নেত্রকোনা থেকে : নেত্রকোনা জজ কোর্টে বিচারকাজ চলাকালীন শাহেরা খাতুন (৫৫) নামে এক নারী বিচারককে লক্ষ্য টাকা ছুড়েছেন। গতকাল সোমবার বিচারকাজ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে।
পরে ওই নারীকে পুলিশি হেফাজতে দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের হেফাজতে থাকা ওই নারীকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে আদালত থেকে কোর্ট পুলিশ তাকে আটক করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পূর্বধলা সহকারী জজ আদালতে একটি বিচারকার্যক্রম চলছিল। এ সময় হঠাৎ শাহেরা খাতুন কোর্টে প্রবেশ করে বিচারকের সামনে পাঁচটি ১০০ টাকার নোট ছুড়ে মারেন।
ওই টাকা বিক্ষিপ্তভাবে টেবিলের ওপর ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘যেখানেই যাই সেখানেই শুধু ঘুষ আর ঘুষ। ঘুষ ছাড়া এখন আর কোনো কাজ হয় না। সব খানে সবাইকে যখন ঘুষ দিতে হয়। আমি তো সবাইকে চিনি না তাই আপনাকেই এ টাকা দিলাম, ওদের দিয়ে দেন।’
এ সময় এজলাসে আইনজীবী, পেশকার, বিচারপ্রাথী, বাদী, বিবাদীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এতে কিছু সময়ের জন্য বিচারকাজ বিঘ্নিত হয়। ঘটনার সময় বিচারকের আসনে থাকা সহকারী জজ মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দ্রুত এজলাস ত্যাগ করে নিজের কামরায় চলে যান।
একপর্যায়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছুড়ে দেয়া টাকা জব্দ করে ওই নারীকে আটক করে মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পর যথারীতি আবারও বিচারকাজ শুরু হয়। ওই নারীর বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার মেঘশিমুল গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০/১২ বছর ধরে শাহেরা খাতুন মানসিকভাবে অসুস্থ। তার স্বামী আব্দুল কাদের আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। সে ঢাকায় থাকে। বর্তমানে শাহেরা নিজ বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেত্রকোনা কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. সাইফুল ও জিয়াউল হক জানান, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি কোর্টে প্রবেশ করে অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন। তাকে আটক করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. নাজমুল বলেন, পুলিশে হেফাজতে থাকা শাহেরা খাতুনকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ঘাঘড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এমদাদুল হক ও রুক্কু মিয়া নামে তার ভাগ্নের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন মানুষ ও ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
শাহেরার ভাগ্নে রুক্কু মিয়া জানান, তার খালা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। তাকে বহুবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি।
এমটিনিউজ/এসএস