নেত্রকোনা : ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এ সত্যকে সামনে রেখে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন দুর্গাপুরে মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত রিকশাচালক তারা মিয়া (৩১)।
তার মতে শুধু সরকারের নয়, করোনার এই মহামারিতে সমাজের প্রতি সবারই দায়িত্ব রয়েছে। রিকশা চালিয়ে জমানো টাকা থেকে এলাকার হতদরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কালে এসব কথা বলেন রিকশাচালক তারা মিয়া।
শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ৫০ জন হতদরিদ্রের মধ্যে এ খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ করা হয়।
নিরক্ষর তারা মিয়া বিগত ৭ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার খরচ বাদে জমানো টাকা থেকে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে শিক্ষাসামগ্রী, মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কোরআন শরীফ, বিগত করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদানসহ বেশ কয়েকবার হতদরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
ইতোমধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তার এ মানবিক কাজের খবর প্রকাশিত হলে অরিয়ন গ্রুপ তার পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার জন্য দুইবারে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৪ এপ্রিল অনুদানের দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা পান। সেই অনুদানের ৫০ হাজার টাকা থেকে মসজিদ-মাদরাসায় দান করা শেষে বর্তমান করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া দুর্গাপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ৫০ জন হতদরিদ্রদের মধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাহাদাত হোসেন কাজল, পথপাঠাগারের সভাপতি নাজমুল হুদা সারোয়ার, সাংবাদিক তোবারক হোসেন খোকন, নিতাই চন্দ্র সরকার, রাজেশ গৌড়, শান্ত তালুকদার প্রমুখ।
তারা মিয়া দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিনমজুর মো. হেলিম মিয়ার ছেলে। মা রহিমা খাতুন একজন গৃহিনী। তারা মিয়ার ১২ বছরের ছেলে ও ২ বছরের এক মেয়ে ও স্ত্রী আছে। তার ছেলে পড়াশুনা করছে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তারা মিয়া। সংসারে দারিদ্রতার কারণে কেউই লেখাপড়া করতে পারেনি। এটাই তার মনের কস্ট।
ছেলেবেলায় সমবয়সী ছেলে-মেয়েরা যখন স্কুলে যেতো, তখন তিনিও স্বপ্ন দেখতেন স্কুলে যাওয়ার। কিন্তু তারা তিনভাই শুধু মাত্র দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি।
এ জন্য তখন তিনি সংসার চালিয়ে জমানো টাকা থেকে গরীব ছেলেমেয়েরা সাধ্যমত তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এক বছর আগে তিনি ভাড়ায়চালিত প্যাডেল রিকশা চালাতেন, বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। প্রতিদিন তার নিজের ঘরে একটি মাটির ব্যাংকে ২০ থেকে ৩০ টাকা সঞ্চয় করে সেই অর্থ দিয়ে এ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
তারা মিয়া চাওয়া একটাই, সমাজের বিত্তবানরা যাতে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অসহায় পরিবারগুলোর দিকে, যাতে দারিদ্রতার জন্য তার মতো আর কেউ যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।