নেত্রকোনা : পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রেম। এরপর রেজিস্ট্রি ছাড়াই বিয়ে। এখন সেই ছাত্রী দুই সন্তানের মা। কিন্তু কপালে সুখ সইল না ইতির। প্রায় ৬ বছর পর বিয়ের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।
ঘটনাটি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামের। ওই গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার মেয়ে ইতি আক্তার।
জানা যায়, ২০১০ সালে ইতি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ওই সময় ইতি আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের বকুল মিয়ার ছেলে জামাল মিয়ার প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। তখন উভয় পরিবার তাদের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ইতি আক্তারের বিয়ের বয়স না হওয়ায় রেজিস্ট্রি ছাড়াই স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলে জামাল ও ইতির দাম্পত্য জীবন। তাদের সংসারে মাহি (৪) ও ইভা (১) নামে দুই মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সেই দাম্পত্য জীবন বেশিদিন টেকেনি। বিয়ে রেজিস্ট্রি না হওয়ার সুযোগ নিয়ে স্বামী জামাল মিয়া ইতিকে প্রায়ই অশালীন ভাষায় গালাগাল করতেন।
একপর্যায়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সহযোগিতায় স্বামী জামাল ইতি আক্তারের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। সেই সঙ্গে ইতি আক্তারকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে মোটা অংকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
এতে ইতি অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। একইসঙ্গে ইতিকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করা হয়নি বলে আর ঘর-সংসার করবে না বলেও হুমকি দেন স্বামী জামাল।
সম্প্রতি বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে ইতিকে চাপ দেন জামাল মিয়া। টাকা এনে দিতে অসম্মতি জানালে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইতির ওপর চলে অমানসিক নির্যাতন।
গত ১২ আগস্ট ইতিকে বেধড়ক মারধর করলে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গ্রামের মাতবররা কয়েক দফা সালিশি বৈঠক করেও সমাধান করতে পারেননি। শেষে বাধ্য হয়েই আইনি সহযোগিতার দারস্থ হতে হয় ইতিকে।
গত ১৩ আগস্ট ইতি আক্তারের মা রহিছা আক্তার বাদী হয়ে মেয়ের জামাই জামাল মিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়া থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গৃহবধূ ইতি জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী জামাল মিয়াসহ তার পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই তাকে নিয়ে আর ঘর-সংসার করবে না এবং বিয়ের স্বীকৃতিও দেবে না বলে হুমকি দেয়।
তিনি জানান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় মাতবরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তার সন্তানদের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ।
বলাইশিমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর তালুকদার মল্লিক বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার সালিশি বৈঠক করেও ব্যর্থ হয়েছি। রেজিস্ট্রি ছাড়া বাল্যবিয়ে দেয়ার কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অভিরঞ্জন দেব বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
১৭ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম