নেত্রকোনা: 'আমি তো মোবাইল বন্ধ রাখি। সারাদিন মোবাইলে ফোন আসে। সবাই শুধু কথা বলতে চায়। জানতে চায় আমি কী করি, কোথায় থাকি এসব। আমার সাথে গল্প করতে চায়। এজন মোবাইল বন্ধ রাখি। না হলে কাজ করতে পারি না।'
কথাগুলো নেত্রকোনার রিপন নামের এক যুবকের। ফেসবুকে হুট করে জনপ্রিয় হয়ে গেছেন এই রিপন। এখন আর সেই ধকল সামলাতে পারছেন না। নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভিডিও। অর্থাৎ রিপন সোশ্যাল মিডিয়ায় 'রিপন ভিডিও' নামে পরিচিত হয়ে গেছেন। মাত্র ক'দিনে ফেসবুক অনুসরণকারীর সংখ্যা পৌনে ৩ লাখ।
আকস্মিক এই জনপ্রিয়তার উৎস কী? তাকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন এক বন্ধু। সেখানে ভুল উচ্চারণে নিজে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে ভিডিও বানিয়ে পোস্ট করতেন। এই ভিডিও ক্রমাগত ছড়াতে থাকে। রিপনের ভিডিওগুলো মজা করে দেখে নেটিজেনরা শেয়ার দিচ্ছেন যার কারণে এগুলো ক্রমাগত ছড়াচ্ছে। এই হাসি ঠাট্টার কারণেই রিপন এখন নেত্রকোনা সদরে আলোচিত।
রিপন পেশায় কাঠমিস্ত্রী। আসবাবপত্র তৈরির দোকানে কাজ করেন। এর ফাঁকে মোবাইলে ফেসবুক দেখতেন। বুঝে উঠতে পারতেন না যে, আসলে ফেসবুকে কী লেখা রয়েছে। পড়েছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু পড়তে পারেন না।
অকপটে সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে রিপন বলেন, 'আমি ফেসবুকে কিছু পড়তে পারি না। আমার বন্ধুরা ফেসবুক খুলে দিয়েছে। যখন কাজ থাকে না, তখন আমি ছন্দ বানাই। মাস দুইয়েক আগের ঘটনা, একদিন মনে হলো ছন্দগুলো ভিডিও করি। ভিডিও করেছিলাম। পরে মনে হলো ফেসবুকে দেই। ফেসবুকে দেওয়ার পরে মানুষ সেগুলো নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।'
গত ঈদে একটি ভিডিও ছেড়েছিলেন। সেই ভিডিওতে নিজের বাসায় ঈদের দাওয়াত দিয়েছিলেন বন্ধুদের। ভিডিওটি হাসি ঠাট্টায় সোশ্যাল মিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই তাকে গ্রামের কয়েকজন পেইজ খুলে দেন। পেইজটাও নাকি তারাই চালান। আর রিপন মাঝেমধ্যে নিজের ভিডিও আপলোড করেন।
জনপ্রিয়তার যে ধকল রয়েছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। বললেন, 'দিন নাই রাত নাই সবসময় আমার মোবাইলে ফোন আসে, কোনো কাজ করতে পারি না। তাই এখন মোবাইল বন্ধ করে রাখি। কিন্তু রেহাই নেই। মানুষজন দেখা করতে চলে আসে। ঢাকা থেকে অনেকজন ইন্টারভিউ করে নিয়ে গেছেন। ইউটিউবে সেসব প্রকাশ হয়েছে। এখনও আসছে।'