নিউজ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জে বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি অভিযোগ করেন, তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরাতে এক বছর আগে থেকেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। গত বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তাকে মারধর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল। এরপর আরো কয়েক দফা তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শুক্রবারের ঘটনার পর আমি ভীতসন্ত্রস্ত। প্রতিটি সেকেন্ড আতঙ্কে থাকি। কখন ম্যানেজিং কমিটির লোকজন আমাকে মেরে ফেলে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করায় তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও সালাম। দেশবাসীকে কোটি কোটি সালাম। মাউশির তদন্ত কমিটির ফল বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিচার পাব কিনা, জানি না। যদি আমি সৎকর্ম করে থাকি, যদি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা না হয়, তাহলে আমি বিচার পাব। যেই ছাত্রকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই ছাত্র স্বীকার করেছে আমি ধর্ম সম্পর্কে কিছু বলেনি। তার জবানবন্দি আমি তদন্ত কমিটির কাছে চেয়েছিলাম। সেটা আমাকে এখনও দেয়া হয়নি।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শ্যামল কান্তি বলেন, গত ১৩ই মে স্কুল উন্নয়ন কমিটির মিটিং-এর নামে আমাকে ডাকে। সেখানে গিয়ে দেখি এজেন্ডা ভিন্ন। ম্যানেজিং কমিটির লোকজন আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনেন। একজন ছাত্র এই অভিযোগ করেছে জানিয়ে আমাকে প্রধান শিক্ষককের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। এক পর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলেন কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মিজু। শিক্ষকের অভিযোগ, পুরো ঘটনাটিই ছিল সাজানো নাটক। ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই ছাত্রকে দিয়ে বলিয়ে তার ওপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটাক্ষ তিনি করেননি। শ্যামল কান্তি বলেন, এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আমি। ১৭-১৮ বছর ধরে আছি। টিনশেড এবং একেবারে জলাবদ্ধ ভূমি থেকে শুরু করে স্কুলকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন তো স্কুল বেশ চোখে পড়ে, তাই হয়তো তাদের (ম্যানেজিং কমিটির) লোভ বা লালসা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করার চাপ দিচ্ছিল। ম্যানেজিং কমিটি চাইছে আমি এ পদে না থাকি। কারণ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুর ইসলামের বোন পারভীন আক্তারকে প্রধান শিক্ষক করতে অনেকদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। এ জন্যই এ নাটক সাজানো হয়েছে। এছাড়া স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অন্য তিন সদস্য মতিউর রহমান মিজু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পিয়ন মতিউর রহমান ও সাবেক লেন্স কর্পোরাল মোবারক হোসেন মিলে আমাকে পদচ্যুত করার জন্য সবাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছিল। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ই মে আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, মিটিং চলাকালীন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়, হেড মাস্টার ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন। আপনারা সবাই স্কুলে আসেন। অল্প সময়ে এলাকাবাসী মাঠে জমা হয়। এক পর্যায়ে মোবারক আমাকে মারধর করতে থাকে এবং জোর করে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতির স্বাক্ষর নেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকজন স্কুল ঘেরাও করে। এ সময় পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রশাসনের লোকজনও আসেন। তারা যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না তখন এমপিকে ফোন করেন স্থানীয় নেতারা। বিকাল ৪টার দিকে এমপি স্কুলে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং স্থানীয় লোকজনের কাছে ঘটনা শুনতে চান। এ সময় ম্যানেজিং কমিটির লোকজন এমপিকে বারবার ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের বিষয়টি বলছিলেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, একই সময় স্থানীয় লোকজন এমপিকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নানা অনিয়মের কথা বলেন। কিন্তু মিজান, মোবারক এমপিকে রুমে নিয়ে আসেন। এমপি স্থানীয় লোকজনকে শান্ত থাকতে বলেন। এই ঘটনার পুরো বিষয় না শুনেই তিনি আমাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। ভয়ে আমি রুমের বাইরে এসে কান ধরে উঠবস করি। এমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির লোকজন এমপিকে ভুল বুঝিয়েছেন। তিনি এখানে আসার কথা নয়। এই স্কুলের ব্যাপারে তেমন খোঁজখবরও রাখতেন না তিনি। এমপিকে তারা ব্যবহার করছে।-এমজমিন
২১ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ