষী দিতে এসে আদালতে নূর হোসেনের ফাঁসি দাবি করেনি। তবে সোমবার এই প্রথম একজন বিধবা আদালতে দাঁড়িয়ে তার স্বামী হত্যায় ওই ঘটনায় দায়ের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ফাঁসি দাবি করেছেন। আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাত খুনের সঙ্গে নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার।

অঝোরে আদালতে দাড়িয়ে কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, 'আমার স্বামীকে যেভাবে নির্মমভাবে মেরেছে নূর হোসেন, তাকেও সেভাবে মারবেন স্যার। আমার মা নাই, বাবা নাই। আমার দু'জন মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি বাবার বাড়িতে থাকি। আমার সন্তানরা এতিম হয়ে গেছে। আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। এসব খুনিদের ফাঁসি দেন স্যার। মোর্শেদা বেগম বলেন, 'তিন বছর ধরে বিচার চলতাছে। এখনও চলতাছে। আমি তো স্যার বাচচাই মইরা গেছি। এদের স্যার মাইরা ফালান। ফাঁসি দেন স্যার।'

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী কইছিল- এরশাদ শিকদারও রক্ষা পায়নি, সাত খুনে জড়িতদের ফাঁসি হবে। মোর্শেদার কান্নার সময় আদালতে এক হৃদয় বিদারক দৃশের সুষ্টি হয়। আইনজীবীরা স্তব্ধ হয়ে যান।

প্রাথমিক পর্যায়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিবৃতকর জেরা করলেও পরবর্তীতে মোর্শেদার কান্নায় তারাও আর বিবৃতকর কোনো প্রশ্ন করেননি। সাক্ষ্য শেষে আদালত থেকে বের হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মোর্শেদা আক্তার বলেন, আমার কাছে নূর হোসেনকে এনে দেন। আমি ওরে মাইরা ফালামু। নূর হোসেন আমার স্বামীকে মারছে। পরে মোর্শেদার আত্মীয়স্বজন তাকে আদালত থেকে নিয়ে যান। এদিন মোর্শেদাসহ সাক্ষী দেন নিহত নজরুল ও আইনজীবী চন্দন সরকারের প্রাইভেটকার উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে ১১টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে গ্রেপ্তার ২৩ আসামির উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পরে আদালত ৯ মে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।

সাক্ষ্য প্রদানকারীরা হলেন- রাজধানীর গুলশান নিকেতন থেকে নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়ি উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুজ্জামান, সাত খুনের ঘটনার পর গাজীপুর থেকে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের প্রাইভেটকার উদ্ধারকারী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুল হক, কনস্টেবল বদরুল আলম, ওই এলাকার মোক্তার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন, গুলশান থানার কনস্টেবল সেলিম রেজা।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুন মামলার আদালতের নির্ধারিত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন আজ পর্যায়ক্রমে সাক্ষ্যগ্রহণ করছে আদালত। একই সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে কিভাবে জেনেছেন, সে বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরাও করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।- যুগান্তর

৩ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে