নেত্রকোনা: সংসারে সুখ ফেরাতে ও বাবা-মাহারা দুই বোনের মুখে অন্ন যোগাতে একমাত্র ভাই জাহাঙ্গীর আলম (২০) ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলেন ইট ভাটায় কাজ করতে। কিন্তু ইটভাটায় অপরপক্ষের বেলচার আঘাতে জাহাঙ্গীর আলম নিহত হন।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ভাইয়ের লাশের জন্য অপেক্ষায় ছিল এতিম দুই বোন নুরজাহান (১৮) ও শাহানা (১৫)। অবশেষে সন্ধ্যার পর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে বোনদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এরপর মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে এরপর তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু সবার মনেই এখন প্রশ্ন, কী হবে এতিম দুই বোনের?
জাহাঙ্গীর আলম নেত্রোকোনার কলমাকান্দা সদরের মাইজপাড়া গ্রামের মৃত শাহেদ মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহতের বাড়ির উঠানে দেখা যায় লাশ বহনের জন্য একটি খাটিয়া। এ সময় ঘরের বারান্দায় দুই বোন ও স্বজনদের আহাজারি এবং গ্রামের মানুষের মাঝে চলছিল শোকের মাতম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন ইটভাটার শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম (১৮)। এ সময় আহত হন তার দুই মামাতো ভাইসহ আরও তিন শ্রমিক।
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই নিহতের মামাতো ভাই কালা মিয়া বাদী হয়ে ১১ শ্রমিককে আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেছেন। ওইদিন সকালে ভালুকা উপজেলার ৫নং বিরুনীয়া ইউনিয়নের বাইরপাথার এলাকায় আফাজ ব্রিক্সফিল্ড নামে একটি ইটভাটায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান, আফাজ ব্রিক্সফিল্ড নামে ওই ইটভাটায় নেত্রকোনা ও পঞ্চগড় জেলার পৃথক দুটি শ্রমিক দল ইট তৈরির কাজ করত। ওইদিন সকালে পঞ্চগড় জেলার শ্রমিকদের ইট বানানোর বালু শেষ হয়ে গেলে তারা নেত্রকোনা জেলার শ্রমিকদের কাছে বালু আনতে পাঠায়।
এ সময় নেত্রকোনার শ্রমিকরা বালু দিতে রাজি না হলে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পঞ্চগড় জেলার শ্রমিকরা বেলচা ও লাকড়ি দিয়ে নেত্রকোনা জেলার চার শ্রমিকের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে কমলাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (২০), কালা মিয়া (৪০), সবুজ মিয়া (১৮) ও হাছান মিয়া (৩০) আহত হন।
আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও কালা মিয়াকে প্রথমে ভালুকা সরকারি হাসপাতাল এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে সোমবার বিকেলে জাহাঙ্গীর আলম মারা যান। খবর পেয়ে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে পঞ্চগড়ের ১০ শ্রমিককে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক (১১), আব্দুল কুদ্দুস (২০), আ. সালাম (২৬), আসাদুজ্জামান (১৯), মিজানুর রহমান (২০), ফরিদুল ইসলাম (২৩), শিপন ইসলাম (১৮), মমতাজুর রহমান মতি (২১), জয়নাল ইসলাম (১৮) ও স্বপন (২৫)। গ্রেফতারকৃতরা সবাই পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালুকা থানার এসআই জীবন বর্মণ বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি কলমাকান্দায় পাঠানো হয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।