চয়ন দেবনাথ মুন্না : ‘মূল বিষয় হলো আমাদের নেত্রকোণার মানুষগুলো ভালো না। একজনের ভালো আরেকজন দেখতে পারে না। এটা আমার থেকে আপনি ভালো জানেন যে, একজন উপরে উঠলে আরেকজন টেনে নিচে নামিয়ে ফেলে। এলাকার মানুষ যে কেমন ভালো, সেটা এলাকায় থাকলে বোঝা যায়। ক্ষেতের সাথে ক্ষেত থাকলে অনেক কিছু বোঝা যায়।’
ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া। এ সময় প্রাণনাশের হুমকি ও তার পরিবারকে হেনস্তা করার অভিযোগ করেন তিনি।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দেন রিপন মিয়া। এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সংবাদ প্রকাশ হয় টেলিভিশন, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াতে। ভাইরাল হয় রিপনের পোস্ট।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি রিপন মিয়া। আপনাদের ভালোবাসা ও সাপোর্টে আমি ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এই স্থানে আসতে পেরেছি। এই সময়ে আমার দ্বারা কারও ক্ষতি করার কোনো রেকর্ড নেই। এমনকি যেকোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর আমাকে ডাকলে আমি সব সময় সাড়া দিয়েছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়তে থাকে, তখন আমার পেজ হ্যাকের চেষ্টা থেকে শুরু করে টিভিতে ইন্টারভিউ না দিলে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। আজ সোমবার ঢাকা থেকে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক আমার বাড়িতে এসেছিলেন। তারা কারও অনুমতি না নিয়ে আমার পরিবারকে ভিডিও করতে থাকেন এবং দূরে ক্যামেরা রেখে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেন। এমনকি পরিবারের মহিলা সদস্য ঘরে থাকা সত্ত্বেও তারা অনুমতি না নিয়ে ঘরে ঢুকে যান।
আমি সবসময় বলে এসেছি যে আমার শিক্ষা নেই, পড়াশোনা করতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবে আমার পরিবারের কোনো সদস্যই শিক্ষিত নন এবং কখনোই তারা মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। আমি কোনো সময় আমার পরিবারকে ফেসবুকে দেখিয়ে টাকা আয় করতে চাইনি। টিভি চ্যানেলের নাম চাইলেই আমি প্রকাশ করতে পারতাম। তবে কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য কখনোই আমার ছিল না। এই ঘৃণ্য কাজটি যারা করেছেন, তারা নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন। এভাবে টাকা আয় করে নিজের পরিবার ও সন্তানদের খাওয়াতে যদি আপনাদের বিবেক না জাগে, তাহলে আমারও আর কিছুই বলার নেই। সবাই ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া রাখবেন।’
রিপন মিয়ার এই ফেসবুক পোস্টে যেসব অভিযোগ তোলা হয় সেগুলোর বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা পোস্ট হাজির হয় নেত্রকোণা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নে তার নিজ বাড়িতে।
তার বাড়িতে নতুন বিল্ডিং তৈরি করছেন মিস্ত্রিরা, তা নিয়ে তিনি খুব ব্যস্ত। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর বাড়ির পাশেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কথা বলতে সম্মতি প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে এত অভিযোগ কেন জানতে চাইলে রিপন মিয়া বলেন, ‘মূল বিষয় হলো কারো ভালো কেউ দেখতে পারে না। মূলত ভাইরাল হওয়ার পর যখন টাকা-পয়সা আসা শুরু হয়, তখন থেকে ঝামেলাগুলো শুরু হয়। সরাসরি বলতে গেলে, আমাকে একজন দুই কোটি টাকার অফার দিয়েছে তার সঙ্গে কাজ করার জন্য। আমি রাজি হইনি। এরপর থেকেই এ ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে আরও অনেকে কনটেন্ট বানানো শুরু করেছেন। কিন্তু তারা আমার মতো জনপ্রিয় হতে পারছেন না, তারাই মূলত এই ঝামেলা তৈরি করেছেন। আমি আজ রাজি হয়েছি। তারা দুই কোটি টাকা ক্যাশ দেবে। স্ট্যাম্পে চুক্তি করে এক বছরের জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করব। সব ঠিকঠাক থাকলে তাদের সঙ্গে এক বছর কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ফেসবুকে প্রাণনাশের হুমকির পোস্টের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে রিপন মিয়া বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে পারব না। আমার ম্যানেজার রয়েছে, তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখানে অনেক বিষয় রয়েছে। আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন। আমি লেখাপড়া জানি না। ‘ক’ লিখতে কলম ভেঙে ফেলি। বাংলা লেখা সামনে এনে দিলে পড়তে পারি না। তাহলে আমি এই পোস্ট কীভাবে করব, বোঝেন না?’
টেলিভিশনের সাংবাদিকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাড়িতে নেই এমন সময় তারা বাড়িতে এসে হুট করে ভিডিও করা শুরু করে। আমি চাইলে টেলিভিশনের নাম বলতে পারতাম। কিন্তু আমি আমার পোস্টে টেলিভিশনের নাম ও সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করিনি।’
প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার পরও কেন থানায় অভিযোগ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেন, ‘আমি ঝগড়া করার মানুষ না। আজকে মরলে কালকে দুই দিন। আমি কাউকে অসম্মান করতে চাই না। অনলাইনে কনটেন্ট বানাই, এটা আজকে আছে কালকে নাই! তাহলে আপনার সঙ্গে আমার খারাপ ব্যবহার করে লাভ কী? তাদের সঙ্গে আমি এক বছরের চুক্তিতে যাব আশা করছি। তবে তারা আমাকে দিয়ে যেকোনো ভিডিও করাতে পারবে না। অসামাজিক কোনো কাজ আমাকে দিয়ে হবে না।’
কী কারণে আপনি তাদের সঙ্গে এক বছরের চুক্তিতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জিনিস থাকে যেগুলো সরাসরি বলা যায় না, বুঝে নিতে হয়। কিছু জিনিস দেখেও চোখকে বলব দেখো না, কানকে বলব শুনো না, এটাই বাস্তবতা। এখন আমি যাই, আমার অনেক ব্যস্ততা। আসসালামু আলাইকুম। মাইন্ড কইরেন না, মাইন্ড করলে শাইন করতে পারবেন না।’
প্রসঙ্গত, নেত্রকোণা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রিপন মিয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। ২০১৬ সালে ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে যাত্রা করেন রিপন মিয়া। ভিডিওতে তার ‘হাই আই এম রিপন ভিডিও’, ‘আই লাভ ইউ, এটাই বাস্তব’ সংলাপগুলো ভাইরাল হয়। অল্প সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তার ফেসবুক ফলোয়ার ১.৯ মিলিয়ন। সূত্র: ঢাকা পোস্ট