ঢাকা : ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের স্কুলশিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি ওই ঘটনায় কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা তিনদিনের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এতে স্বরাষ্ট্র সচিব, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বন্দর থানার ওসি এবং ইউএনওসহ বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বুধবার এ আদেশ দেয়।
আদেশের অনুলিপি দ্রুত সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে উঠবস করানো হয়।
এ ঘটনা মিডিয়ায় এলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
শিক্ষামন্ত্রী সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজন সম্মানিত শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করবে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানো অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমার মনে হয়, প্যানেল কোড যদি ঠিকমত ঘাটা হয়, তাহলে নিশ্চই পাওয়া যাবে এটা একটা অপরাধ।
আইন মন্ত্রী বলেন, এ অপরাধের জন্য আমার মনে হয় যারা জড়িত নিশ্চয় তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়াটা আমরা কোনোমতেই বরদাশত করবো না।
ওই প্রধান শিক্ষককে মঙ্গলবার স্কুল কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করে। বরখাস্তের চিঠির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৮ মে স্কুলের এক ছাত্র মারধরের সময় আল্লাহ-রাসুলের নাম মুখে নিলে তিনি ধর্ম নিয়ে কটূ কথা বলেন। পরে ওই ছাত্রের মা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করলে শুক্রবার স্কুলে বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
ওই বৈঠকের সময় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। তারা শিক্ষককে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানকে খবর দেয়া হয়। তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন।
ওই সময় শ্যামল কুমার ভক্ত প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সেলিম ওসমান বলছেন, ওই শিক্ষককে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এভাবে মাফ চাওয়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
১৮ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম